সোনাগাজীতে যুবলীগ ছাএলীগের হামলা-ভাংচুরের পর সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ বন্ধ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:১০ পিএম, ২ এপ্রিল,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৮:৫৬ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
ফেনীর সোনাগাজীতে হামলা ভাংচুরের পর সন্ত্রাসীদের অব্যহত হুমকিতে বন্ধ রয়েছে নির্মানাধীন সোনাগাজী ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ। এ বিষয়ে কাজ শুরুর জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা চেয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানী অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি) পক্ষ থেকে কোম্পানী সচিব কাজি নজরুল ইসলাম ফেনী পুলিশ সুপার বরাবরে লিখিত আবেদন করেছেন।
লিখিত আবেদনে ইজিসিবি সচিব কাজি নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে বিদ্যুৎ জ্বালানিও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের বিদ্যুৎ বিভাগের অধিনে ইজিসিবি কর্তৃক সোনাগাজী উপজেলার চরচান্দিয়া ইউনিয়নের পূর্ব বড়ধলী মৌজার এক হাজার একর উপকূলীয় ভূমিতে ৭শ ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সোনাগাজী ৫০ মেগাওয়াট সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ট্রিনা এইচওয়াডিসি জেবি চায়না সাইটে কাজ শুরু করার লক্ষ্যে সাইট অফিস নির্মান ও প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বর্তমানে ইপিসি ঠিকাদার প্রকল্প এলাকায় তাদের কাজ শুরু করেন এবং স্থানীয় ঠিকাদার জিওটেক ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন কর্তৃক আবাসিক ভবন ও বাউন্ডারি ওয়ালের নির্মান কাজ চলমান রয়েছে। গত শুক্রবার(২৫ মার্চ) গভীর রাতে ২০/২২ জন যুবলীগ ছাএলীগ আ'লীগ প্রকল্পে এলাকায় এসে হামলা করে ভাংচুর চালায়। এসময় শ্রমিকরা বাঁধা দিলে তাদের পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেয়। পুনরায় হামলার ভয়ে শ্রমিকরা পালিয়ে যাওয়াতে প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে।
জিওটেক ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রকৌশলী একরাম হোসেন ও ম্যানেজার আক্তারুজ্জামান খোকন বলেন,সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরুর পর এক জনপ্রতিনিধি ও তার অনুগত লোকজন দফায় দফায় মোবাইলে ও প্রকল্প এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন বাহানায় নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশী মুল্যে প্রকল্পে মালামাল সরবরাহের দাবী জানালে আমাদের কোম্পানী তাদের প্রস্তাবে সায় দেয়নি। পরে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের সাথে সমঝোতা ছাড়া কাজ শুরু না করার জন্য প্রচ্ছন্ন হুমকি ধামকি প্রদান করেন।
এর কয়েকদিন পর গত শুক্রবার অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে শ্রমিক মো: আতিকুল, একরামুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, একরামুল হোসেন, আলি আজগর বাবলুকে আহত করে নগদ টাকা ও মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে ভোর হওয়ার আগে কাজ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি প্রদান করেন। তাদের হুমকিতে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ রেখে রাতেই পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় জিওটেক ইঞ্জিনিয়ারিং এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো: নুর উদ্দিন বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে অজ্ঞাত ২০/২৫ জনের বিরুদ্ধে সোনাগাজী মডেল থানায় সাধারন ডায়েরী করেন এবং মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে আলি আজগর বাবলু সাধারন ডায়েরী করেন।
হামলার ভয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা বলেন, কাজ শুরুর পর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তাদের কে প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে সমঝোতা করতে বলেন। কয়েকবার তিনি আমাদের তাগাদা দিয়ে বলেন ফেনী জেলায় কাজ করতে হলে নিদিষ্ট পরিমান কমিশন দিয়ে করতে হয়। ধারনা করছি সমঝোতা না করায় ভয় দেখাতে ওই জনপ্রনিধির ইন্ধনে হামলার ঘটনাটি ঘটে।
সরজমিনে প্রকল্প এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে নির্মানাধীন প্রকল্পের কাজ বন্ধ রয়েছে। স্থানীয়রা হামলার কথা স্বীকার করলেও ভয়ে হামলাকারীদের নাম প্রকাশ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। মুঠোফোনে কথা হয় প্রকল্পের পরিচালক আনোয়ার হোসেনের সাথে। সরকারী প্রকল্পে হামলার ঘটনায় বিষ্ময় প্রকাশ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকে অবহিত করছেন বলে জানান তিনি।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি খালেদ দাইয়ান বলেন, হামলার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের নাম উল্লেখ না করে থানায় সাধারন ডায়েরী করেছেন। প্রকল্পের কাজ অব্যহত রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে বাড়তি নিরাপত্তার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশের গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যহত রয়েছে।