টাকা না পেয়ে ভাড়াটিয়াকে তালাবদ্ধ, বালতিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:২৬ পিএম, ১৪ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ১২:৩৯ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
খুলনায় অগ্রিম ঘর ভাড়া না পেয়ে ছয় মাসের শিশু সন্তানসহ ভাড়াটিয়া পরিবারকে পাঁচদিন তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘর তালাবদ্ধ থাকায় বালতির পানিতে শিশু পড়ে গেলে চিকিৎসার অভাবে শিশুর মৃত্যু হয়। মৃত শিশুটির নাম আজিজা তাসমিয়া।
অমানবিক এ ঘটনা খুলনা মহানগরীর হরিণটানা রিয়াবাজার এলাকায় ঘটে।
এদিকে, বুধবার (১৩ জানুয়ারি) শিশুটির বাবা-মা এ ঘটনায় বাড়িওয়ালা মো. নওশেরকে অভিযুক্ত করে থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ তা গ্রহণ না করে অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করেছে। এ বিষয়ে আদালতে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে ডিসেম্বর মাসে কাঠের ডিজাইন মিস্ত্রী ইমদাদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী তামান্না মাসে চার হাজার টাকা চুক্তিতে রিয়াবাজার এলাকায় একতলা বাড়ির দুইটি কক্ষ ভাড়া নেন। কিন্তু জানুয়ারি মাসের অগ্রিম ভাড়া দিতে না পারায় গত ৬ জানুয়ারি থেকে ঘরে শিশু সন্তানসহ তামান্নাকে তালাবদ্ধ করে রাখে বাড়িওয়ালা নওশের। এসময় তামান্নার স্বামী মোংলা ঝিউধরা এলাকায় কাঠের কাজ করছিলেন।
তামান্না ইসলাম জানান, তালাবদ্ধ অবস্থায় গত ১১ জানুয়ারি দুপুরে বাড়ির ছাদে কাপড় নাড়তে যান। শিশুটি হঠাৎ খেলতে গিয়ে বালতির পানির মধ্যে উল্টে যায়। ঘরে এসে তিনি শিশুটিকে ওই অবস্থা থেকে উদ্ধার করলেও বাইরে থেকে ঘর তালাবদ্ধ থাকায় চিকিৎসকের কাছে নিতে পারেননি। ওই অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়।
মায়ের আকুতি, আমার মতো এভাবে আর কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। আর কোন পাষণ্ড বাড়িওয়ালা যেন এভাবে অন্যায় করতে না পারে। এজন্য তিনি বাড়িওয়ালার বিচার দাবি করেন।
শিশুটির পিতা ইমদাদুল ইসলাম বলেন, সংসারে অভাব অনটন থাকলেও সন্তানকে জীবন দিয়ে ভালোবাসতাম। কিন্তু বাড়িওয়ালার নির্মমতায় আজ সেই সন্তানকে হারাতে হলো।
স্থানীয় জলমা ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম লিটন জানান, শিশুটির মা জানালা দিয়ে চিৎকার দিলে আশেপাশের লোকজন তালা ভেঙ্গে তাদেরকে উদ্ধার করেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে শিশুটি মারা যায়। এ ঘটনায় এলাকায় ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার খুলনা জেলার কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম জানান, অসহায় বাবা-মা থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। আজকেই (বৃহস্পতিবার) শিশুটির ডেথ সার্টিফিকেট ও থানায় করা ইউডি মামলার কপি হাতে পেয়েছি। আগামী সোমবার খুলনা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিট্রেটের আমলী আদালত ‘লবণচরা অঞ্চল’ এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে। তবে, অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বাড়িওয়ালা মো. নওশের।
এ বিষয়ে লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সমীর কুমার সরকার বলেন, মায়ের অবহেলার কারণেই তার শিশু সন্তান পানিতে ডুবে মারা গেছে। এ কারণেই অপমৃত্যু মামলা নেয়া হয়েছে। তবে, বাড়িওয়ালা বাইরে থেকে ঘর তালাবদ্ধ করেছিল কিনা সেটি তার জানা নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে বাড়িওয়ালার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।