রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ধারণক্ষমতার ৬ গুণ ডায়রিয়া রোগী ভর্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৩ এএম, ১৮ এপ্রিল,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:২৮ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
রাজবাড়ীতে হঠাৎ করেই বেড়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। বিশেষ করে এক সপ্তাহ ধরে শয্যার চেয়ে কয়েকগুণ রোগী ভর্তি রয়েছে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে। খোলা আকাশের নিচে, গাছতলায়, ময়লার ড্রেনের পাশে ভর্তি থেকে অনেকেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদিকে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘন্টায় রাজবাড়ীতে নতুন করে ৮০ জন ডায়রিয়া রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে ১১ শয্যার বিপরীতে ভর্তি রয়েছেন ৬২ জন। এছাড়া পাংশায় ৯, কালুখালীতে ১, বালিয়াকান্দিতে ৫ ও গোয়ালন্দে ৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এদিকে রাজবাড়ী পৌর এলাকায় ডায়রিয়ার কারণ অনুসন্ধান ও চিকিৎসায় রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে তিনটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। মেডিকেল টিম তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাইরের খোলা খাবার থেকেই মূলত ডায়রিয়ায় প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া ইফতারে বাইরের ভাজাপোড়া ও বাসি খাবারে ডায়রিয়া বাড়ছে। প্রতিবেদনে ইফতারে অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খেতে নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া সুপেয় পানি খেতে ও সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত কয়েক দিন কী কারণে রাজবাড়ীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির অবনতি সেটি জানতে গত ১২ এপ্রিল ৫ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে রাজবাড়ী স্বাস্থ্য বিভাগ।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজবাড়ীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতির বিপর্যয়ের মূল কারণ সাপ্লাইয়ের পানি। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগী সাপ্লাইয়ের পানি পান করে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশ রোগী পৌরসভা এলাকার বিনোদপুর, ধুঞ্চি ও লক্ষ্মীকোল এলাকার বাসিন্দা। রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মোহাম্মদ আব্দুল হান্নান জানান, বাইরের খোলা খাবার ও পানি থেকেই মূলত ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বর্তমানে বেডের তুলনায় রোগীর সংখ্যা বেশি। ফলে ফ্লোরেও রোগী রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। পর্যাপ্ত স্যালাইন ও নার্স আছে। রাজবাড়ীর সিভিল সার্জন ডা. ইব্রাহিম টিটনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সাপ্লাইয়ের পানিতে এমন বিপর্যয় ঘটতে পারে। পৌরসভার সরবরাহ করা পানির পাশাপাশি ব্যক্তিগত ট্যাংকের পানি পানে এমনটি হয়েছে তা নিশ্চিত। এছাড়া তেল-জাতীয় খাবার, অতিরিক্ত গরম, খোলা খাবারে রাজবাড়ীতে ডায়রিয়া পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, ডায়রিয়া পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে অবশ্যই সবাইকে পানি ফুটিয়ে পান করতে হবে। এর বিকল্প কোনো পথ নেই। বিশেষ করে পৌরসভার পানি অবশ্যই ফুটিয়ে খেতে হবে। রাস্তার পাশে তৈরি করা খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। পাশাপাশি ভালোভাবে হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, পানি পানের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকাসহ খাবার স্যালাইন বেশি বেশি খেতে হবে। সকলকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।
রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান বলেন, ‘তদন্ত প্রতিবেদন আমরা হাতে পেয়েছি। আমরা সচেতনতার জন্য প্রচার প্রচারণা শুরু করেছি।’