ঠাকুরগাঁওয়ে মরিচ তোলার শ্রমিক সংকট, মাঠে শিক্ষার্থীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৪৫ পিএম, ২০ মে,শুক্রবার,২০২২ | আপডেট: ০৭:৪২ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
ঠাকুরগাঁও এখন লাল মরিচের দেশ। যেদিকেই চোখ যায়, শুধু মরিচ আর মরিচ। কেউ পাকা মরিচ তুলছেন, আবার কেউ শুকাতে দিচ্ছেন। উপজেলার সর্বত্রই এরকম চিত্র।
কিন্তু সেই লাল মরিচ নিয়ে বিপাকে মরিচ চাষি। মরিচ তোলার শ্রমিক সংকট। তাই সংকট পুষিয়ে নিতে স্কুলগামী সন্তানদের ওপর ভরসা করছেন চাষিরা। উপজেলায় মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। এসব মরিচ তুলতে চাষিরা শ্রমিক খুঁজছেন। তবে স্বাভাবিক মজুরি দিয়ে পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। যাদের পাওয়া যাচ্ছে, তাদের দিতে হচ্ছে বাড়তি মজুরি। এছাড়া মৌসুমের বোরো ধান কাটার অজুহাতে মরিচ তুলছে না শ্রমিকেরা।
তবে ফলন ভালো ও বাজার দর ভালো থাকায় মরিচ ঘরে তুলতে শ্রমিক সংকট খুব বেশি ভোগান্তির কারণ হবে না বলে মনে করছেন এ অঞ্চলের চাষিরা। বিকল্প হিসেবে কোন কোন চাষি স্কুলগামী ছেলে, মেয়েকে মরিচ তোলা ও শুকানোর কাজে লাগাচ্ছেন। এতে স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে।
ঠাকুরগাঁও সদরের মরিচ চাষি আলম বলেন, বৈরী বাতাস, বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে মরিচের ক্ষতি হচ্ছে। তাই সকল চাষি মরিচ তোলার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজাগাঁও ইউনিয়নের মরিচ চাষি রবিউল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় তিনি জানান, একজন শ্রমিক সারাদিনে ৩০ কেজি মরিচ তোলে। সমপরিমাণ মরিচ তুলছে স্কুলের শিক্ষার্থীরাও।
আসান নগর গ্রামের কৃষি শ্রমিক মজিদ বলেন, বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। তাই শ্রমিকেরা মরিচ তুলতে আগ্রহী না। মরিচ তুলে আমাদের পোষায় না। তবে, অনেক চাষি শ্রমিক না পেয়ে হতাশার মধ্যে শিলাবৃষ্টি, কাল বৈশাখী ঝড়সহ প্রাকৃতিক নানা ভয়ে রয়েছে।
ফরিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাবু বলেন, মরিচ তোলার পর্যাপ্ত শ্রমিক নেই। তাই বাধ্য হয়েই স্কুলে না গিয়ে মাঠে এসেছি।
আসান নগর গ্রামের অভিভাবক গণী মিয়া বলেন, বিদ্যালয়ে পাঠদানের চাপ কম থাকায় ছেলে-মেয়েরা কাজে সহায়তা করে। শ্রমিকদের মজুরি বেশি দিয়ে রাখলে লাভ বেশি হয় না।
বৈরাগী উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র একাদশ রায় বলেন, সারাদিন ২৫০ টাকার মরিচ তুলতে পারি। সেই টাকা দিয়ে স্কুলের খাতা, কলম কেনা লাগে। এছাড়া আমি একা না আমার মতো অনেক শিশুরাই মরিচ তোলে।
কমলা ডাঙা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিপা ঝাঁ বলেন, শিক্ষার্থীর উপস্থিতি তুলনামূলক অনেক কমেছে। মরিচ তোলার মৌসুম শেষ হলেই তারা নিয়মিত স্কুলে আসবে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা শিক্ষা অফিসের আওতাধীন রুহিয়া ক্লাস্টারের দ্বায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসার মোকাদ্দেস ইবনে সালাম বলেন, গ্রামের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর অভিভাবক কৃষি কাজের সাথে সম্পৃক্ত। এক কেজি মরিচ তুললেই ৭/৮ টাকা। একজন শিক্ষার্থী দৈনিক ২৫/৩০ কেজি মরিচ তুলেন। কাজের লোকের অভাবে নিজ সন্তানকে অনেক অভিভাবক খেতের কাজে ব্যবহার করেন। সেই কারণে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কম।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষ্ণ রায় বলেন, মরিচ হাতে তোলা হয়। এতে অনেক শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। শ্রমিক মিলেও কম। শ্রমিক পেলেও দিতে হয় বাড়তি মজুরি। ফলে চাষি প্রত্যাশিত লাভ থেকে বঞ্চিত হন।