কুমিল্লায় সিন্ডিকেট কারসাজিতে নিয়ন্ত্রন হচ্ছে না চালের বাজার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৩২ পিএম, ৩০ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০২:০২ পিএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
আমন ধানের মৌসুম অগ্রহায়ন মাস আসতে এখনও অনেক দেরী। তবে চলমান গ্রীষ্মকালীন ইরি, বোরো ফসলের বাম্পার ফলন হলেও এ অঞ্চলের হাটবাজারগুলো সিন্ডিকেট কারসাজিতে নিয়ন্ত্রন করা যাচ্ছে না চালের বাজার। জেলা দক্ষিনাঞ্চলের প্রসিদ্ধ বানিজ্যিক নগরীখ্যাত লাকসামের মোকাম থেকে বর্তমানে ধান যেন উধাও। আমন মৌসুম এবং চলমান আউশ এবং ইরি-বোরো ফসল থেকেই এ অঞ্চলের বিভিন্ন হাটবাজার থেকে ধান কিনে গুদামে মজুত করে রেখেছে স্থানীয় মিলার ও ধান-চাল সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। ফলে স্থানীয় বাজারে ধানের সংকট তৈরী, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ক্ষরা, পরিবহন সংকট ও চলমান অর্থনৈতিক মন্দাকে পূজি করে চালের দাম বাড়ানোর কারসাজিতে নানাহ সেন্টিকেট গড়ে উঠেছে। অবস্থা দৃষ্টে বুঝা যাচ্ছে দরিদ্রদের বোবা কান্না দেখার মতো কেউ নেই। জেলা দক্ষিনাঞ্চলের হাটবাজার জুড়ে ধান-চালের অবৈধ মজুদ রোধে মাঠে নামেনি জেলা-উপজেলা মনিটরিং টিম। বিশেষ করে কুমিল্লার দক্ষিনাঞ্চলে সবক’টি উপজেলার মানুষের জনজীবনে নাভিশ্বাস তুলে ছাড়ছে চাউলের বাজার।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, গত বছর থেকে নানাহ অজুহাতে ওইসব ব্যবসায়ীরা নানাহ সুযোগে মজুতকৃত ধানকে চাল বানিয়ে বাজারে ছাড়ছেন। এর প্রভাবে এখন অস্থির হয়ে পড়েছে চালের বাজার। গত ২ সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তা প্রতি প্রত্যেক চালের দাম বেড়েছে গড়ে ২শ৫০ থেকে ৩’শ টাকা। এ মোকামের আওতায় উপজেলা খাদ্য বিভাগের সূত্র মতে ২৮টি বড় ধরনের অটো চাউলের মিল ও বেসরকারি ভাবে সরকারী নিবন্ধন বিহীন অর্ধশতাধিক ক্ষুদ্র চাতাল কল রয়েছে। সরকারী ভাবে ধান-চাল ক্রয়ে যেন ভানুমতির খেল এবং চাউলের মিল ও চাতালগুলোর বৈধতা নিয়েও এলাকার জনমনে প্রশ্নবিদ্দ এবং বেশকটি অটো রাইস মিল বন্ধ থাকলেও ওই প্রতিষ্ঠনের নামে সরকারি ভাবে ধান চাল ক্রয় নিয়ে বির্তক এখন বিভিন্ন মহলে।
চালের বাজার দর ঠিক রাখতে মিলার ও আড়তদারদের সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই। তবে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারীর বিষয়টি বাঁকা চোখে দেখছেন কেউ কেউ। এ মোকামে আকস্মিক চাউলের বাজার বৃদ্ধিতে ওইসব ব্যবসায়ীদের দায়ী করছেন অনেকেই। বর্তমান বাজারে স্বর্ণাপাড়ি প্রতি বস্তা চিকন চাল ২৩৫০ টাকা, আটাইশ জাতের চাল লোকাল ২৪৫০ ও বাহিরের থেকে আমদানী করা ২৪৫০, নুরজাহান ব্যান্ডের চাল ২৪০০-২৪৫০, মোটা ২২৫০-২৩০০, মিনিকেট আমদানীকৃত চাল ৩০০০ লোকাল ২৮৫০ ও স্থানীয় মোটা ২২৫০/২৩৫০ এছাড়া প্রিমিয়ার, এফএম, সংঙ্খ, তাজমহল, জোহুরা, ময়ুর, টিয়া, পাইজাম,মই, দোয়েল, পিকে, রাজহাঁস ও কবুতরসহ প্রায় শতাধিক ব্যান্ডের স্থানীয় ও আমদানীকৃত চাউল বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০/৩০০০টাকায়। তবে নাজিরসাইল ও মিনিকেট নামে কোন জাতের ধান এ অঞ্চলে উৎপাদন না হলেও বাজার জুড়ে ওইসব নামে চাউলের আড়ৎগুলোতে বিক্রি করছে।
