কুমিল্লা দক্ষিণাঞ্চলের ভেজাল বিরোধী অভিযান না থাকায় বেপরোয়া ব্যবসায়ীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫০ পিএম, ৭ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৫৪ এএম, ১১ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের লাকসাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ, লালমাই ও বরুড়া উপজেলার হাট-বাজার জুড়ে ভেজাল বিরোধী অভিযান না চালানোর কারনে ভেজাল পন্য সামগ্রী ব্যবসায়ীরা দেদারচ্ছে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের দু’নম্বরী বিভিন্ন পন্যের ব্যবসায়ী কারবার। তৎপর হয়ে উঠেছে অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট গুলো ফলে বিভিন্ন ভেজাল পন্য ব্যবহার করে প্রতারিত এবং নানাহ জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ অঞ্চলের সকল পেশার মানুষ। এছাড়া এ অঞ্চলে অবাধে বিক্রি হচ্ছে মানহীন পন্য।
খাদ্যে ভেজাল প্রবনতা ইদানিং হাট-বাজারগুলোতে ভয়ংকর ও বহুমাত্রিক আকার ধারন করেছে কোন কোন এলাকায়। নকল ও ভেজালের অশুভ দৌরাত্মে আসল শব্দটি বর্তমানে নির্বাসনের পথে। এ অঞ্চলে ব্যবহৃার্য বেশির ভাগ খাদ্যপন্যই ভেজাল। এমন কোন খাদ্যপন্য নেই যা নকল-ভেজালের থাবা থেকে মুক্ত।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের একাধিক সূত্র জানায়, জেলার ৫টি উপজেলার সর্বত্র এখন ভেজাল পন্য বেচা-কেনার হাট। ছোট-বড় সকল হাট-বাজার ও অলি-গলিতে হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় ভেজাল পন্য সামগ্রী। ভেজাল বিরোধী অভিযান রহস্যজনক কারনে শুরু না হওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে হরেক রকম প্রশ্ন তুলেছেন ভোক্তভোগী সাধারন মানুষ। মাঝে মধ্যে ২/১টি অভিযান চালালেও তা অনেকটা নিষ্ফল। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনগুলো এ ব্যাপারে জনবল সংকটের অজুহাত তুললেও স্থানীয় লোকজন বলছেন ভিন্ন কথা। বিশেষ করে এসব অনৈতিকতা প্রতিরোধে যেন কেউ নেই এ অঞ্চলে। এমনিতেই দূর্বল আইনী প্রক্রিয়ায় মানহীন কিংবা ভেজালপন্য উৎপাদনের শাস্তি খুব একটা হয় না। এছাড়া পন্যের মান নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থাগুলোর রহস্যজনক নিরব ভূমিকায় এলাকার জনমনে রয়েছে নানাহ অভিযোগ।
সুত্রগুলো আরও জানায়, জেলা দক্ষিনাঞ্চলের উপজেলাগুলোর স্থানীয় প্রশাসন উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ার পরও তারা এই ব্যাপারে নিরব ভূমিকা রাখা তাদের প্রতি মানুষের সন্দেহ, অবিশ্বাস দিন দিন বাড়ছে। উপজেলার গুলোর সকল হাটবাজারে সব পন্যই ভেজাল। গ্রামাঞ্চল চাইতে শহর এলাকার চিত্র আরো ভয়াবহ। বিশেষ করে চাউলের আড়ৎ, মুদি দোকান, হোটেল-রেস্তোরা, ফাষ্টফুট, বেকারী, ফার্মেসী, সার-বীজের দোকান, পানির জার, ফলমূল, সেমাই, গুড়ো দুধ, হলুদ, মরিচ, মসল্লা, আইসক্রীম তৈরী ও মিষ্টি তৈরী কারখানা, কাপড় দোকান, কসমেটিকস্, শুটকী দোকান, মাছের আড়ৎ, মাংস দোকানসহ বিভিন্ন খাদ্যপন্য তৈরী কারখানা রয়েছে ভেজাল পন্যের শীর্ষে। এছাড়া এ অঞ্চলে অবৈধ ড্রেইজিং ব্যবসা, স’মিল, রাইসমিল, ব্রিকফিল্ড, মৎস্যবেড়ি,মুরগির খামার, ফিড ব্যবসা, সরকারি সম্পদ জবরদখলসহ বিভিন্ন সেক্টরের উন্নয়ন কর্মকান্ড তদারকীতে ভানুমতির খেইল।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এ পাঁচ উপজেলার সর্বত্রই ভেজাল পন্য বিক্রির হিড়িক পড়েছে। সবকটি প্রতিষ্ঠানেই ভেজাল পন্য ব্যবসায় প্রতিযোগিতা চলছে এবং গড়ে উঠেছে ছোটবড় বিভিন্ন পন্যের মজুতদারী সিন্ডিকেট। কোন পন্যের ব্যবসাই নিয়ম-নীতির কোন বালাই নেই। আবার কারো কারো বৈধ কোন কাগজপত্র নেই। বিশেষ করে প্রত্যেকটি খাবার দোকানেই ময়লা-আর্বজনা, পরিবেশ ও পরিচ্ছন্নহীন। এ অঞ্চলের সকল পেশার মানুষ বিশ্বাসের জোরেই গিলে খাচ্ছে ওইসব অখাদ্য-কুখাদ্য। বিভিন্ন খাবার পন্যের সাথে মিশানো হচ্ছে সেকারিন, সোডা, রাসায়নিক পাউডার, কালার রং, বিষাক্ত ক্যামিকেলসহ হরেক রকম মরন দানব পন্য। আবার বেশির ভাগ পন্যই মেয়াদ উর্ত্তীণ ও নিম্নমানের।
