নাসিকের সিদ্ধিরগঞ্জের ১০ ওয়ার্ডে সন্ত্রাস, চাদাবাজি, মাদক, মশা ও ময়লা-জলাবদ্ধতাই বড় সমস্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:১২ পিএম, ৮ জানুয়ারী,শনিবার,২০২২ | আপডেট: ০৯:০৫ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
১০ বছর বয়সী নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সিদ্ধিরগঞ্জ জোনের ১০টি ওয়ার্ডে সড়ক ও ড্রেনের উন্নয়ন হয়েছে। কিছু কিছু সড়কে বাতিও জ¦লে। তবে সিদ্ধিরগঞ্জ অঞ্চলের নাগরিকদের ভোগান্তির বড় কারন মশা, ময়লা, মাদক, কিশোরগ্যাং, সন্ত্রাস, চাদাবাজি, জলাবদ্ধতা।
এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা, খেলার মাঠ, পার্ক, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, গ্যাস সরবরাহ, কবরস্থান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। এসব সমস্যা ও সম্ভাবনাকে সামনে রেখে তৃতীয় মেয়াদের জন্য নগর প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য আগামী ১৬ জানুয়ারী ভোট গ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। সিদ্ধিরগঞ্জের ১০টি ওয়ার্ডে ৭৩ টি ভোট কেন্দ্রে ২ লাখ ২ হাজার ৬৩৬ জন নারী-পুরুষ ভোটারের ভোট গ্রহনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
সিদ্ধিরগঞ্জ জোনের ৯ ওয়ার্ডে ৩ টি সংরক্ষিত আসনের মহিলা কাউন্সিলর পদে ১৬ জন নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। ১০ জন সাধারন কাউন্সিলর পদের জন্য লড়ছেন ৬৪ জন প্রার্থী। আর মেয়র পদে রয়েছেন ৭ প্রার্থী। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রেই ভোট গ্রহন হবে ইভিএম মেশিনে। মেয়র পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামীলীগ মনোনিত নৌকা প্রতিকের জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি সাবেক মেয়র ডা: সেলিনা হায়াত আইভী এবং হাতী প্রতিকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার এর মধ্যে।
এক নং ওয়ার্ড : এই ওয়ার্ডে ৩৩ হাজার ১০১ জন ভোটারের কাউন্সিলর হতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৭ জন প্রার্থী। ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এখানে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান কাউন্সিলর যুবলীগ নেতা ওমর ফারুক, সাবেক কাউন্সিলর আব্দুর রহিম ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মাহমুদুর রহমানের মধ্যে। এই ওয়ার্ডে বড় সমস্যা ৮টি চুন কারখানার বিষাক্ত কালো ধোয়া, মহল্লার ভিতরে ময়লার ভাগার, মশা, মাদক, বাড়ী-ঘর নির্মাণে চাদাবাজি, জায়গা-জমি জবর দখল, না থাকা। এছাড়া বিনোদনের জন্য পার্ক, খেলার মাঠ, পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নেই। প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীরা নির্বাচিত হলে এসবের সমাধানের প্রতিশ্রতি দিয়ে ভোট চাইছেন ভোটারদের কাছে।
দুই নং ওয়ার্ড : ২০ হাজার ৯৫০ জন ভোটার এই ওয়ার্ডে। কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন ৮ প্রার্থী । বর্তমান কাউন্সিলর জেলা বিএনপির সাবেক কোষাধ্যক্ষ ইকবাল হোসেন, থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক আমিনুল হক রাজু এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সফিকুল ইসলামের মধ্যে লড়াই হবে বলে ভোটাররা জানিয়েছেন। ভোটারদের অভিযোগ, মশা, মাদক, কিশোরগ্যাং, ময়লা এবং বৃষ্টির মৌসুমে কিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা বড় সমস্যা এই ওয়ার্ডে।
তিন নং ওয়ার্ড : ২২ হাজার ৬৪৭ ভোটারের প্রতিনিধি হতে এই ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৬ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বর্তমান কাউন্সিলর শাহজালাল বাদল ও তোফায়েল আহাম্মদের। এরা দুজনই আওয়ামীলীগের। এই ওয়ার্ডে কবরস্থান নেই। লাশ দাফন করতে যেতে হয় পাশের থানা ডেমরায়। সেখানেও বাধার মুখোমওখি হতে হয় লাশ দাফনে। পার্ক, স্বাস্থ্যসেবা ও ঈদগাহ নেই। আছে জলাবদ্ধতা, মাদক, চাদাবাজি, ময়লা, মশা আর ইভটিজিং সমস্যা।
