লাকসাম পৌর নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৬টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দিতায়
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৪১ পিএম, ১ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৫৪ এএম, ১ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
দেশব্যাপী অদৃশ্য ভাইরাস করোনার প্রভাব থাকলেও সম্প্রতি নির্বাচন কমিশন স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্তের পরপরই লাকসাম পৌর এলাকায় বেজে উঠেছে নির্বাচনী ঢামাঢোল। কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতাকে চাঙ্গা করতে বিরোধীদল তৃনমূলকে কৌশল হিসাবে এ পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারী দল মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সকল আয়োজন সম্পূর্ন করলেও এ পৌর নির্বাচনে গত ৩১ ডিসেম্বর মনোনয়ন পত্র জমার শেষ দিন গেলেও ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে ৬টি ওয়ার্ডেই বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সাধারণ কাউন্সিলর ও ৩টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে অন্য কোন প্রার্থী না থাকায় বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে। মেয়র প্রার্থীসহ কিছু কিছু ওয়ার্ডে শাসকদলের ফাঁদাফাঁদে বিরোধীদল শেষ পর্যন্ত যদি টিকে থাকতে পারে সে ক্ষেত্রে ভোটের ফলাফল অন্য রকম হওয়া বিচিত্রের কিছু নয় বলে অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।
সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, লাকসাম পৌরসভার এ গুরুত্বপূর্ন নির্বাচনের দিনক্ষন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রার্থীদের দূরচিন্তাও বাড়ছে। এ নিয়ে ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে বাড়ছে আভ্যন্তরিন চাপা ক্ষোভ। গত কয়েক বছর যাবত বিরোধীদল সরকারের নানাহ রোষানলে পড়ে হামলা-মামলার শিকার হলেও এ পৌরসভা নির্বাচনকে তারা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছে বলে ধারনা করছেন অনেকেই। তাই শাসকদল ও স্থানীয় প্রশাসনের সার্বিক কর্মকান্ডের প্রতি নজর একটু বেশী রাখছেন দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে সকল প্রার্থীদের দৌড়ঝাপও ততই বাড়ছে। এবার এ নির্বাচনে ৯টি ওয়ার্ডে পুরুষ/মহিলা ৪৮ হাজার ৮০৯ জন ভোটার ২১ কেন্দ্রের ১৪০টি ভোট কক্ষে ভোট প্রদান করবে। বাছাই ৩রা জানুয়ারী ২০২১ ও প্রত্যাহার ১০ জানুয়ারী ২০২১ নির্ধারিত দিন ধার্য্য হলেও আগামী ৩০ জানুয়ারী ২০২১ ভোট প্রদান করতে ভোটাররা অনেকটা প্রস্তুত।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, লাকসাম পৌরসভার এ নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের নানাহ কর্মকান্ডের পাশাপাশি চলছে এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে চুল ছিড়া হিসাব নিকাশ ও নানাহ সমীকরন। বর্তমান সরকারের এ নির্বাচন ইভিএম পদ্ধতি নয়া পদক্ষেপে স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও এ পৌর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে ফলে এ নির্বাচনে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের গুরুত্ব আগের চেয়ে অনেকটা বেড়ে গেছে। তবে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও স্থাণীয় প্রশাসনের সার্বিক ভূমিকা নিয়ে অনেকটা সংকিত সাধারণ ভোটাররা। বিশেষ করে সকল প্রার্থীরা ইতিমধ্যে পৌরবাসীকে শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানিয়ে পোষ্টার, ব্যানার ও ফেষ্টুন লাগাচ্ছেন শহরের অলিগলিতে।
স্থানীয় বিভিন্ন সূত্রগুলো আরও জানায়, এ নির্বাচন ঘিরে আবার কেউ কেউ দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিজ নিজ ব্যানারে টানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যোগ দিচ্ছেন এলাকার বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, দলীয় অনুষ্ঠান এবং ঘুরছেন আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ী। পৌরশহরের ৯টি ওয়ার্ডের অলিগলি, পাড়া-মহল্লায়, সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও চায়ের দোকানে চলছে এ পৌর নির্বাচন নিয়ে আলোচনার ঝড়। এ পর্যন্ত প্রার্থীদের মধ্যে মেয়র পদে শাসকদলের অধ্যাপক আবুল খায়ের ও বিরোধীদল বিএনপির বেলাল রহমান মজুমদার প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। এ ছাড়া পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে অন্য কোন প্রার্থী না থাকায় আওয়ামীলীগের একক দলীয় প্রার্থী ১নং ওয়ার্ড ডাঃ মোহাম্মদ উল্যাহ, ২নং ওয়ার্ডে আলহাজ্ব খলিলুর রহমান, ৩নং ওয়ার্ডে এডভোকেট মাসুদ হাসান, ৪নং ওয়ার্ডে আব্দুল আজিজ, ৮নং ওয়ার্ডে মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও ৯নং ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রাব্বানী এবং ৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে নাছিমা আক্তার, নাছিমা সুলতানা ও মোশফেকা আলম মিতা বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার পথে রয়েছে। এছাড়া ৫নং ওয়ার্ডে শাসকদলের মন্সুর আহমেদ মুন্সি ও ইসলামী ফ্রন্টের আবুল কাশেম, ৬নং ওয়ার্ডে শাসকদলের আবু সায়েদ বাচ্চু, বিএনপির আবুল হোসেন বাবুল ও বেলায়েত হোসেনসহ মোট ৬ জন প্রার্থী এবং ৭নং ওয়ার্ডে শাসকদলের শাহজাহান মজুমদার এবং সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সোহেল আরমান প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানায়, দেশের সংবিধানে গনতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরন এবং সেই লক্ষে প্রতিটি স্তরের স্থানীয় সরকারী প্রশাসনকে নিজ নিজ ক্ষমতা বলে পরিপূর্ন স্বাধীনতা প্রদান ও পূর্ন ক্ষমতায়নের নির্দেশনা থাকলেও বাস্তব পরিস্থিতিতে কী দেখছি এটা কিন্তু সবার জানা। স্থানীয় সরকারের কাজে বহু অন্তরায় থাকা শর্তেও নানাহ সৃজনশীল স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করা সম্ভব। অনিয়ম, দূর্নীতি, অনাচার, অবিচার, তদবীরবাজ ও চাঁদাবাজির মহোৎসব চালাতে প্রতিক্রিয়াশীল ও সাম্প্রদায়িক মনোভাবাপন্ন ব্যাক্তিরা স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে জয়লাভ করলে গনতন্ত্রের ভবিষ্যত আরও মারাত্মক ঝুকিতে পড়বে।