সিলেটে পরিবহন মালিক-শ্রমিকের চাপে বন্ধ বিআরটিসি বাস সার্ভিস
সিলেটে বিআরটিসি বাস কাউন্টার ভাঙচুর, লুটপাট-উত্তেজনা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৪ এএম, ২৮ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ১১:৫১ এএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
সিলেটের দক্ষিণ সুরমার হুমায়ুন রশীদ চত্বর এলাকায় বিআরটিসি বাসের কাউন্টার ভাঙচুর করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। হামলাকারীরা হবিগঞ্জ বাস মালিক সংগঠনের শ্রমিক।
আজ রবিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনাটি ঘটে। এসময় হামলাকারীরা বিআরটিসির ম্যানেজার জুলফিকার আলীকে মারধর করে কাউন্টার থেকে ল্যাপটপ ও সাড়ে ১২ হাজার, ১টি আইফোন নিয়ে যায়। বিআরটিসি বাসের কাউন্টার ভাঙচুর, লুটপাট করা হলেও বাস চলাচল অব্যাহত থাকবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বিআরটিসি বাস কাউন্টারের কন্ট্রাকটার জুমেল আহমদ। তিনি জানান, দীর্ঘদিন থেকে হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতিসহ অন্যরা হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গল রোডে বিআরটিসি বাস যাতে করে চলাচল না করে সেজন্য তারা অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। রবিবার সিলেট থেকে বিআরটিসির একটি বাস শ্রীমঙ্গলে যাত্রী নিয়ে যাওয়ায় শ্রমিকদের নিয়ে বিআরটিসি বাস কাউন্টারে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিআরটিসি বাসের শ্রমিকরা জানান, হামলার নেতৃত্ব দেন হবিগঞ্জ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক পলাশ আহমদ। এসময় পলাশের সাথে ছিলেন মানিক আহমদ, সবুজ মিয়া, মুক্তা আহমদ, কাশেম মিয়া, শ্রমিক নেতা রুনু মিয়া, আব্দুল মুহিম, মানিক মিয়া। খবর পেয়ে দক্ষিণ সুরমা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।
সিলেটে পরিবহন মালিক-শ্রমিকের চাপে বন্ধ বিআরটিসি বাস সার্ভিস: উদ্বোধনের ৫ দিনের মাথায় বন্ধ হলো সিলেট-হবিগঞ্জ সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিস। গতকাল রবিবার সকাল থেকে ওই সড়কে বিআরটিসি বাস চলতে দেননি বাস পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। তারা একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো এবং চালক-হেলপারকে মারধর করে গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছেন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার সকাল ৯টায় মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল থেকে একটি বাস ছেড়ে আসার কথা থাকলেও শ্রমিকদের হুমকির মুখে বন্ধ রাখা হয়। এরপর হবিগঞ্জ থেকে আরেকটি বাস ছাড়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা চালক-হেলপারকে মারধর ও গাড়ির পেছনের গ্লাস ভাঙচুর করে। পরে যাত্রী ছাড়াই দুই বাস ফেরত আনা হয়। বিআরটিসি বাস সার্ভিস সিলেট ডিপো ব্যবস্থাপক জুলফিকার আলী বলেন, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জ থেকে দুটি বাস চলতে গেলে শ্রমিকরা পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। এরপরও খালি বাসগুলো নিয়ে আসার পথে চালক-হেলপারকে মারধর করা হয় এবং গাড়ির পেছনের গ্লাস ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, যেখানে সেতুমন্ত্রী ওই দুটি সড়কে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল বাস সার্ভিস চালুতে। সারাদেশে ২২টি ডিপোতে ৫৭০টি বাসের মধ্যে সিলেট ডিপোতে সর্বনিম্ন ৩০টি নতুন বাস নামানোর কথা ছিল। সেখানে এ দুটি সড়কে পর্যায়ক্রমে ১২টি বাস নামানোর কথা। কিন্তু ২টি বাস চালু করেই মালিক-শ্রমিকদের তোপের মুখে বন্ধ করতে হচ্ছে। অথচ মন্ত্রী মহোদয় বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেছেন।
সিলেট বিভাগীয় বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল কবীর পলাশ বলেন, আমরা দেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে পরিবহন সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু বিআরটিসি বাস চালুর আগে কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে বসেনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন কি না, তাই আমাদের জানা নেই। আমরা মনে করি, এটা তারা চালাকি করছে। তবে গাড়ি ভাঙচুরের কথা অস্বীকার করেন তিনি।
সিলেট বাস, মিনিবাস, কোচ পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন কমিশনার ও কার্যকরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. গোলাম হাফিজ লোহিত বলেন, সিলেট থেকে আন্তঃজেলা বিআরটিসি বাস চলাচলে শ্রমিকরা বাধা দিচ্ছে না। মূলত বিভাগীয় সড়ক ৯০ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর মধ্যে সিএনজি অটোরিকশায় লোকাল বাস সার্ভিসের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। তার ওপর আবার বিআরটিসি বাস চলবে, তাতে বাস মালিক-শ্রমিকরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে। তাছাড়া নানাভাবে সৃষ্ট জটিলতার মধ্যেও আলোচনা না করেই বিআরটিসি বাস নামানোর নেপথ্যেও ঠিকাদাররা জড়িত আছেন বলে মনে করেন তিনি।
গত মঙ্গলবার (২২ ডিসেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ভিডিও কনফারেন্সে সিলেট-শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ রুটে বিআরটিসি বাস সার্ভিসের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ দুই সড়কে বাস সার্ভিস চালু হওয়ার পেছনে ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনেরও। উদ্বোধনের পর আবেগাপ্লুত হয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাতে ভুলেননি। কিন্তু উদ্বোধনের ৫ দিনের মাথায় বন্ধ হলো বাস সার্ভিস।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিআরটিসি সিলেট ডিপোতে ৩০টি নতুন বাস রয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ রুটে ৪টি, সিলেট ভোলাগঞ্জ সড়কে একটি এবং সম্প্রতি নতুন করে সিলেট-শ্রীমঙ্গল ও হবিগঞ্জ সড়কে প্রথম অবস্থায় দুটি বাস নামানো হয়। পর্যায়ক্রমে ১২টি বাস নামানোর কথা ছিল। বাসগুলো সিলেটের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল কদমতলী থেকে দুই রুটে প্রতিদিন চলাচল কথা ছিল।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসগুলোতে সিলেট-মৌলভীবাজার-শ্রীমঙ্গল রুটের ভাড়া যথাক্রমে ২৩৫ টাকা (শ্রীমঙ্গল) ও ১৮০ টাকা (মৌলভীবাজার) এবং সিলেট-হবিগঞ্জ রুটের এসি গাড়ির ভাড়া ২৭৭ টাকা। তবে শীতকালীন সিলেট-হবিগঞ্জ রুটের এসি বাসের ভাড়া নেয়া হবে ১৮০ টাকা ও মৌলভীবাজারে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা ও শ্রীমঙ্গল পর্যন্ত ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা পর্যন্ত নেয়ার পরিকল্পনা ছিল বিআরটিসি কর্তৃপক্ষের।