‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো’-তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩১ পিএম, ২৯ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০১:৪৯ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো দাবি করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, আমরা একটি বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বসবাস করি। বহুমাত্রিক সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান বিষয় হচ্ছে স্বাধীন মত প্রকাশ। আমাদের দেশে যেভাবে সবাই মত প্রকাশ করতে পারে, অনেকে বিশ্বাস করবেন না; এটি অনেক উন্নত দেশের চেয়ে ভালো। গণমাধ্যমে যেভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়, অনেক দেশেই তা সম্ভব হয় না।
আজ মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে আজকের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সব সময় লক্ষ্য করেছি, যখন দেশে বা পৃথিবীতে কোনো সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন একটি মহল ওৎ পেতে থাকে কীভাবে সেটিকে কাজে লাগিয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা যায়, ভয়ভীতির সঞ্চার করা যায়। তারা মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করে। করোনাকালেও শুরুতে সে চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু সেটার বিরুদ্ধে এবং গুজব যাতে ছড়াতে না পারে সে জন্য মূলধারার গণমাধ্যম শক্ত হাতে বলিষ্ঠভাবে যত্নশীল ছিল। সে কারণে করোনাকালে গুজব কিংবা মিথ্যা সংবাদ কাজে আসেনি; স্বার্থান্বেষী মহল বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। এ জন্য গণমাধ্যমের সাথে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, আমরা এই করোনাকালে লক্ষ্য করেছি, দেশ যখন স্তব্ধ হয়ে গেছে, সবকিছু প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে তখন সাংবাদিকদের খবর বন্ধ হয়নি, রিপোর্টারদের রিপোর্ট সংগ্রহ বন্ধ হয়নি। রাষ্ট্রের চারটি স্তম্ভের একটি গণমাধ্যম। সেটি যদি সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে, তাহলে কিন্তু রাষ্ট্রের ভিত্তি নষ্ট হয়। সেটি মাথায় রেখেই গণমাধ্যম কর্মীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে এবং তাদের সুবিধা-অসুবিধায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এগিয়ে এসেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচনাকে সমাদৃত করার সংস্কৃতি চালু করেছেন মন্তব্য করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আজকে দেখবেন বিএনপির ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব প্রতিদিন সকাল বেলায় কড়া ভাষায় সরকারের সমালোচনা করেন। আবার সেটার সাথে প্রতিযোগিতা করে দুপুরে রিজভী আহমেদ আরেকটি সংবাদ সম্মেলন করেন। পাশাপাশি প্রেসক্লাবে গিয়ে গয়েশ্বর বাবু আরেকবার একটি বক্তৃতা দিয়ে বলেন, আমাদের কথা বলার অধিকার নাই!
তিনি বলেন, প্রতিনিয়ত সরকারের বিষোদগার করা হচ্ছে, আবার তারা বলছেন তাদের কথা বলার অধিকার নেই। আজকে টেলিভিশনের টকশোগুলোতে সরকারকে কী ভাষায় সমালোচনা করা হয়। আমরা মনে করি এই সমালোচনা থাকতে হবে। এই সমালোচনা না থাকলে গণতন্ত্রের সৌন্দর্য থাকবে না।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম-সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
তিনি বলেন, করোনার কঠিন সময়ে এক দিনের জন্যও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব বন্ধ ছিল না। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নেতারা সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি সদস্যদের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। করোনা মহামারির মধ্যেও বর্তমান কমিটি ক্লাবের সবগুলো সভা সঠিকভাবে অনুষ্ঠানের চেষ্টা করে গেছে।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আলী বলেন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের বর্তমান কমিটির ১১ মাস দায়িত্ব পালনকালে সরকারের পক্ষ থেকে প্রায় ৩০ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। এসব টাকা করোনাকালে সংগঠনের সদস্যদের মাঝে বণ্টন করা হয়েছে।
এ সময় তিনি বর্তমান কমিটির প্রশংসা করে বলেন, বর্তমান কমিটি নিরলস চেষ্টা করে গেছে প্রেসক্লাবের জন্য। করোনা মহামারির মাঝেও ২৭টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সবগুলো সভা কোনো ধরনের বিতর্ক ছাড়াই শেষ হয়েছে।
মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা সাংবাদিকরা সমাজের জন্য বিজ্ঞাপন হতে চাই। আগামীতে যে নির্বাচন সেটিতে আমরা পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা ও সহমর্মিতা রেখেই অনুষ্ঠান করতে চাই।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সহ-সভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশ বিপদমুক্ত নয়। স্বাধীনতাবিরোধীরা এখনো মাঝে মধ্যে ফণা তোলার চেষ্টা করছে। তাই দলীয় বিভক্তির ঊর্ধ্বে উঠে সব সাংবাদিককে এক কাতারে আসতে হবে।
ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, করোনাকালে আমরা আমাদের তিনজন বন্ধুকে হারিয়েছি। আজকের সম্মেলন থেকে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব হলো বাংলাদেশের সর্বপ্রথম নিজস্ব ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত প্রেসক্লাব। ১৯৬২ সালে এটি নিজস্ব ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই প্রেসক্লাবকে যারা আজ এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন তাদের আমাদের স্মরণ রাখতে হবে; বিশেষ করে মরহুম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে।
আরেক সাবেক সভাপতি কলিম সারওয়ার বলেন, বিশ্বে এত বড় ক্রান্তিকাল আগে কখনো আসেনি। পুরো বিশ্ব একসাথে এত বড় বিপদে পড়েনি। এর মাঝেও আজকের দ্বিবার্ষিক সম্মেলন অনেক বেশি উচ্ছ্বাসের পাশাপাশি কিছুটা ভয়েরও।
তিনি বলেন, ৩২ বছর আগে ভিশনারি লক্ষ্য নেয়া হয়েছিল বলেই আজ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ১০ তলা ভবন নিজস্ব ভূমিতে দাঁড়িয়ে আছে। তিনি প্রেসক্লাবকে পুরোপুরি স্বাবলম্বী করতে তথ্যমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা, সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ম. শামসুল ইসলাম ও ক্লাবের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মিন্টু চৌধুরীসহ সদস্যরা।