অপরদিকে হোটেল গুলোতে মরা মুরগী ও কসাইখানায় মরা ও রুগ্ন গরু- ছাগল জবাই করে প্রকাশ্যে বিক্রি করছে। আবার প্রতিটি পন্যে ওজনে কম দিয়ে ক্রেতাদের ঠকাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন ফার্মেসী ঘুরে পাওয়া যায় লোম শিহরিত তথ্য। উপজেলা পাঁচটির ফার্মেসী গুলোতে মেয়াদ উর্ত্তীণ, নিম্নমান ও ভারতীয় হরেক রকম ভেজাল ঔষধ দেদারচ্ছে বিক্রি হচ্ছে। ফার্মেসী মালিকদের মধ্যে অনেকের নেই কোন অভিজ্ঞতাসনদ ও বৈধ কাগজপত্র। এ ফার্মেসী সিন্ডিকেটের অন্তরালে চলছে প্রশিক্ষন সনদ বেচাকেনা। বলতে গেলে এক কথায় উপজেলাগুলোর সর্বত্রই ভেজাল পন্যের রাজত্ব চলছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের অপর সূত্র জানায়, সারা শরীরে ক্ষত ঔষধ দিব কত। প্রত্যেকটি ভেজাল পন্য সম্পর্কে জেলা- উপজেলা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনেকবার জানালেও এই ব্যাপারে কোন তৎপরতা নেই তাদের। একজন নাগরিক হিসাবে বলবো জাতির জন্য এটা দূর্ভাগ্য। সকলেই যার যার অবস্থানে থেকে শুধু মারি আর পারি যে যে কৌশলে। অথচ এ অঞ্চলের হাট-বাজার জুড়ে অধিকাংশ কোম্পানী রাজস্ব বিভাগ ও মান নিয়ন্ত্রনকারী সংস্থাসহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠন থাকার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিবন্ধন সনদ না নিয়েই উৎপাদিত পন্য বাজারজাত করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
এ ব্যাপারে জেলা পরিবেশ, বিএসটিআই ও স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন আমরা রাজনৈতিক ভাবে চাপে আছি। ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও এ ব্যাপারে কিছু করতে পারছি না। বিশেষ বিশেষ প্রশ্নের কোন জবাব না পেলেও ওই দপ্তরগুলোর বিভিন্ন সূত্র জানায়, স্থানীয় প্রভাবশালীদের দৌরাত্বে আমরা অনেকটা অসহায়। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারী হাসপাতালের চিকিৎসক বোর্ডের জনৈক সদস্য জানায়, নকল-ভেজাল পন্য কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছে না বরং তা ব্যবহার করে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। বিশেষ করে মানব দেহে ক্যান্সার, কিডনী ও লিভারসহ মারাত্মক জটিল রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ছে। খাদ্যে ভেজাল নিঃসন্দেহে মারাত্মক অপরাধ। কিন্তু চলমান আইনের প্রয়োগ নিয়ে রয়েছে যথেষ্ট বির্তক। চলমান বছরে দেশের একটি বেসরকারী সংস্থার জরিপে দেখা যায় ৪৩টি খাদ্যপন্যের ৫ হাজার ৩৯৬টি নমুনা পরীক্ষায় ২ হাজার ১৪৭টিতেই ভয়াবহ ভেজালের প্রমান পাওয়া গেছে বলে জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলাগুলোর সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন জানান, এ ব্যাপারে ইচ্ছা থাকলেও উপায় নেই। মাঠে নামলে শুরু হয় তদবীর এবং বদলির হুমকি। তারপরও বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আসা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কিছুদিনের মধ্যে বাজার মনিটরিংসহ ভেজাল বিরোধী অভিযানে মাঠে নামবো। সরকার ১৫৫টি পন্যে সিএম সনদ বাধ্যতামূলক করা হলেও কেউ তা মানছে না। ওইসব পন্য উৎপাদন, মওজুদ ও বাজারজাত করনে সর্বনিম্ন ৭ হাজার টাকা ও সর্বচ্চো ১ লক্ষ টাকা অর্থদন্ডসহ ৪ বছর কারাদন্ডের বিধান রাখা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।