চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শত্রু আওয়ামী লীগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১১ এএম, ১৭ জানুয়ারী,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৫৯ পিএম, ১৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে গত মঙ্গলবার রাতে নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর গণসংযোগে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকরা সশস্ত্র হামলা চালায়। এতে গুলিতে একজনের মৃত্যু হয়। গত ৮ জানুয়ারি নির্বাচনি প্রচারণা শুরুর পর থেকে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগের সময় আওয়ামী লীগ মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পাঠানটুলী ওয়ার্ডে সহিংসতার পর সামনে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে দুই পক্ষের মধ্যে মুখোমুখি সংঘাত বাধতে পারে বলে আশঙ্কা করছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।
নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ডে সহিংসতার পরও বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্র থেকে কোনো কড়া নির্দেশনা আসেনি। তবে নগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ গত বুধবার রাতে দলীয় কার্যালয়ে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বসে বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের দল থেকে বহিষ্কার করতে কেন্দ্রে সুপারিশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেও কোনো কাজ এখনো হয়নি।
গত ৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৪৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী জোটবদ্ধ হয়ে দলের চসিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের কাছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করেন। পরে তারা নগর আওয়ামী লীগের কাছে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে দলের অবস্থান জানতে চান।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ড ও ১২টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ৪৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজ দলের ৭৮ বিদ্রোহী প্রার্থী। প্রতিপক্ষ বিএনপির কাউন্সিলর প্রার্থীদের খুব একটা ফ্যাক্টর মনে করছেন না আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। তাদের যত দুশ্চিন্তা নিজ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে। দফায় দফায় চেষ্টা করেও বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের ভোটের মাঠ থেকে সরাতে পারছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
দলীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরীর ৪১টি সাধারণ ওয়ার্ডের মধ্যে ৯টিতে রয়েছে একক প্রার্থী। ১৮ নম্বর পূর্ব বাকলিয়া ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হচ্ছেন আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী হারুন উর রশিদ। বাকি ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের ৬১ জন বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছেন। ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডে সর্বোচ্চ ৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। আর ১৪টি সংরিক্ষত মহিলা ওয়ার্ডের মধ্যে দুটিতে রয়েছে একক প্রার্থী। বাকি ১২টি ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে ১৭ জন। অর্থাৎ ৩১টি সাধারণ ও ১২টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে দলীয় সমর্থিত ৪৩ জন প্রার্থীর বিপরীতে মোট ৭৮ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে।
৩১ সাধারণ ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন-১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলীতে তৌফিক আহমদ চৌধুরী, আহমদ নূর ও ইকবাল হোসেন, ২ নম্বর জালালাবাদে সাহেদ ইকবাল বাবু ও গিয়াস উদ্দীন ভূঁইয়া, ৩ নম্বর পাঁচলাইশে সেলিম উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, আমির হোসেন আমু, মুহাম্মদ ইকবাল ও জসিম উদ্দিন, ৪ নম্বর চান্দগাঁওতে আনিসুর রহমান, এসরারুর হক, সাইফুল্লাহ খান, গিয়াস উদ্দিন আহমেদ, নাছির উদ্দিন ও মো. ইউচুফ, ৫ নম্বর মোহরাতে আইয়ুব আলী চৌধুরী দুলাল, ৭ নম্বর পশ্চিম ষোলশহরে মো. এয়াকুব ও মো. শামীম, ৮ নম্বর শুলকবহরে মোহাম্মদ মহসীন, ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলীতে জহুরুল আলম জসিম, ১০ নম্বর উত্তর কাট্টলীতে মনোয়ার উল আলম চৌধুরী, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলীতে খন্দকার এনামুল হক, মোর্শেদ আকতার চৌধুরী, নুরুল হুদ চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম, ১২ নম্বর সরাইপাড়াতে আসলাম হোসেন ও সাবের আহম্মেদ, ১৩ পাহাড়তলীতে মাহামুদুর রহমান, ১৪ নম্বর লালখান বাজারে আবুল ফজল কবির আহমেদ মানিক, ১৬ নম্বর চকবাজারে দেলোয়ার হোসাইন, ১৭ নম্বর পশ্চিম বাকলিয়ায় সোয়েব খালেদ, ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়ায় আজিজুর রহমান ও নুরুল আলম, ২০ নম্বর দেওয়ানবাজারে লিয়াকত আলী, ২৪ নম্বর উত্তর আগ্রাবাদে রাশেদুল ইসলাম, জাবেদ নজরুল ইসলাম ও রকিব উল আমীন, ২৬ নম্বর উত্তর হালিশহরে মো. ইলিয়াছ, ২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদে এইচ এম সোহেল ও ইস্কান্দর মির্জা, ২৮ নম্বর পাঠানটুলীতে আবদুল কাদের, ২৯ নম্বর পশ্চিম মাদারবাড়িতে সাজ্জাদ হোসেন, ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়িতে জহির উদ্দিন বাবর, ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লাতে নোমান লিটন ও সুজিত সরকার, ৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গিবাজারে হাসান মুরাদ বিপ্লব ও হোসাইনুর রশিদ, ৩৪ নম্বর পাথরঘাটাতে অনুপ বিশ্বাস, বিজয় কৃষ্ণ ও দিদারুল আলম, ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গাতে মোর্শেদ আলী ও সাইফুল আলম চৌধুরী, ৩৭ নম্বর উত্তর মধ্যম হালিশহরে মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ, এনামুল হক, ইবনে মবিন ফারুক ও সালাউদ্দিন আহম্মদ। ৩৮ নম্বর দক্ষিণ মধ্যম হালিশহরে হাসান মুরাদ, ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গায় ফরিদুল আলম ও নাছির আহম্মেদ এবং ৪১ নম্বর দক্ষিণ পতেঙ্গায় আলমগীর হাছান।
১২ সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থীরা হলেন- ১, ২, ৩ নম্বর-ফেরদৌস বেগম মুন্নী, ৪, ৫, ৬-রোকেয়া বেগম, ৭,৮- নূর তাজ বেগম ও জোহরা বেগম, ৯, ১০, ১৩-আবিদা আজাদ ও নাদিরা সুলতানা হেলেন, ১৪, ১৫, ২১-নবুয়াত সিদ্দিকা রকি, ১৬, ২০, ৩২-আঞ্জুমান আরা বেগম, ২২, ৩০, ৩১-জিন্নাত সুলতানা জুমা ও আলতাজ বেগম বুবলী, ১২, ২৩, ২৪-গুলজার বেগম পপি ও ফারহানা জাবেদ, ১১, ২৫, ২৬-রাধা রাণী দেবী ও সুপ্তি তলাপাত্র, ২৮, ২৯, ৩৬-জিন্নাত আরা বেগম ও বিবি মরিয়ম এবং ৩৩, ৩৪, ৩৫ ওয়ার্ডে নন্দিতা দাশগুপ্ত।
নির্বাচনের বাকি আরো ১০ দিন। ইতিমধ্যে খুন হয়েছেন ২ জন। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে নিজেদের মধ্য হানাহানি বাড়ছে। নগরবাসী মনে করেন, নির্বাচনের আগে এ অবস্থা বজায় থাকলে নির্বাচনের দিন আরো খুন হবে।