কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চলের হাটে বিষাক্ত কেমিক্যালে তৈরি হচ্ছে মিষ্টি জাতীয় খাবার
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:১৬ পিএম, ১ জানুয়ারী,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:২০ পিএম, ১৪ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
কুমিল্লা দক্ষিনাঞ্চল জুড়ে ৫টি উপজেলায় বিভিন্নস্থানে যত্রতত্র ভাবে নোংরা পরিবেশ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরী মিষ্টি জাতীয় ভেজাল খাবারের কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব কারখানা নোংরা পরিবেশ ও বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরী হচ্ছে হরেক রকম ব্র্যান্ডের মিষ্টি, দধি, রসমালাই ও আইসক্রীম। অথচ এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দপ্তর কর্মকর্তারা নিরব।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, বিগত ৮/৯ মাস যাবত দেশব্যাপী অদৃশ্য ভাইরাস করোনার মধ্য দিয়েও ব্যবসায়ীরা জেলার দক্ষিনাঞ্চল উপজেলাগুলোর বিভিন্ন হাট বাজারে স্থাপিত বেশ কয়েকটি মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরীর দোকান কিংবা শো-রুম এবং কারখানা গড়ে উঠলেও তাদের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। পরিবেশ, বিএসটিআই, শ্রম মন্ত্রনালয়, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিভাগের কোন প্রত্যায়ন পত্র নেই। অথচ এসব অবৈধ কারখানায় নোংরা পরিবেশে প্রতিনিয়ত তৈরী হচ্ছে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত, ভেজাল মিষ্টি জাতীয় হরেক রকম খাবার। ওইসব ব্যবসায়ীরা কুমিল্লা তথা দেশের নামী-দামী মিষ্টি জাতীয় খাবার প্রতিষ্ঠানের মোড়ক, কৌটা ও প্যাকেট নকল করে নিজেদের উৎপাদিত ভেজাল পন্যগুলো প্রতারনার মাধ্যমে বিক্রি ও পাচার করে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। গাভীর দুধ ২/৩ দিন পর ফরমালিন জাতীয় বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রন করে দুধ থেকে ছানা তৈরী করে মিষ্টি জাতীয় খাবার দোকানে সরবরাহ করে আসছে।
সুত্রগুলো আরও জানায়, গতবছর এসময়ে স্থানীয় প্রশাসনের ভেজাল বিরোধী অভিযান চলাকালে বেশ ক’টি মিষ্টি তৈরী কারখানার খাবারে ফরমালিনের মাত্রা পায় ২.৬৭। যা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সর্বচ্চো মাত্রা। এসব মিষ্টি জাতীয় ভেজাল খাবার তৈরীতে কারখানাগুলোর পানির হাউজে শেওলা, আর্সেনিক যুক্ত, অপরিছন্ন পরিবেশ, ধুলোবালু যুক্ত, চিনির পরিবর্তে সেকারিন, দুধের বিপরীতে বিষাক্ত রাসায়নিক পাউডার, নারিকেলের পরিবর্তে দানাযুক্ত সাদা ভূষি, আটা-ময়দা, মিথানিল, মিথানল, সোডা, এ্যমুনিয়া, ফরমালিন জাতীয় দ্রব্য ও কালার রং, দুধে-ছানায় পানি সহ বিভিন্ন বিষাক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার হচ্ছে।
অন্য দিকে কোন মিষ্টি জাতীয় খাবার তৈরীর কারখানায় অভিজ্ঞ কেমিষ্ট কিংবা দক্ষ টেকনিশিয়ান এবং পোষাক নেই। পানি শোধনাগার, পরীক্ষা-নিরীক্ষা সরঞ্জাম কিংবা আর্সেনিকমুক্ত কোন বিজ্ঞানাগার নেই। এসব কারখানাগুলোতে শিশু-শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি যা শ্রম আইনের পরিপন্থি। তাদের কোন প্রশিক্ষন কিংবা পরিক্ষীত কোন সরঞ্জাম দেয় না মালিক পক্ষ। এ ছাড়া ক্যামিকেল ব্যবহার ও প্রয়োগে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কোন বৈজ্ঞানিক ধারনাও নেই ওই খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের।
অপরদিকে বেশকটি বেসরকারী অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের জরিপ অনুসারে এ অঞ্চলের প্রায় ৯৮ ভাগ টিউবওয়েল আর্সেনিকযুক্ত এবং ৫৬ ভাগ টিউবওয়েল মলযুক্ত। এপর্যন্ত লাকসামে সাড়ে ৫ হাজার ও মনোহরগঞ্জে প্রায় ৪ হাজার, নাঙ্গলকোটে সাড়ে ৩ হাজার, সদর দক্ষিণে ৩ হাজার দুইশ ও বরুড়া উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৮’শ আর্সেনিক রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। তাদের মতে জেলার দক্ষিনাঞ্চলের ৫টি উপজেলার প্রায় আড়াই শতাধিক গ্রাম আর্সেনিকের কবলে পড়লেও ৪ উপজেলার প্রায় ১১৭টি গ্রাম রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। তারপরও ভেজাল ও নিম্নমানের খাবার খেয়ে স্বাস্থ্য ঝুঁকি দিন দিন আরো বেড়ে চলেছে।
এ ব্যাপারে জেলা-উপজেলা স্বাস্থ্য দপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট একাধিক প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের মুঠোফোনে বার বার চেষ্টা করেও তাদের কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।