সম্পত্তি বেচে সন্তানকে বিদেশ পাঠানো বাবার দিন কাটে রাস্তার পাশে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৩ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারী,সোমবার,২০২২ | আপডেট: ০৫:৫৩ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২৪
মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার দক্ষিণ কামারগাঁও এলাকার বাসিন্দা ওমর আলী। বয়স আশির ঘরে। সম্পত্তি বিক্রি করে এক ছেলেকে পাঠিয়েছিলেন বিদেশে। আরেক ছেলে মাকে নিয়ে থাকেন অন্যত্র। তবে দুই ছেলের কেউ-ই খোঁজ নেন না বাবার। এমন পরিস্থিতিতে রাস্তার পাশে এক ঝুপড়িতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিয়েছেন এই বৃদ্ধ।
সরেজমিনে উপজেলার ভাগ্যকূল ইউনিয়নের দক্ষিণ কামারগাঁও এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে একটি ছোট্ট ঝুপড়ি। দেখলে মনে হতে পারে বাড়ির অব্যবহৃত জিনিস কিংবা গৃহপালিত কোনো প্রাণী রাখার জায়গা। পলিথিনে মোড়ানো তিন চালের এই ঝুপড়িতেই গত পাঁচ ছয় বছর খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে ওমর আলীর। বয়সের ভারে ন্যুব্জ ওমর আলী হারিয়েছেন শ্রবণশক্তি। স্পষ্ট করে কথাও বলতে পারেন না। এ প্রতিবেদক তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। তবে দুচোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছিল অশ্রু।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঝড়-বৃষ্টি-শীত উপেক্ষা করেই এখানে থাকছেন বৃদ্ধ ওমর আলী। দুই স্ত্রীর ঘরে দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তার। প্রথম স্ত্রী মারা গেছেন। সহায় সম্পত্তি বিক্রি করে আট বছর আগে সে ঘরের ছেলে লিটনকে বিদেশে পাঠান। আরেক ছেলে ফরিদ মাকে নিয়ে থাকেন আরেক জায়গায়। দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে মেয়েরা থাকেন স্বামীর বাড়ি। দুই পক্ষের ছেলেমেয়েরা বাবার খোঁজ নেন না। পথচারী কিংবা স্থানীয়দের সহযোগিতায় কোনোমতে বেঁচে আছেন এই বৃদ্ধ।
স্থানীয় হাসান রহমান বলেন, অনেক বছর ধরে ওনি এখানেই থাকেন। দেখে আমাদেরও কষ্ট হয়। তবে তার সন্তানরাই তো তার খোঁজ নেয় না।
আরেক ব্যক্তি বলেন, সরকারিভাবে যদি এই বৃদ্ধের জন্য ঘর করে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে আমি জায়গা দেবো। তারপরও চাই বৃদ্ধ লোকটি শেষ জীবনে ভালো থাকুক। এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে অনাগ্রহ দেখান ভাগ্যকূল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন। চেষ্টা করেও বৃদ্ধ ওমর আলীর পরিবারের কোনো সদস্যের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) প্রণব কুমার ঘোষ বলেন, একজন বৃদ্ধের অসহায়ত্বের খবর আমরা এরই মধ্যে জেনেছি। এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। তাকে সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হবে।