মেয়েকে ধর্ষণ ঘটনায় বাবার যাবজ্জীবন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৩০ এএম, ৭ জানুয়ারী,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:০৭ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
ফটিকছড়ির ভূজপুরে নিজের ১২ বছরের মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনায় বাবাকে (৪০) যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মুনসী আব্দুল মজিদ একমাত্র আসামির উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।
নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, ট্রাইব্যুনাল এ মামলায় ধর্ষণের ঘটনায় আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেছেন। অর্থদন্ড অনাদায়ে আসামিকে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে। একই আসামির বিরুদ্ধে পৃথক ধারায় ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনায় ৫ বছরের কারাদন্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেছেন আদালত। এ অর্থদন্ড অনাদায়ে আসামিকে আরও তিন মাসের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট খন্দকার আরিফুল আলম বলেন, আসামির এ দুটি সাজা একসাথেই কার্যকর করা হবে। আসামির হাজতবাসের সময় থেকে সাজার মেয়াদ শুরু হবে। মামলা দায়েরের পর থেকে আসামি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে রয়েছে বলে জানান তিনি।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর পাশাপাশি আসামিপক্ষে আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া মামলার বাদী উপস্থিত থাকলেও ভিকটিম অনুপস্থিত ছিল।
মামলার এজহারে জানা যায়, ২০১৯ সালে ১৮ জুন ফটিকছড়ির ভূজপুরে বাসায় কেউ না থাকার সুযোগে মেয়েকে ধর্ষণ করে বাবা। ওই ঘটনার চৌদ্দ দিনের মাথায় পুনরায় ধর্ষণ চেষ্টা চালালে পরিবারের সদস্যদের কাছে বিষয়টি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় ওই বছর ৩ জুলাই মেয়েটির মা তার স্বামীর বিরুদ্ধে ভূজপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ সময় আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ৯ (১) ধারায় ধর্ষণ এবং ৯(৪) ‘খ’ উপধারায় ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়। এর আগে ২০১৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর ভূজপুর থানা পুলিশ বাবাকে একমাত্র আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পুলিশের অভিযোগপত্রে মোট ১৩ জন সাক্ষী রাখা হয়েছিল। গত বছর ৫ মার্চ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ ট্রাইব্যুনালে ১১ জন সাক্ষীকে উপস্থাপন করতে সক্ষম হয়। এরমধ্যে দুজন সাক্ষী হচ্ছেন চিকিৎসক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। বাকিরা সাধারণ সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন।
ট্রাইব্যুনালের পিপি বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ এ মামলায় ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট, ভিকটিম ও ভিকটিমের মায়ের জবানবন্দি রেকর্ড গ্রহণসহ ১১ জন সাক্ষীকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করার মাধ্যমে আসামির বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে।
ঘটনাটি সমাজে চূড়ান্ত নৈতিক অবক্ষয়ের দৃষ্টান্ত, বাবার হাতে মেয়ে ধর্ষণের ঘটনা সমাজ চূড়ান্ত নৈতিক অবক্ষয়ে পৌঁছার একটি দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর কখনো না ঘটে সেজন্য ট্রাইব্যুনাল আসামিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিয়েছেন।
পিপি বলেন, ইচ্ছার বিরুদ্ধে করা জঘন্যতম এ কাজটিতে ভিকটিম মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আসামির আরও একটা মেয়ে আছে। তার ওপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ ধরনের ঘটনায় রাষ্ট্রপক্ষ কোনো আপোস করেনি বলে জানান তিনি। রাষ্ট্রপক্ষ মনে করেছে, এ ঘটনায় বাদীর আপোসনামার ভিত্তিতে আসামিকে যদি অব্যাহতি প্রদান করা হত তাহলে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব পড়ত।