আ.লীগ-বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, দোকানপাটে অগ্নিসংযোগ-গুলিবর্ষণ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:০৭ এএম, ১৫ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:৩৭ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বুধবার রাতে আওয়ামী লীগের দলীয় ও বিদ্রোহী প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে দফায়-দফায় সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ এবং ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পৌর এলাকার তালতলায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে জনসংযোগে অংশ নিয়ে কাটাখালী পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আব্বাস আলী আড়ানী পৌরসভায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর বিপক্ষে বক্তব্য দেয়ায় এই সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। সংঘর্ষকালে পিস্তলের ছয়টি ফাঁকা গুলি এবং আট থেকে দশটি ককটেল বিস্ফোরণ হয় বলে দাবি করেছে প্রত্যক্ষদর্শীরা। এতে উভয়পক্ষের প্রায় ১৩ জন আহত হয়। খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা ও চারঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) নুরে আলম ঘটনাস্থলে অবস্থান নেন। এ সময় বাঘা ছাড়াও চারঘাট ও পুঠিয়া থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এবং রাজশাহী থেকে র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আড়ানী পৌরসভায় আওয়ামী লীগদলীয় মেয়র পদপ্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদ জানান, মুক্তারের সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার ভাগ্নে তুষার (২৮) আহত হয়েছেন। তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাহীদের দাবি, বুধবার রাত সাড়ে ৯টায় আড়ানী পৌর সদরের তালতলা বাজারে তার পথসভায় দলের বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র মেয়র পদপ্রার্থী মুক্তার আলীর কর্মী-সমর্থকেরা গুলি ও বোমা হামলা চালিয়েছে। এ সময় তার নির্বাচনি ও ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগ করেছেন মুক্তারের কর্মী-সমর্থকের। অপরদিকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর দাবি, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের হামলায় তিনি নিজেসহ তার কর্মী নাজমুল হক, রানা, বকুল, মজনু, খোকন, ফারুক, জিসান, হৃদয়, জাহিদ, রাজু ও আরিফুল আহত হয়েছে। এদের মধ্যে নাজমুলের অবস্থা গুরুতর।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পাঁচ শতাধিক দলীয় নেতা-কর্মী নিয়ে আড়ানী বাজারের তালতলায় আড়ানী পৌরসভার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শহীদুজ্জামান শাহীদের নির্বাচনি পথসভায় বক্তব্য দেন কাটাখালী পৌরসভার নবনির্বাচিত মেয়র আব্বাস আলী।
তিনি তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে একটিমাত্র রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এই দলের বাইরে কোনো ভোট হবে না। বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সুতরাং আপনারা তাকে ভোট দিয়ে ভোট নষ্ট করবেন না।
প্রত্যক্ষদর্শীরা আরো জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী শাহীদের পথসভার প্রায় শেষ মুহূর্তে বিদ্রোহী প্রার্থী মুক্তার আলীর নেতৃত্বে ১৫-২০ জন সশস্ত্র সমর্থক আকস্মিক হামলা চালান। এ সময় মুক্তার আলীসহ তার সমর্থকেরা গুলিবর্ষণ শুরু করেন এবং বোমা হামলা চালান। প্রাণের ভয়ে এ সময় শাহীদের সমর্থকেরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। এরপর মুক্তার মাইকিং করে তার সমর্থকদের ডাকেন। শাহীদসহ উপস্থিত নেতাকর্মীরা এ সময় সংগঠিত হয়ে মুক্তারের সমর্থকদের প্রতিরোধের চেষ্টা করেন। মুক্তারের পাঁচ শতাধিক সমর্থক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এদের মধ্যে সশস্ত্র কয়েকজন সমর্থক গুলিবর্ষণ শুরু করে। বোমা হামলা চালায়। দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে শাহীদের সমর্থকদের তাড়া করে। মুক্তারের সমর্থকদের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে শাহীদের ভাগ্নে তুষার আহত হন। এক পর্যায়ে মুক্তারের সমর্থকেরা সেখানে শাহীদের নির্বাচনি কার্যালয় ও ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া শতাধিক দোকানে লুট এবং অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে মুক্তার আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেন, আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীর পথসভা চলাকালে রাস্তার উত্তর দিক থেকে তার কর্মীরা আট-দশটি মোটরসাইকেলে গণসংযোগ করে নিজেদের কার্যালয়ে ফিরছিলেন। এ সময় তাদের দেখে পেছন থেকে ‘ধর, ধর’ বলে ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ ধাওয়া করে শাহীদের লোকজন। শাহীদের লোকজন সবজি বাজারের বেশ কিছু দোকান ভাঙচুর করে এবং তার (মুক্তার) নির্বাচনি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশসহ প্রশাসনের লোকজন অবস্থান নেয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তা না হলে বড় ধরনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ঘটতে পারতো। বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম জানান, উপজেলা প্রশাসনসহ পুলিশ এবং র্যাব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। রাতে মুক্তার আলীর কর্মী মিলনকে আটক করা হয়েছে। রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। যারা সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত ৮ জানুয়ারি দুপুরে আড়ানী পৌরসভা নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে মুক্তারের সমর্থকেরা মাছরাঙা টেলিভিশনের রাজশাহীর ক্যামেরাপারসন মাহফুজুর রহমান রুবেল ও দীপ্ত টিভির ক্যামেরাপারসন রফিকুল ইসলামের ওপর হামলা চালায়। এ সময় রাজশাহী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক বিপাশা খাতুনসহ তার সমর্থকদের ওপরও হামলা চালায় মুক্তারের সমর্থকেরা। মুক্তার আড়ানী পৌরসভার বর্তমান মেয়র। এবারও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ কারণে তাকে আড়ানী পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ থেকে অপসারণ এবং দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।