তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারাদেশে গণপরিবহন বন্ধ : ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩১ এএম, ৬ নভেম্বর,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৭ পিএম, ১২ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো, দিনকাল জানায়, পূর্ব ঘোষণা ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বন্ধ রয়েছে বেশিরভাগই গণপরিবহন। শহর থেকে ছেড়ে যায়নি কোনো দূরপাল্লার বাস। সে সাথে চলছে না কোনো আন্তঃপরিবহন। যদিও বা ঘোষণা ছিল শুধু পণ্যপরিবহনের ট্রাক-কাভার্ডভ্যান বন্ধ থাকবে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরসহ আশপাশের বিভিন উপজেলার মানুষ। এ সুযোগে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ নিচ্ছে প্রাইভেটকার, সিএনজি অটোরিকশাগুলো। পরিবহন সংকট ও বাড়তি ভাড়ার খপ্পরে পড়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিরুপায় যাত্রীরা। তবে গতকাল শুক্রবার হওয়ায় যাত্রী সংখ্যা অন্যদিনের তুলনায় কম ছিল। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।
আজ শুক্রবার সরেজমিনে নগরের দেওয়ানহাট, ঈদগাঁ, অলংকার মোড়, একে খান মোড় ঘুরে দেখা যায়, নগরের বিভিন্ন রুটে কিছু সবুজ টেম্পু চললেও তারা আদায় করছে বাড়তি ভাড়া। সে সাথে পরিবহন সংকটে বিপাকে পড়েছে শত শত মানুষ। নিরুপায় হয়ে কেউ পিকআপ বা ট্রাকে, কেউ বাইকে আবার কেউ বা প্রাইভেটকারে ছুটে চলেছেন গন্তব্যে।
নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আবু তাহের বলেন, ঈদগা থেকে অলংকার ভাড়া নেয় ৮ টাকা। আজ সে ভাড়া নিয়েছে ১০ টাকা। এভাবে জ্বালানি তেলের দাম হঠাৎ করে বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানেই হয় না।
পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়ি মিরসরাইয়ের বারৈয়ারহাট যেতে চান সোহরাব হোসাইন। তিনি বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে আমার আম্মা খুব অসুস্থ। ভোরে হঠাৎ খবর আসায় পরিবার নিয়ে বাড়ি যেতে হচ্ছে। কিন্তু কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। আর প্রাইভেটকার যে ভাড়া দাবি করছে সেটা আমার পোষাবে না। এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও যাওয়ার কোনো ব্যবস্থা করতে পারিনি।’
কুমিল্লা যাবেন বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ নাসির। তিনি বলেন, ‘আমাকে জরুরি প্রয়োজনে কুমিল্লা যেতে হবে। ৪০ মিনিট ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো বাস পাইনি। প্রাইভেটকারগুলো জনপ্রতি হাজার টাকা দাবি করছে। এটাতো আমাদের মতো সাধারণ মানুষের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।’
নগরীর একে খান এলাকার শ্যামলী, সৌদিয়াসহ বিভিন্ন দূরপাল্লার বাস কাউন্টারে খবর নিয়ে জানা গেছে, সকাল থেকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার উদ্দেশে ৬টি বাস যাওয়ার কথা থাকলেও সবগুলো বাতিল করা হয়েছে। পরিবহন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও দিয়েছে বাস কর্তৃপক্ষ। এদিকে কাউন্টারগুলো থেকে কোনো তথ্য না জানানোর কারণে বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। সে সাথে বন্ধ রয়েছে অধিকাংশ দূরপাল্লার বাস কাউন্টার।
এদিকে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের কর্মবিরতির মধ্যেও নগরজুড়ে চলছে সোনার বাংলা ও মেট্রো প্রভাতী। গুটিকয়েক লোকাল বাস চলতে দেখা গেছে। তবে বরাবরের মতো বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ তো আছেই।
ধর্মঘট : চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য পরিবহন বন্ধ
জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সব পণ্য আনা-নেয়া বন্ধ রেখেছেন পরিবহন মালিকরা। এই ধর্মঘটের কারণে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে বন্ধ রয়েছে পণ্য ডেলিভারির কাজ। তবে পণ্য ডেলিভারি না হলেও জাহাজ থেকে পণ্য ওঠানামা চলমান আছে।
আজ শুক্রবার ভোর থেকে বন্দরে পণ্য খালাসের কোনো গাড়ি ঢুকতে বা বের হতে দেখা যায়নি।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্দরের ভেতরে সব কাজ স্বাভাবিকভাবেই চলছে। তবে বাইরের কোনো গাড়ি চট্টগ্রাম বন্দরের ভেতরে আসছে না। বন্দর থেকে পণ্য নিয়েও কোনো গাড়ি বের হচ্ছে না।