চার নং ওয়ার্ড : শীতলক্ষ্যা নদীর পাড়ে ১৫ হাজার ৩৯৩ জন ভোটারের এই ওয়ার্ডে প্রার্থী ৪ জন। আওয়ামীলীগ দলীয় বর্তমান কাউন্সিলর আরিফুল হক হাসান, নজরুল ইসলাম ও নুর উদ্দিন মিয়ার মধ্যে ত্রিমুখি লড়াই হবে। ওয়ার্ডের শিমরাইল উত্তরপাড়া এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়ী সারাবছরই কারখানার বর্জ্যরে পানিতে বন্দি থাকে। মাদক আর কল-কারখানার বিষাক্ত বায়ুদূষন এই ওয়ার্ডে সবচেয়ে বড় সমস্যা। কবরস্থান না থাকায় তাদেরও ডেমরায় গিয়ে লাশ দাফন করতে হয়। স্বাস্থ্য সেবা, খেলার মাঠ, পার্ক, হাইস্কুলও নেই এই ওয়ার্ডে।
পাঁচ নং ওয়ার্ড : সাইলো খাদ্য গুদাম, সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুত কেন্দ্র শীতলক্ষ্যা পাড়ের এই ওয়ার্ডে। ১৩ হাজার ৮২৬ জন ভোটারের এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। বিএনপির সাবেক এমপি মুহ. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে গোলাম মোহাম্মদ সাদরিল ও আওয়ামীলীগ দলীয় আনিসুর রহমানের মধ্যে হবে মূল লড়াই। এই ওয়ার্ডের কিছু এলাকায় ময়লা, মাদক ও বায়ুদূষনের বড় সমস্যা। খেলার মাঠ, পার্ক ও স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নেই।
ছয় নং ওয়ার্ড : র্যাব-১১ এর সদর দপ্তর, আদমজী ইপিজেড, দুটি জ¦ালানী তেলের ডিপো ও বিহারী কলোনী এই ওয়ার্ডে । পূর্বদিকে শীতলক্ষ্যা ও পশ্চিমে শিমরাইল-নারায়ণগঞ্জ সড়কের মাঝে এই ওয়ার্ডে ভোটার ১৭ হাজার ৪৭০ জন। কাউন্সিলর প্রার্থী ৬ জন হলেও মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগের দুই নেতা বর্তমান কাউন্সিলর মতিউর রহমান ও সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলামের মধ্যে। এই ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ থাকলেও বর্ষায় জলাবদ্ধতা, ময়লা, ধুলার দূষণ, মশার সমস্যা প্রকট। স্বাস্থ্য সেবা, হাইস্কুল, খেলার মাঠ ও পার্ক নেই। মাদক আর চাদাবাজি সর্বত্র এই ওয়ার্ডে।
সাত নং ওয়ার্ড : কদমতলী এলাকা নিয়ে ১৫ হাজার ৮৭৭ জন ভোটার এই ওয়ার্ডে। ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কাউন্সিলর পদে। প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে রয়েছেন মহসিন শেখ ও মিজানুর রহমান খান। এই ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা বর্ষায় তলিয়ে থাকে। মাদক বড় সমস্যা। পার্ক ও স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা নেই।
আট নং ওয়ার্ড : ৩১ হাজার ৮০৯ জন ভোটারের কাউন্সিলর হতে ৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এই ওয়ার্ডে । মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাগর প্রধান, থানা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন খোকন, জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য বর্তমান কাউন্সিলর রুহুল আমিন ও যুবলীগ নেতা মহসিন ভুইয়া উল্লেখযোগ্য প্রার্থী। তবে মূল লড়াই হবে আওয়ামীলীগের দুই প্রার্থীর মধ্যে। এখানে পানি সরবরাহ থাকলেও তাতে গন্ধ থাকে বলে বাসিন্দারা বলেছে। এছাড়া মাদক, মশার সমস্যা এবং বর্ষায় পানিতে তলিয়ে থাকে অনেক বাড়ি-ঘর। স্বাস্থ্য সেবা, খেলার মাঠ ও পার্ক নেই।
নয় নং ওয়ার্ড : জালকুড়ি এলাকা নিয়ে ১৮ হাজার ৪০২ জন ভোটারের এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর হতে লড়ছেন ৫ জন প্রার্থী। বর্তমান কাউন্সিলর ইস্্রাফিল প্রধান ও মাসুদুর রহমানের মধ্যে মূল লড়াই হচ্ছে। ওয়ার্ডে জালকুড়ি উত্তরপাড়া এলাকা বছরের অধিকাংশ সময় পানিতে তলিয়ে থাকে। মাদকের সমস্যা রয়েছে। নেই স্বাস্থ্য সেবা, পার্ক ও খেলার মাঠ।
দশ নং ওয়ার্ড : শিল্প কারাখানা সমৃদ্ধ এই ওয়ার্ডে পানি সরবরাহ থাকলেও তা পুরোপুরি বিশুদ্ধ নয়। ময়লার ভাগার রয়েছে। রয়েছে মশার উপদ্রপ। ১৩ হাজার ১৬১ ভোটারের এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ৩ জন। বর্তমান কাউন্সিলর জেলা আওয়ামীলীগ সদস্য ইফতেখার আলম ও ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি লেয়াকত আলীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে।