পাবনায় গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা নিয়ে পোস্ট মাস্টার-পিয়ন উধাও
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৫৭ এএম, ১০ ফেব্রুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২২ | আপডেট: ০৬:১৫ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
পাবনায় ‘নগদের’ নামে টাকা জমা করে গ্রাহকের ৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পালিয়েছে পোস্ট মাস্টার ও পিয়ন। জেলার সুজানগর উপজেলার সাগরকান্দি ইউনিয়ন পোস্ট অফিসে এ ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডাক বিভাগ। তদন্ত কমিটি প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বলে জানা গেছে।
একাধিক ভুক্তভোগী অভিযোগ করে বলেন, সাগরকান্দি ইউনিয়ন পোস্ট অফিসের মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ও পিয়ন মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল যোগসাজশে প্রায় ৩ কেটি টাকা নিয়ে উধাও হয়েছেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, পোস্ট মাস্টার ও পিয়ন গ্রাহকদের জানায় নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি। এজন্য সরকার প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে ডিজিটাল সেবা দেওয়ার জন্য পোস্ট অফিসের পাশাপাশি আর একটি সংস্থা চালু করছেন। যার নাম পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রা. লি. নগদ রেজি. নং-সি-৫৩৬৭৭(৩৪২) ২০০৪।
সাগরকান্দি পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আলেয়া বেগম জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য তিনি প্রায় দশ বছর ধরে জমানো পাঁচ লাখ টাকা ব্যাংকে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পিয়ন আব্দুল্লাহর পরামর্শে তিনি চার মাস আগে নগদের নামে হিসাব খুলে নূর ইসলাম বকুলের কাছে টাকা জমা দেন। চার মাসে তাকে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা করে মুনাফাও দিয়েছে। গত সপ্তাহে মেয়ের বিয়ে ঠিক হলে টাকা তুলতে আসেন তিনি। তাকে এক দিন পর আসতে বলেন। তিনি নির্ধারিত দিনে এসে জানতে পারেন আব্দুল্লাহ বদলি নিয়ে অন্য পোস্ট অফিসে চলে গেছেন। খোঁজ নেই নূর ইসলাম বকুলেরও।
সাগরকান্দি বাজারের মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রদীপ কুন্ডু জানান, তিনি দুই মাস আগে দীর্ঘ দিনের সঞ্চিত আট লাখ টাকা জমা রাখতে সাগরকান্দি পোস্ট অফিসে যান। এ সময় পোস্টমাস্টার নূর ইসলাম বকুল ও পোস্টম্যান (পিয়ন) আব্দুল্লাহ আল মামুন তাকে জানান ডাক বিভাগের নতুন সেবা ‘নগদ’, সেখানে টাকা রাখলে পাওয়া যাবে লাখে এক হাজার টাকার মাসিক মুনাফা। তাদের পরামর্শে নূর ইসলামের হাতে টাকা দিয়ে হিসাব খোলেন প্রদীপ। দেওয়া হয় নগদের নামে ছাপা পাশ বই, হিসাব নম্বর। এক মাস মুনাফা দেওয়ার পর থেকে তাদের কোনো খোঁজ নেই। ভুক্তভোগী মোছা. আলেয়া খাতুন, মোছা. বুলু খাতুন, মো. খালেক ফকির, সুফিয়া খাতুন, মোছা. হুলুফা খাতুন, মো. মানিক মোল্লাসহ আরও অনেকে অভিযোগ করে বলেন, তারা একেকজনের কাছ থেকে ২ লাখ, ৫ লাখ, ৭ লাখ, ৮ লাখ করে টাকা নিয়েছে।
তারা আরও বলেন, পোস্ট অফিসে টাকা রাখার জন্য গেলে পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল আমাদের বলে নগদে টাকা রাখলে লাভ বেশি হবে। আমরা বকুলের কথা শুনে নগদে টাকা রেখেছি। কিছু দিন পর পোস্ট অফিসে টাকা তুলতে গেলে মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুল ও পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আমাদের সঙ্গে নানা তালবাহানা শুরু করেন। টাকা না দিয়ে দিনের পর দিন ঘোরাতে থাকেন। তখন আমরা বিষয়টি স্থানীয় সাগরকান্দী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরীকে জানালে তিনি পোস্ট অফিসের পিয়নকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলে প্রতারণার বিষয়টি ধরা পড়ে। সাগরকান্দী ইউপি চেয়ারম্যান শাহীন চৌধুরী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে সাতবাড়িয়া পোস্ট অফিসে এবং সাতবাড়িয়া পোস্ট মাস্টার রফিকুল ইসলামকে সাগরকান্দি পোস্ট অফিসে বদলি করা হয় বলে জানতে পেড়েছি। এ বিষয়ে সাগরকান্দী ইউনিয়নের নতুন যোগদান করা পোস্ট মাস্টার রফিকুল ইসলাম প্রতারিত গ্রাহকদের বই হাতে নিয়ে বলেন, এসব বই ডাক বিভাগের না, গ্রাহকের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।
সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী বলেন, কয়েকজন ভুক্তভোগী মৌখিকভাবে জানিয়েছে, লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাবনা ডাক বিভাগের পোস্ট অফিস পরিদর্শক ও তদন্ত কমিটির সদস্য শাহীন জুবায়ের হাসান খান জানান, পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ ও পিয়ন নূর ইসলাম জঘন্য অপরাধ করেছেন। তারা নগদের নাম, লোগো ব্যবহার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আমরা সরেজমিনে প্রমাণও পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার জন্যও আমরা চেষ্টা করব। পাবনা ডাক বিভাগের ডেপুটি পোস্ট মাস্টার মো. আনোয়ার হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, সাগরকান্দি পোস্ট অফিসের একজন পোস্টম্যান পল্লী কুরিয়ার সার্ভিস প্রা. লি. নগদের মতো করে বই তৈরি করে এক লাখে এক হাজার টাকা লাভ দেওয়ার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। পোস্ট অফিসের সঙ্গে কুরিয়ারের এ ধরনের কোনো সম্পর্ক নেই। বইতে নগদের লোগো দিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বদলি করা হয়েছে। তদন্তে ঘটনা প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তবে এ ঘটনায় এখনও কোনো লিখিত অভিযোগ করেননি ভুক্তভোগীরা। এ ঘটনায় অভিযুক্ত পোস্ট মাস্টার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ এবং পোস্টম্যান মোহাম্মদ নূর হোসেন বকুলের বক্তব্য জানতে যোগাযোগ করা হলে তাদের পাওয়া যায়নি।