সালথায় সংঘর্ষে যুবক খুনের ঘটনায় হত্যা মামলা, বাড়িঘরে আগুন, লুটপাট
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৫ পিএম, ৯ মে,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:২২ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ফরিদপুরের সালথায় সংঘর্ষে যুবক নিহতের ঘটনায় যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রফিক মোল্যাকে প্রধান আসামী করে ৫৬ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ঘটনার তিন দিন পর রবিবার (৮ মে) নিহতের ভাই মিরাজুল মোল্যা বাদী হয়ে সালথা থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলাটি নথিভুক্ত করে এর তদন্তভার দেয়া হয়েছে থানার একজন এসআইকে। তবে হত্যার ঘটনায় এখনও কাউকে আটক করা হয়নি। খুনের ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর-লুটপাট হচ্ছে। আগুন দেয়া হচ্ছে বাড়িতে।
মামলা তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সৈয়দ আওলাদ বলেন- একদিকে নিহতের পরিবার ঘটনার তিন পর মামলাটি করেছেন। অপরদিকে আসামীরাও পলাতক রয়েছে। যেকারণে এখনও কাউকে ধরা সম্ভব হয়নি। তবে চেষ্টা চলছে খুব তাড়াতাড়ি আসামীদের গ্রেপ্তার করা হবে।
ভাঙচুর ও লুটপাটের বিষয় তিনি বলেন- কিছু বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে। একটি বাড়িতে আগুন দেয়া হয়েছে বলেও শুনেছি। এসব ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। মূলত পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে।
জানা গেছে- আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে উপজেলার খারদিয়া গ্রামের বাসিন্দা যদুনন্দী ইউপি চেয়ারম্যান রফিক মোল্যার সাথে ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারন সম্পাদক আলমগীর মিয়ার বিরোধ চলছিল। গত বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে সংঘর্ষের সময় আলমগীরের সমর্থক সিরাজুল ইসলামের বুকে কোপ লাগে, এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সিরাজুল ।
পরে উভয় গ্রুপের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে অন্তত ৩০ জন আহত হন। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বোয়ালমালী ও মোকসেদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্র ভর্তি করা হয়েছিল। সংঘর্ষ চলাকালে রফিকের সমর্থকদের অন্তত ৫০টি বসত বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট করে আলমগীরের সমর্থকরা।
নিহত সিরাজ খারদিয়া ঠাকুর পাড়া গ্রামের মো. ইশারত মোল্যার ছেলে। তিনি স্থানীয় সোনাপুর বাজারে থাকা রমজান মোল্যার স.মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন।
সরেজমিনে গেলে নিহতের প্রতিবেশীরা জানান- সিরাজুল ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত। কখনো কারো সাথে ঝামেলাও করত না। এবার ৩০টি রোজাই ছিল। নামাজও পড়ত নিয়মিত। কয়েক মাস আগে বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেন। বিয়ের পর ভালই চলছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। হঠাৎ করে সংঘর্ষে যোগ দিয়ে প্রাণ হারায় সিরাজুল। এতে নিভে যায় তার সুখের সংসারের বাতি। সিরাজুলের মৃত্যুতে তার পরিবারের মাঝে এখনও চলছে শোকের মাতম।
সিরাজুলের মা রুবি বেগম বলেন- আমার সন্তার হত্যার বিচার চাই। যারা আমার সন্তানকে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবী জানাই।
এদিকে সিরাজুল খুনের ঘটনার পর থেকে খারদিয়া, উজিরপুর ও সাধুহাটি গ্রামে মামলার আসামী ও তাদের সমর্থকদের বাড়িতে গিয়ে প্রতিদিনই হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উজিপুর গ্রামে মানোয়ার ফকির নামে এক ব্যক্তি বাড়িতে আগুনও দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন- খারদিয়ার হত্যা মামলার আসামীদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ওই এলাকার পরিবেশ শান্ত রাখতে পৃথকভাবে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। যেকোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পুলিশ মাঠে কাজ করছে।