শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে উত্তর-পশ্চিমের মানুষ : তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রির নিচে
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৫ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৪:৪৭ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
শৈত্যপ্রবাহে কাঁপছে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ। তাপমাত্রা নেমেছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। শীতের এ সময় বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় সাইবেরিয়া অঞ্চলের ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা লাগে। সামান্য ঝাপটাতেই ওই এলাকার মানুষের মধ্যে কাঁপন ধরে যায় আবহাওয়া শুষ্কতা বেশি থাকে বলে। ওই অঞ্চলে শীতের কাঁপুনির সাথে শুষ্কতা যোগ হওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে বলে আমাদের সংবাদদাতারা জানিয়েছেন। গত দুই দিন থেকে বিরাজমান মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ প্রান্তিক আয়ের মানুষের আর্থিক সঙ্কট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনাভাইরাসের বর্তমান এই পরিস্থিতিতে যখন তারা অর্থনৈতিক দীনতায় ভুগছেন ঠিক এ সময়ে গরম কাপড় কিনতে গিয়ে অবশিষ্ট সম্বলটাও খরচ করে ফেলতে হচ্ছে অনেককে।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রংপুর বিভাগের জেলাসহ গোপালগঞ্জ, শ্রীমঙ্গল, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের ওপর দিয়ে আজো মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। ঠান্ডার এ মাত্রা আগামী মঙ্গলবারের আগে শেষ হবে না। মঙ্গলবারের পর থেকে ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সরে যেতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
অবশ্য দেশের মধ্যাঞ্চলের দিকে শৈত্যপ্রবাহ কিছুটা কম থাকে ভূপ্রকৃতির বৈশিষ্ট্যের কারণে। ফলে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল যখন শীতে কাঁপে তখন ঢাকা বিভাগের কয়েকটি অঞ্চল ছাড়া অবশিষ্ট অঞ্চলে তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় থাকে। রবিবার রাজধানীতে সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৫.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অপরদিকে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে রাজশাহীতে ছিল সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল শীতাকুন্ডে ২৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে তুলনামূলকভাবে বেশি শুষ্ক আবহাওয়া বিরাজ করে। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পেছনে এই শুষ্কতাও দায়ী থাকে। কারণ বাতাসে আর্দ্রতা না থাকলে পরিবেশ ক্রমে ঠান্ডা হয়ে যায়। এ কারণে ঠান্ডা অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে শরীরে আর্দ্রতাযুক্ত কোনো কিছু যেমন তেল অথবা ময়েশ্চারাইজারযুক্ত ক্রিম মাখালে আরাম বোধ হয়। এ কারণে শীতকালে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ময়েশ্চারাইজারযুক্ত নানা ধরনের ক্রিম অথবা পেট্রোলিয়াম জেলি অথবা সরিষার তেল বেশি বিক্রি হয়ে থাকে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক জানিয়েছেন, শীতের এ সময় সাইবেরিয়া অঞ্চল থেকে প্রচন্ড ঠান্ডা বায়ু ওপর দিকে বয়ে যায়। এ সময় বায়ুর উচ্চচাপের কারণে ওপর থেকে ঠান্ডা হাওয়া কিছুটা নিচে আসতে থাকে। বাংলাদেশের আকাশে বয়ে যাওয়া ওই ঠান্ডা বায়ু (জেট উইন্ড) স্বাভাবিক উচ্চতার চেয়ে যত বেশি নিচে নেমে আসবে এখানে তত বেশি ঠান্ডা অনুভূত হবে। সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত ঊর্ধ্বাকাশের ওই জেট উইন্ড অপেক্ষাকৃত নিচে নেমে আসে বায়ুমন্ডলে উচ্চচাপ থাকে বলে। তবে আকাশে মেঘ থাকলে ঠান্ডা এ বায়ু প্রবাহ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। ফলে বায়ুমন্ডল উষ্ণ হতে শুরু করে।
বর্তমানে যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তা শেষ হতে পারে আরব সাগরের দিক থেকে জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ু বাংলাদেশের আকাশে চলে এলে। আরব সাগরের বায়ু এলে আকাশে মেঘ দেখা দেয়া ছাড়াও ঘন কুয়াশায় ঢেকে যেতে পারে ভূউপরিস্থিত এলাকা। কুয়াশা ও মেঘের কারণে নিচে জমে থাকা গরম হাওয়া আটকে যায় এবং পরিবেশের ঠান্ডা অবস্থা দূর হয়ে যায়। আজ মঙ্গলবারের পর বর্তমান শৈত্যপ্রবাহের কিছুটা উন্নতি ঘটতে পারে। কিন্তু জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আবারো আরেকটি শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়বে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল।