বর্জন, সংঘর্ষ, সহিংসতায় শেষ হলো ভোট
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ১০:৩৪ পিএম, ১৬ জানুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:২২ পিএম, ৯ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
দ্বিতীয় ধাপে দেশের ৬০টি পৌরসভায় আজ শনিবার ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৮টায় শুরু হয়ে ভোট গ্রহণ চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। কয়েকটি কেন্দ্রে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কর্মী–সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। কিছু এলাকায় গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
তবে অনিয়মের অভিযোগ তুলে চারটি পৌরসভা–রাজশাহীর ভবানীগঞ্জ, বাগেরহাটের মোংলা, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর ও পাবনার ঈশ্বরদীর বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা বেলা ১১টার পর ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। ভোট বর্জন করেন মেহেরপুরের গাংনীর স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। ৬০ পৌরসভায় মেয়র হতে লড়ছেন মোট ২২১ জন প্রার্থী।
গোলযোগ হয়েছে ফেনীর দাগনভূঞা পৌরসভার একটি কেন্দ্রে। সেখানে ককটেল বিস্ফোরণে চারজন আহত হন। বাগেরহাটের মোংলায় দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন। ঝিনাইদহের শৈলকুপায় সংঘর্ষে দুজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সেখানে এক মেয়র প্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হলে অনেক কেন্দ্রে ভোটারদের লম্বা লাইন দেখা যায়। শান্তিপূর্ণভাবেই ভোট গ্রহণ শুরু হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া, মারধর, বিএনপির চিহ্নিত ভোটারদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ আসতে থাকে।
রাজশাহীর আড়ানী পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে গত দুদিন ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তবে ভোটের আগের রাতে সেখান থেকে ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই অবস্থা নোয়াখালীর বসুরহাট পৌরসভায়ও। সেখানকার ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই ও মেয়র পদপ্রার্থী আবদুল কাদের ধারাবাহিক অভিযোগ করলেও আজকের ভোট নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন।
দ্বিতীয় ধাপের ৬০টির মধ্যে ২৮টি পৌরসভায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হয়। বাকি ৩২টিতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট হয়।
৬০ পৌরসভায় মেয়র প্রার্থী ২২১ জন, সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর ৭৪৫ এবং সাধারণ আসনের কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৩২০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এসব পৌরসভায় মোট ভোটার ২২ লাখ ৪০ হাজার ২২৬ জন। তাঁদের মধ্যে পুরুষ ১১ লাখ ৮ হাজার ৪৩১ জন এবং নারী ১১ লাখ ৩১ হাজার ৮৩১ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৮০টি এবং ভোটকক্ষ ৬ হাজার ৫০৮টি।
পাবনার ঈশ্বরদীতে ‘ঘাড়ধাক্কা’ খাওয়ার পর ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী রফিকুল ইসলাম। বেলা দেড়টার দিকে পৌরসভার পূর্ব টেংরি এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তিনি এই ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি প্রতিটি কেন্দ্র থেকে তাঁর এজেন্টদের বের করে দেওয়া ও ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন।
বাগেরহাটের মোংলা পোর্ট পৌরসভার নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মো. জুলফিকার আলী ভোট বর্জন করেন। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ আবদুর রহমান। বিএনপির প্রার্থী সকাল সাড়ে ১০টায় মোংলা পৌরসভার মাদ্রাসা রোডের বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, ভোটারদের ভয়ভীতি দিয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্র দখল করেছে। এজেন্ট থাকতে দেয়নি, ভোটারদের ভয় দেখিয়ে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ভোটকেন্দ্র পরিদর্শনের সময় বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হচ্ছে। মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপির প্রার্থী নুরুল মিল্লাত। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। প্রায় প্রতিটি কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, মারধর ও তাঁর সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ করেন তিনি।
ভোট দিতে বাধা, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর বাগমারার ভবানীগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির দলীয় প্রার্থী আবদুর রাজ্জাক ভোট বর্জন করেন। বেলা সোয়া ১১টার দিকে তিনি গণমাধ্যমকে এ কথা জানান। তিনি এই নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন বলেও মন্তব্য করেন। আবদুর রাজ্জাক বলেন, সকালে তিনি তাঁর ছেলে ও ভাতিজাকে নিয়ে চানপাড়া শহীদ সেকেন্দার মেমোরিয়াল আদর্শ উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট দিতে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের লোকজন তাঁকে কেন্দ্র থেকে চলে যেতে বলেন। তিনি নিজের ভোটটি দেওয়ার সুযোগ দিতে বলেন। কিন্তু তাঁকে কেন্দ্রেই যেতে দেওয়া হয়নি। এ সময় তাঁর সমর্থকদের লাঞ্ছিত করা হয়। পরে তিনি চলে আসেন।
গাজীপুরের শ্রীপুরে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী শাহ আলমকে আটক করে থানায় নেওয়া হয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈর সার্কেলের এএসপি আল মামুন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। বেলা দুইটায় আটক করা হয় তাঁকে। কী কারণে তাঁকে আটক করা হয়েছে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
ফেনীর দাগনভূঞার একটি কেন্দ্রে ককটেল বিস্ফোরণে এক আনসার সদস্যসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। সকাল ১০টার দিকে গণিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পরপর পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি দ্রুত সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। মূলত, আওয়ামী লীগের মনোনীত ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার সময় ওই ঘটনা ঘটে।
নওগাঁর পত্নীতলার নজিপুর পৌরসভা নির্বাচনে ইভিএমে ভোটারদের নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করা হয় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৭ নম্বর ওয়ার্ডের নজিপুর সরকারি কলেজ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নজিপুর সিদ্দিকীয়া ফাজিল মাদ্রাসার ভোটাররা অভিযোগ করেন, ইভিএমে আঙুলের ছাপ দিয়ে যন্ত্রটি খোলার পর আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকেরা নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করেন।
ঝিনাইদহের শৈলকুপার একটি কেন্দ্রে দুই মেয়র পদপ্রার্থী সমর্থকদের মধ্যে মারামারি ও অন্য একটি কেন্দ্রে মেয়র পদপ্রার্থীর গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। দুপুরে ঝাউদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়র পদপ্রার্থী তৈয়বুর রহমান খান কেন্দ্রের বাইরে গাড়ি রেখে ভেতরে যান। এ সময় পেছন থেকে কয়েকজন তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করে চলে যান। পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
দেশে পৌরসভা রয়েছে মোট ৩২৯টি। প্রথম ধাপের তফসিলের ২৪টি পৌরসভায় ইভিএমে ভোট হয় গত ২৮ ডিসেম্বর। তৃতীয় ধাপে ৬৪ পৌরসভায় ৩০ জানুয়ারি ও চতুর্থ ধাপে ৫৬ পৌরসভায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ করা হবে। প্রথম ধাপে ২৪টি পৌরসভার মধ্যে ১৯টিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও ৩টিতে দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা জয়ী হন। বাকি দুটিতে জয় পেয়েছেন বিএনপির প্রার্থীরা।