হামলায় গুরুতর জখম বৃদ্ধ দম্পতির মামলা নিচ্ছেন না শিবগঞ্জের ওসি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:১১ এএম, ২ জানুয়ারী,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০১:১৮ এএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
জমি নিয়ে বিরোধে বৃদ্ধ হুমায়ুন আলী (৬৫) ও তার স্ত্রী রূপামী বেগমকে (৫৭) নির্দয়ভাবে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে গ্রামেরই প্রভাবশালী একটি চক্র। গত ১২ ডিসেম্বর সকালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের ইনাতটোলা গ্রামে ঘটে এ ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা।
হামলায় রূমালী বেগমের একটি পা ভেঙে গেছে। ৮ দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থেকে বাড়ি ফিরলেও অজ্ঞাত কারণে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা নেননি শিবগঞ্জ থানার ওসি। অসহায় এ বৃদ্ধ দম্পতি হামলাকারীদের অব্যাহত হুমকির মুখে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। এদিকে ছেলেসন্তান না থাকায় দম্পতির জামাই আনিসুর রহমান বাবু প্রায় প্রতিদিনই থানায় ঘুরছেন। ওসি বলছেন মামলা হবে। কিন্তু গত ২০ দিনেও মামলা রেকর্ড করেননি ওসি। হতাশ পরিবারটি বুঝে উঠতে পারছেন না মামলা নিতে পুলিশের এমন অনীহার কী কারণ আছে।
অন্যদিকে হামলাকারীরা বুক ফুলিয়ে ঘুরছে গ্রামে। বুড়োবুড়িকে শেষ করে দেয়ার কথাও প্রকাশ্যে বলে বেড়াচ্ছে। এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগী দম্পতির জামাই আনিসুর রহমান অভিযোগে বলেন, গত ১২ ডিসেম্বর সকালে নিজের বসতভিটার পেছনে কয়েকটি মেহগনি গাছে পানি দিচ্ছিলেন রূমালী বেগম। তাদের প্রতিবেশী সাত্তার ও আফসাররা বাঁশ কেটে কঞ্চি ফেলে রেখেছিলেন হুমায়ুন আলীর জায়গাতে। স্ত্রী রূমালী বেগম সেই কঞ্চিগুলো কিছুটা সরিয়ে দেন তাদের জায়গা থেকে। এতেই ভীষণভাবে ক্ষিপ্ত হয়ে সাত্তার, আফসার, সাত্তারের ছেলে সেলিম, আফসারের ছেলে তারিকুল ও তাদের আত্মীয় দানেশ মল লোকজনসহ এসে রূমালী বেগমকে প্রথমে লাথি-কিল-ঘুষি ও পরে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর জখম করে। খবর পেয়ে স্ত্রীকে বাঁচাতে ছুটে যান বৃদ্ধ হুমায়ুন আলী। হামলাকারীরা তাকেও বেধড়ক মারপিট ও বেদম লাঠিপেটা করে। এ সময় হুমায়ুন আলীর মাথা ফেটে রক্তাক্ত জখম হন। স্ত্রী রূমালী বেগমও গুরুতর জখম হন।
হামলাকারীরা তাদের সেখানেই ফেলে রেখে বীরদর্পে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এদিকে প্রকাশ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটলেও গ্রামের কোনো মানুষ সাহস করে বৃদ্ধ দম্পতিকে উদ্ধারে এগিয়ে আসতে পারেননি। খবর পেয়ে জামাই আনিসুর রহমান আধাঘন্টা পর গ্রামে এসে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানে আট দিন চিকিৎসা শেষে ১৯ ডিসেম্বর দম্পতিকে ছাড়পত্র দেয়া হয়। হাসপাতালের ছাড়পত্রে বৃদ্ধ হুমায়ুন আলীর মাথায় গুরুতর জখম ও রূমালী বেগমের বাম পায়ের একটি হাড় ভেঙে যাওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৩ ডিসেম্বর হুমায়ুন আলী বাদী হয়ে হামলাকারীদের ৬ জনের নাম উল্লেখ করে শিবগঞ্জ থানায় এজাহার পাঠান। এজাহার জমা নিয়ে শিবগঞ্জ থানার ওসি ফরিদ উদ্দিন থানার এএসআই নুরুল ইসলামকে প্রাথমিক তদন্তের দায়িত্ব দেন। এএসআই নুরুল পরদিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে ওসিকে প্রতিবেদন দেন। দম্পতি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে মেডিকেল রিপোর্ট জমা দেন থানায়।
এর পরও ওসি আজ শুক্রবার এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হামলার শিকার দম্পতির এজাহারটি মামলা আকারে রেকর্ড করেননি। ঘটনার ২০ দিনেও আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা না হওয়ায় চরম আতঙ্ক আর নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন ওই দম্পতি। হামলাকারীরা তাদের প্রাণে শেষ করে ২০ লাখ টাকা খরচ করবেন বলেও ঘোষণা দিয়ে বেড়াচ্ছে। বিষয়টি সম্পর্কে এএসআই নুরুল বলেন, ‘আমি প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা রয়েছে জানিয়ে ওসিকে প্রতিবেদন দিয়েছি। মামলা করার বিষয়টি ওসি সাহেবের এখতিয়ার হওয়ায় আমার কিছু করার নেই।’
অন্যদিকে ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে অভিযোগে বলেন, শিবগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি যোগদানের পর থেকে অনেক গুরুতর অভিযোগের ঘটনাতেও মামলা নিতে অনীহা দেখিয়ে আসছেন। ফলে ভুক্তভোগী লোকজন প্রতিকার ও ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে এমন হামলার ঘটনাও বাড়ছে।