এছাড়া প্লাষ্টিক বস্তা সরকারি ভাবে নিষিদ্ধ হলেও জেলা দক্ষিনাঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে প্রকাশ্যে দেখা যায়। ওইসব ব্যবসায়ীদের খুচরা ও পাইকারী চাল বিক্রিতে ২/৩ রকমের ক্যাশ মেমো থাকে এবং বাৎসরিক সরকারী আয়কর ও ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া তাদের পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে কারো কারো ৬/৭টি চাউল মজুদের গুদাম রয়েছে। গোপনে তদন্ত চালালে বুঝা যাবে কত লাখ বস্তা চাল এই এলাকায় রয়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, এলাকায় হঠাৎ করে চাউলের বাজার উর্দ্ধগতি নিয়ে কোন চাল-ধান ব্যবসায়ী মুখ খুলছেনা। চলমান ইরি-বোরো ও আউশ ধান মৌসুমে নতুন ধান চাল উঠলেও বাজার দর কিন্তু কমছে না। স্থানীয় দৌলতগঞ্জ বাজারের চালের আড়তদার ব্যবসায়ীরা বলেন প্রতি বছর এ সময়ে চালের বাজার কিছুটা বাড়তি থাকে তবে চালের দাম ধীরে ধীরে স্থিতিশীল হয়ে আসবে। এ দিকে সরকারী ভাবে খাদ্যবান্ধব নানাহ কর্মসূচী খোলা বাজারে চাল,আটা বিক্রি ও ভিজিডি সহ অন্যান্য খাদ্য বান্ধব প্রকল্পের মাধ্যমে চাল বিতরণও বর্তমান চালের বাজারের উর্দ্বগতি ঠেকাতে পারছে না। বিশেষ করে এ অঞ্চলে ১০ টাকা কেজি চাউলের ডিলারদের নানাহ অনিয়মের কারনে এ প্রকল্পটি আজ প্রশ্নবিদ্ব। দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের দিনাজপুর, নওগাঁ, নাটোর, সিলেট, ময়মনসিংহ ও নেত্রকনাসহ বহু মোকাম থেকে নানাহ ধরণের চাল আমদানী করা হচেছ। এছাড়া এ বাজারে চাউলের বাজারদর নিয়ন্ত্রনে ৮/১০টি আড়ৎদার কাজ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীরা জানায়, চলমান বছরে আউশ ও ইরি-বোরো ফসল বাম্পার ফলন হলেও বর্তমানে চালের বাজারে চাল কিনতে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের যেন করুন অবস্থা। এ মোকামে প্রতিটি চালের আড়ত কিংবা মিলারদের গুদামে হাজার হাজার বস্তা চাল মজুত রয়েছে এবং দেশের উত্তরাঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার বস্তা চাল আড়তদারদের ঘরে ঢুকছে। তারপরও চালের বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় সাধারন মানুষ স্থাণীয় প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় নানাহ কথাবার্তা উঠেছে। তবে দাম বাড়ার পিছনে যুক্তিকতা তুলে ধরে একাধিক মিলার বলছেন ভিন্ন কথা। চলমান সময়ে ধান থেকে চাল তৈরী করতে প্রতি বস্তায় ১/২’শ টাকা লোকসান দিতে হচ্ছে। তার উপর ধানের সংকটতো আছেই। পরিবহন ব্যয়বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ বিল, শ্রমিক খরচসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চালের দাম বেড়েছে।
এব্যাপারে স্থানীয় বাজারের একাধিক চাউলের আড়ৎদারদের কাছে জানতে চাইলে তারা এব্যাপারে কোন ব্যক্তিগত জবাব দিতে রাজি নহে তবে তাদের চাউল ব্যবসায়ী সমিতি রয়েছে। যাহা কিছু বলার সমিতির মাধ্যমে বক্তব্য নিতে হবে। তবে খুচরা ব্যবসায়িরা জানায়, এ অঞ্চলে চাউলের বড় ধরণের কোন আড়ৎদার কিংবা সেন্টিকেট বলতে কোন কিছু জানা নেই। এখানে চাউল ব্যবসায়ীরা সাধারণত স্থানীয় রাইস মিল গুলো থেকে এবং বাহিরের কিছু কিছু মোকাম থেকে নানাহ ধরণের চাউল সরবরাহ করে বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা খাদ্য বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।