পেশায় মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ আড়ালে ইয়াবার ব্যবসা

মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ নাসির উদ্দিন অর্গানিক হেলথ কেয়ার নামে একটি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। ব্যাগে ওষুধের স্যাম্পল নিয়ে ঘোরেন ডাক্তারের চেম্বার আর ফার্মেসিতে। তার আড়ালে করেন ইয়াবার ব্যবসা। ইয়াবার কারবারে যুক্ত বড় একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য হিসেবে তাকে গ্রেফতার করেছে বাকলিয়া থানা পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে, মূলত নাসির চট্টগ্রামের একজন ইয়াবা গডফাদারের সহযোগী। তার ব্যাগে ওষুধের সঙ্গে থাকে ইয়াবাও। গত রাতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় অভিযান চালিয়ে নগরীর বাকলিয়া থানা পুলিশ নাসিরকে গ্রেফতার করেছে। তিনি আনোয়ার উপজেলার বটতলী ইউনিয়নের চাপাতলী গ্রামের মৃত এস এম সোলাইমানের ছেলে বলে জানিয়েছেন বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন।

ওসি নেজাম বলেন, গত বছরের ৫ নভেম্বর রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের আব্দুর রাজ্জাক ও মো. কামাল নামে দুই ইয়াবা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের একজনের কাছে একটি বিদেশি পিস্তল পাওয়া যায়। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পারে, দুজন কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসীদের কাছে অস্ত্র সরবরাহে যুক্ত। ইয়াবা ব্যবসার আয় দিয়ে অস্ত্র কিনে তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিক্রি করে। আর রোহিঙ্গাদের একটি চক্র তাদের কাছে ইয়াবা সরবরাহ করে। গ্রেফতার রাজ্জাক ও কামালের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ১৩ নভেম্বর নগরীর চান্দগাঁ থানার নিউ চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার একটি বাসায় অভিযান চালায় পুলিশ। 

সেখানে থেকে মো. ফোরকান ও তার স্ত্রী শামীম আরা সুমিকে (২৮) গ্রেফতার করা হয়। বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় ২২ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা ও নগদ ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৫৪২ টাকা। ইয়াবা লেনদেন কাজে বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যবহৃত এবং অব্যবহৃত ১২টি চেক বই, ফোরকান ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ২টি পাসপোর্ট জব্দ করে পুলিশ। এছাড়া মাসুদের বন্ধু মোবারক হোসেন (৩৮) ও দোকান কর্মচারী মো. রাসেলকে (১৮) একইদিন গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর ১৭ নভেম্বর অভিযান চালিয়ে বাকলিয়া থানা পুলিশ একই চক্রের আরও তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে। এরা হলেন, মো. তাহের (২৬), মো. আলী জোহর (২৮) এবং আসমা আক্তার (২২)। পরবর্তীতে ফোরকানের জবানবন্দিতে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ২ জানুয়ারি নাসিরকে গ্রেফতার করা হয়।

ওসি নেজাম বলেন, গত ১৮ নভেম্বর ফোরকান আদালতে জবানবন্দি দিয়ে জানায়, নাসির নামে আনোয়ারার এক ব্যক্তি তাকে ইয়াবাগুলো সরবরাহ করেছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতে আমরা নাসিরের পরিচয় শনাক্ত করি। দেড় মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে আমরা অবশেষে নাসিরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। নাসির শিক্ষিত মানুষ। তার বেশভূষা দেখে আমরা ভাবতেই পারিনি, এ লোক ইয়াবা পাচারের মতো কাজে জড়িত। তবে গ্রেফতারের পর নাসির সবকিছু স্বীকার করেছেন।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নাসির জানিয়েছেন, তিনি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভের চাকরিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে নগরীতে ও কক্সবাজারে ইয়াবা পাচার করেন। আনোয়ারার ইয়াবা গডফাদার ইদ্রিস ট্রলারে করে সাগরপথে ইয়াবা আনেন। নাসির সেই ইদ্রিসের নিয়োজিত অন্যতম পাচারকারী। ইদ্রিসের বিরুদ্ধে আনোয়ারা থানায় দেড় লাখ ইয়াবা উদ্ধারের মামলা আছে। নাসিরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওসি নেজাম উদ্দিন।