তিনি আরও বলেন, শুক্রবার এমনিতেই গাড়ি কম বের হয়। তবে ধর্মঘট চলমান থাকলে বন্দরের ওপর এর প্রভাব পড়বে।
গত বুধবার রাতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা দেয়া হয়। নতুন দাম ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা করা হয়। যা কার্যকর করা হয় ওইদিন রাত ১২টা থেকে।
এ নিয়ে গত বৃহস্পতিবার পরিবহন খাতের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়। ডিজেল-কেরোসিনের বর্ধিত দাম প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলেও জানান তারা।
সিলেট অফিস জানায়, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে ও বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার উদ্যোগে আজ শুক্রবার সিলেট নগরীতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার আহবায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়ের সভাপতিত্বে ও সদস্য মুখলেছুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার অন্যতম সদস্য এডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে সরকার। গত বুধবার হঠাৎ করেই সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং যা রাত থেকেই কার্যকর করে। বরাবরের মতোই আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধিকে অজুহাত হিসেবে দেখানো হয়েছে। বাংলাদেশে বছরে মোট যে জ্বালানি ব্যবহার করা হয় তার ৭৩ শতাংশই ডিজেল। সড়ক ও নৌপরিবহন, কৃষির সেচ পাম্প এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অনেক ক্ষেত্রেই ডিজেলের ব্যবহার হয়। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, এর ফলে যানবাহনের ভাড়া বাড়বে। কৃষিপণ্য উৎপাদনে খরচ বাড়বে, বিদ্যুতের মূল্যও আবারও বাড়বে। পণ্য পরিবহনের খরচ বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দামও বাড়বে। ফলে সরকারের এই সিদ্ধান্ত জনস্বার্থবিরোধী। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকেই একের পর এক গণবিরোধী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জনগণের ন্যূনতম ভোটাধিকার পর্যন্ত হরণ করেছে। দেশে ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম করেছে। তাই কার্যত এদেশে জনগণের মতামতের আর কোনো তোয়াক্কা করতে হয় না। তাই যখন যা খুশি, মালিক শ্রেণির স্বার্থে তাই করতে পারে। এই অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদসহ এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের গণআন্দোলন গড়ে তোলা ছাড়া আর কোনো পথ নেই।
কুমিল্লা প্রতিনিধি জানান, আজ শুক্রবার সকাল ৭টা। কুমিল্লা নগরীর শাসনগাছা বাসস্ট্যান্ড। কাকডাকা ভোর থেকে যেখানে সরগরম থাকে। আজ শুধুই নীরবতা। চালক ও হেলপারদের হাকডাক নেই। নগরীর চকবাজার ও জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডের অবস্থাও একই রকম।
তবে বাসস্ট্যান্ডে ব্যাগ-বইপত্র নিয়ে অস্থিরতায় এদিক-ওদিক ছুটাছুটি করতে দেখা যায় বেশ কয়েকজন চাকরি নিয়োগ পরীক্ষার্থীকে। পাশাপাশি রয়েছেন অন্যান্য যাত্রীরাও।
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক গতকাল থেকে চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে মালিক ও পরিবহন শ্রমিকরা।
তবে আগে থেকে বুকিং থাকায় কিছু ট্রাক- কাভার্ডভ্যান চললেও নতুন ভাড়ায় কেউ নিচ্ছে না পণ্য পরিবহনও। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে কোথাও গণপরিবহন চলাচলের দৃশ্য চোখে না পড়লেও দেখা গেছে পণ্যবাহী যানবাহনের চলাচল। এদিকে অনানুষ্ঠানিক ধর্মঘটের বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক যাত্রীই ভিড় করেছেন বিভিন্ন বাস টার্মিনাল ও মহাসড়কের পাশে বাসস্ট্যান্ডগুলোতে। বাস না পেয়ে অধিক ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। সময়মত গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে না পারায় পরীক্ষাসহ জরুরি কাজে অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।
দিপু আসহান। আজ তিনি ৭টি ব্যাংকের গুচ্ছ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন। রাতভর লেখাপড়া করেছেন। তাই জানেন না যাত্রীবাহী বাস আজ সড়কে চলাচল করে না।
আফসোস নিয়ে দিপু বলেন, ‘আমার আর আজ নিয়োগ পরীক্ষা দেয়া হলো না। কত প্রস্তুতি নিয়েছি। কত আশা ছিল। তা আর পূরণ হলো না।’
আফসোস নিয়ে দিপু বলেন, বাস মালিক সমিতি স্ট্রাইক করছে। পরীক্ষা কমিটি চাইলে পরীক্ষাগুলো স্থগিত করতে পারতো। সব ভোগান্তি আমাদের।
শুধু ব্যাংক নয় আজ সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত অন্তত ১৯টি দফতরের নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
তাই সাধারণ যাত্রীদের পাশাপাশি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের ভিড় বেশি।
নগরীর জাঙ্গালিয়া বাসস্ট্যান্ডে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় দূরপাল্লার বাস। ধোয়ামোছা চলছে। এছাড়া আর কোনো কাজ নেই।
বেশ কয়েকজন হেলপারকে দেখা যায় বাসের মধ্যে বসে অলস সময় পার করতে। মো. ছাব্বির নামে বাসের একজন চালক জানান, মালিকের নিষেধ। তাই আজ বাস চালাবেন না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায় দেখা যায়, মহাসড়কে বাস ও ট্রাক নেই। মাইক্রোবাসগুলোতে উপচে পড়ছে যাত্রী।
পদুয়ার বাজার থেকে ঢাকা যেতে অন্তত দু ঘন্টা সময় লাগে। নিয়মিত ভাড়া ২শ টাকা।
তবে আজ বাস বন্ধ। তাই জনপ্রতি ৪০০-৫০০ টাকা ভাড়া গুনছেন মাইক্রোবাস চালকরা। তবে স্থানভেদ ভাড়া আরো বেশি নেয়ারও অভিযোগ রয়েছে।
মোতাহের হোসেন মাইক্রোবাসে করে ঢাকা যাচ্ছেন। তাকে বহন করা মাইক্রোবাসে আরো ৯ জন যাত্রী আছেন। সবাই ৫শ টাকা করে মোট ৫ হাজার টাকায় মাইক্রো ভাড়া করেন।
মোতাহের হোসেন জানান, গেল সপ্তাহে তার ভাই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আজ তার একটি অপারেশন হবে। তাই আজই তাকে ঢাকায় যেতেই হবে। বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে ঢাকা যাচ্ছেন।
পদুয়ার বাজার এলাকার মাইক্রোবাস চালক অহিদ মিয়া বলেন, ‘ভাই হুনেন, ভাড়া একটু বেশি। কিন্তু মাইনষের উপকারই হয়। যারা বিপদে আছে তারারে জিগান, তারা নিজেরাই ৫শ টেকা দিতে রাজি হইছে।’
কবে নাগাদ এ ভোগান্তি কমবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
কুমিল্লা জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি অধ্যক্ষ কবির আহমেদ জানান, ‘জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় কেন্দ্রীয়ভাবে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আমরা সংবাদ সম্মেলনে সব জানিয়েছি। জ্বালানি তেলের দাম কমলে আশা করি সড়কে আমাদের পরিবহনগুলো আবারো চলাচল করবে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবেন আমাদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ।’
হিলি প্রতিনিধি জানান, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ ট্রাক-বাস মালিক অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা ধর্মঘটের কারণে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে সারাদেশের ন্যায় দিনাজপুরের হিলিতেও বাস-ট্রাক শ্রমিকদের ধর্মঘট চলছে। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা।
এদিকে আজ সকাল থেকে পণ্যবাহী কোনো ট্রাক পণ্য বোঝাই নিয়ে বন্দর ছেড়ে যায়নি।
ড্রাইভাররা জানান, ‘সরকার একবারে ১৫ টাকা প্রতি লিটারের তেলের দাম বৃদ্ধি করেছে। হঠাৎ করে তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে মালিকরা বাস, ট্রাক রোডে নামাতে নিষেধ করেছেন। সেই জন্য আমরা গাড়ি বন্ধ করে রেখেছি।’
নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, ডিজেলসহ সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে নোয়াখালীতে অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে।
আজ শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় এই ধর্মঘট। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাপুর পৌর বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুরসহ বিভিন্ন রুটের দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে ও ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ লোকজন। অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোতে রিকশার পাশাপাশি সীমিত আকারে ব্যাটারি ও গ্যাসচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে।
বাস চলাচল বন্ধ থাকায় অটোরিকশা ও সিএনজির চালকরা দ্বিগুণ ভাড়া ছাড়া যাত্রী নিচ্ছেন না। ফলে জরুরি প্রয়োজনে যারা শহরের বাইরে যাবেন বা আসবেন তাদের দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হচ্ছে।
জেলা শহর মাইজদী থেকে চৌমুহনীর ভাড়া ২০-২৫ টাকা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া নিচ্ছেন সিএনজির চালকরা। শহর থেকে সোনাপুর পর্যন্ত সিএনজির ভাড়া ১০ টাকা হলেও দ্বিগুণ ভাড়ায় যেতে হচ্ছে যাত্রীদের। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা শহরের বাইরে যেতে দ্বিগুণেরও বেশি ভাড়া চাচ্ছেন।
মোজাম্মেল নামে একজন বলেন, ‘ঢাকায় জরুরি কাজে আজ যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাল গণমাধ্যমে জানতে পারলাম আজ সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘট চলবে। ধর্মঘট শেষ হওয়া ছাড়া যাওয়ার উপায় নাই।’
চেয়ারম্যানঘাট থেকে চট্টগ্রাম যাবেন বলে এসেছিলেন রফিক নামে একজন। এসে দেখেন বাস চলাচল বন্ধ। তিনি বলেন, ‘আমরা চরের মানুষ। বাস বন্ধের কথা জানতাম না। এখন ফিরে যেতে হলে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যেতে হবে। কারণ চেয়ারম্যানঘাট রুটের চলাচলকারী বাসও বন্ধ রয়েছে।’
শুধু ঢাকা, চট্টগ্রাম নয় নোয়াখালীর সাথে ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, চাঁদপুর, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে বিভিন্ন জেলার মানুষ নোয়াখালী আসতে পারছে না। তেমনই মানুষ অন্যান্য জেলায় যেতেও পারছে না।
ঢাকা-নোয়াখালী রুটের চলাচলকারী একুশে পরিবহনের চেয়ারম্যান অহিদ উদ্দিন বলেন, ‘হঠাৎ করে ডিজেলের দাম বাড়ল। সংগঠনসমূহের সিদ্ধান্তে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। করোনার কারণে প্রায় দেড় বছরেরও বেশি সময় আমরা লোকসান দিয়েছি। এখন তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। তেলের বর্ধিত দামের সাথে সমন্বয় করে ভাড়া নির্ধারণ করা হবে তিনি আশাবাদী।’
নোয়াখালী-চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সাকের বলেন, ‘সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমাদের এই ধর্মঘট। যতদিন সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সাথে পরিবহন নেতাদের সমন্বয় না হবে ততদিন এই ধর্মঘট চলবে। তবে আমরা আশা করছি, খুব দ্রুত একটা সমাধান আসবে।’
স্টাফ রিপোর্টার, সাতক্ষীরা জানান, আকস্মিক গত বুধবার রাত থেকে প্রতি লিটার ডিজেলের মূল্য ১৫ টাকা বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল থেকে সাতক্ষীরায় দূরপাল্লার পরিবহন, আন্তঃজেলা পরিবহন, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যানসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ ও পরিবহন শ্রমিকরা।
সাধারণ যাত্রীরা জানান, আগে থেকে ঘোষণা না দিয়ে হঠাৎ করে সরকার ডিজেলের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় পরিবহন ও বাস মালিকরা শুক্রবার সকাল থেকে গণপরিবহনসহ সকল ধরনের পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে তারা বিপাকে পড়েছেন। বাড়তি টাকা দিয়ে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে হচ্ছে। এদিকে ইজিবাইক ও মহেন্দ্রযোগে গন্তব্যস্থলে পৌঁছানোর চেষ্টা করলেও এতে পরিবহন শ্রমিকদের বাধার কারণে সমস্যায় পড়ছেন বলে জানান তারা।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, ডিজেলের দাম বাড়ানো হলেও সরকার পরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত না নেয়ায় মালিকপক্ষ গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। এতে তাদের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়বে।
ঈগল পরিবহনের সাতক্ষীরা কাউন্টারের ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম জানান, ডিজেলের দামের পাশাপাশি ভাড়া না বাড়ানোয় তারা পরিবহন চলাচল বন্ধ রেখেছেন। পরিবহন মালিক সমিতির পরবর্তী সিদ্ধান্ত না পাওয়া পর্যন্ত তারা পরিবহন বন্ধ রাখবেন।
সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি জানান, সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন না থাকায় কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী, নিয়োগ পরীক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েছে। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সাভারে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ‘ধর্মঘটে’ আটকে পড়ার প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের স্নাতক শ্রেণির ভর্তিচ্ছু পরীক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে এই বিক্ষোভ করেন তারা। এ সময় তাদের আকস্মিক এ কর্মসূচিতে যোগ দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত সাত ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ গ্রহণকারীরাও। পরে একে একে তাদের সাথে একাত্মতা জানায় সাধারণ সড়ক ব্যবহারকারীরাও। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে পরিবহন শ্রমিক-মালিকদের ডাকা ধর্মঘটে কলেজ ভর্তিচ্ছু এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা সকাল থেকেই বিপাকে পড়েন।
আব্দুল বাতেন নামের এক ঢাকাগামী যাত্রী জানান, ঢাক-আরিচা মহাসড়কে যানবাহন সংকটে আটকে পড়া কলেজ ভর্তিচ্ছু এবং নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা সকালে প্রবেশপত্র হাতে নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এক পর্যায়ে নিজেরাই ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড ও ফুলবাড়ীয়া স্ট্যান্ডে অবরোধ গড়ে তোলেন। এতে মহাসড়কে ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে সড়কের দুপাশে আটকা পড়ে অসংখ্য যানবাহন। এই বিক্ষোভে সাধারণ যাত্রীরাও অংশগ্রহণ করেছে।
মিরপুর বাঙলা কলেজে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী আবরার হোসেন জানান, ‘আজ শুক্রবার ভোর বেলায় আমি ভর্তি পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হয়ে প্রথমে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এসে কোনো গাড়ি পাইনি। পরে কোনো উপায় না পেয়ে রিকশাযোগে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের এসে দেখতে পাই আমার মতো অনেকেই মহাসড়কে যানবাহনের অপেক্ষায়। এক পর্যায়ে দীর্ঘ সময় অবস্থানের পর ক্ষোভে আমরা নিজেরাই মহাসড়ক অবরোধ শুরু করি। পরে আমাদের সঙ্গে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ছাড়াও মহাসড়কে সাধারণ যানবাহনে যাতায়াতকারীরা যোগ দেন।’
স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ জানান,
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে সারা দেশে মতো ঝিনাইদহের বিভিন্ন রুটে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু হয়েছে। ফলে সকাল থেকে ঝিনাইদহের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ বিভিন্ন মালামাল ও যাত্রী পরিবহন বন্ধ রয়েছে। যানবাহন বন্ধ থাকায় দূরপাল্লার যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। জ্বালানি তেলের বর্ধিত এ দাম না কমানো পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে বলেও পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আজ শুক্রবার সকালে শহরের বাস টার্মিনাল, আরাপপুর, বাইপাস সড়ক, চুয়াডাঙ্গা স্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লা ও স্থানীয় রুটের কোনো জ্বালানি তেলবাহী যানবাহন। এমনকি পরিবহনের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ। এদিকে শহরের বিভিন্ন বাসস্টান্ডে সকাল থেকেই ভিড় দেখা গেছে ঢাকা, কুষ্টিয়া, খুলনা, ফরিদপুরসহ বিভিন্ন গন্তব্যগামী যাত্রীদের।
অনেককে দেখা গেছে, পায়ে হেঁটে কিংবা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে গন্তব্যে যেতে। রুহিনী কুমার রায় নামে এক যাত্রী জানান, চিকিৎসার জন্য এক আত্মীয়কে নিয়ে তিনি যশোর যাবেন। কিন্তু এসে শুনতে পান বাস ধর্মঘটের কথা। এখন কোথায় যাবেন, কী করবেন কিছুই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না তিনি।
আজ শুক্রবার দুপুরে ঝিনাইদহ বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন সাফিয়া বেগম।
তিনি বলেন, ‘অসুস্থ ভাইকে দেখতে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছি। স্ট্যান্ডে এসে শুনি বাস চলাচল বন্ধ। এখন ব্যাগ আর দুই বাচ্চাকে নিয়ে বিপদে পড়েছি।’
পুরান ঢাকার বাসিন্দা মারুফ হোসেন জানান, ‘ঝিনাইদহে আত্মীয় বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলাম। এখন ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য বাস টার্মিনালে এসে দেখি যানবাহন চলাচল বন্ধ। এখন কি করে ঢাকায় ফিরবো বুঝতে পারছি না।’
মিরাজ নামের অপর এক যাত্রী জানান, ‘ঢাকায় একটি স্কুলের ভ্যান চালান। কালকের মধ্য পৌঁছাতে হবে। কিন্তু কোনো বাহন পাচ্ছি না।’
ঝিনাইদহ জেলা বাস-মিনিবাস পরিচালনা কমিটির সাবেক সভাপতি রোকনুজ্জামান রানু জানান, ডিজেলের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। কিন্তু সরকার এখনও দাম কমানোর বিষয়ে আমাদের সাথে কোনো কথা বলেনি। তাই দাম না কমা পর্যন্ত এ ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।’