লাকসাম রেলওয়ে জংশনে নানাহ অপরাধী তৎপরতায় পরিবেশ ঝুঁকি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:১০ পিএম, ৪ জানুয়ারী,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০১:০৮ এএম, ২১ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
দেশের ঐতিহ্যবাহী লাকসাম রেলওয়ে জংশনটি বৃহত্তর জংশন হিসাবে পরিচিত হলেও বর্তমানে দায়িত্বরত এক শ্রেণীর অসাধু রেল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অপরাধী তৎপরতার কারনে জংশন এলাকার সার্বিক পরিবেশ প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্য দিয়ে জনচলাচল করতে হচ্ছে এলাকার মানুষদের।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বর্তমান সরকার ইতিমধ্যে কয়েক হাজার কোটি টাকার নানামুখি উন্নয়ন কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রায় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠি নিয়ে জংশন এলাকা গড়ে উঠেছে এক মনোরম পরিবেশ। তারপরও স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতার অভাবে বর্তমান জংশন এলাকার কর্মকান্ড দেখলে বুঝা যায় এলাকাটি এখন নিজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। বিগত কয়েক বছর ধরে এলাকার সর্বত্র ট্রেনের নির্গত ধোঁয়া ও যত্রযত্র মল মূত্র এবং নোংরা আবর্জনা, চোরাচালান টোকেন ব্যবসা, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অপতৎপরতা, বহিরাগত যুবকদের আনাগোনা, মাদক, মলমপার্টি ও ছিনতাই সহ বিভিন্ন অপরাধী কার্যকলাপের কারণে গোটা এলাকা যেন অপরাধী চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে প্রকাশ্যে চোরা চালানের মাধ্যমে নানাহ ব্যবসা, মাদকদ্রব্য আমদানী, পকেটমার, ভ্রাম্যমান পতিতা ছিনতাইকারী, বখাটে মাস্তানদের উপদ্রব, প্লেটফরমে হকারদের দৌরাত্ব, টিকেট কালোবাজারী ও স্থানীয় বিভিন্ন অপরাধী চক্রের দৌরাত্বে জংশন এলাকার সার্বিক জনজীবন আজ মারাত্নক ঝুঁকিতে পড়েছে।
সূত্রগুলো আরও জানায়, এ রেলওয়ে জংশনে বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সাথে স্থানীয় একটি মহল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে বিভিন্ন অপরাধী তৎপরতায় সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে আসছে। রেল সম্পদ রক্ষনাবেক্ষনে নিরাপত্তা বিভাগ, আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে জিআরপি থানা, ফ্ল্যাটফরম নিয়ন্ত্রনে জিআরপি ও নিরাপত্তা হাবিলদার এবং জংশনের সার্বিক নিয়ন্ত্রন রেল জংশনের বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরে নিয়োজিত থাকা কর্মকর্তাদের দায়িত্ব অতি মুখ্য হলেও দেখা যায়, সরকারের ভ্রান্তনীতির অজুহাতে ও নানামুখি সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বিভিন্ন ট্রেড ইউনিয়ননের নামে স্থানীয় কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা ও দূর্র্নীতির কারনে সরকার বিভিন্ন দপ্তর থেকে বছরে বিপুল পরিমান রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। রেলওয়ে লোকোসেড থেকে বিভিন্ন সম্পদ পাচার, পার্শ্বেল ও বুকিং অফিসে দূর্নীতি, জংশন বাজারে অবৈধ ভাবে সরকারী জায়গা-জমি পুকুর কম মূল্যে ইজারা প্রদান, চোরা পথে রেলের স্লীপার, গাছসহ রেল সম্পদ পাচারে কতিপয় অসাধু ব্যাক্তির তৎপরতা, জংশনের সবগুলো কলোনীতে চোরাচালান, মাদকসহ অসামাজিক কার্যকলাপে অপরাধী চক্রের আখড়া খানায় পরিনত হয়েছে। এসবের পিছনে হরেক রকম শ্রমিক সংগঠনের নামে ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতি, জিআরপি পুলিশ, আনসার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের মাসিক টোকেন ব্যবসা অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে।
স্থাণীয় রেলকর্মচারীদের একটি অংশের জনৈক কর্মকর্তা জানায়, এদিকে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেমনি ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্যে বিভিন্ন সেক্টরে লুট পাটে ব্যস্ত তেমনি তাদের মদদদাতা স্থানীয় একটি বিশেষ মহলে অবৈধভাবে সরকারী অর্থ অপচয় ও আত্মসাতের মহোৎসব চালাচ্ছে। রেলের সার্বিক প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগীয় দপ্তরে নিয়মনীতির কোন বালাই নেই। রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মাঝে মধ্যে এসবের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালালেও কিছূ দিনপর পুনরায় সাবেক পরিস্থিতিতে ফিরে আসে। যা গত ১০ বছরে বিভিন্ন ফাইল খোঁজলেই রেলওয়ের বিভাগীয় দপ্তর গুলোর অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসবে। বিশেষ করে রেলওয়ে বুকিং কাউন্টার, যাত্রী পারাপারে গেইট ও পেনশান ভোগীদের দূর্ভোগসহ জংশনের বিভিন্ন কলোনীতে পরিত্যাক্ত বাসা ও অবৈধভাবে জোর পূর্বক বাসা ভাড়া দিয়ে, অবৈধ বিদ্যুৎ-গ্যাস লাইন সংযোগ ও কারেন্ট হিটার বসিয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে ব্যবহার করে সরকারী অর্থ ফাঁকি দিচ্ছে এবং কলোনী গুলোতে বিভিন্ন অপরাধী কর্মকান্ডের ফলে আন্তজেলা অপরাধী চক্রের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে।
এব্যাপারে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সার্বিক প্রশাসনের আন্তরিকতা অতি মূখ্য হলেও তাদের দায়িত্বহীনতায় তা আজ অনেকটা অনিশ্চিত। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও বিভিন্ন অপরাধী সেন্ডিকেটের সদস্যরা স্থানীয় কোন না কোন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের সদস্য। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ একটু আন্তরিক হলে লাকসাম রেলওয়ে জংশনের অনেক অজানা তথ্য বের হয়ে আসবে বলে এলাকার জনমনে অভিযোগ উঠেছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত রেলওয়ে জংশনের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা মুখ খুলতে নারাজ। তবে তারা পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেন।