রংপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে নিহত ১, বিক্ষুব্ধ লোকজনের থানায় হামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:০৮ পিএম, ২ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৪৬ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
রংপুরের হারাগাছে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানের সময় তাজুল ইসলাম নামের এক মাদকসেবীর মৃত্যুর ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। বিক্ষুব্ধ লোকজন পুলিশের পিটুনিতে হত্যার অভিযোগ এনে থানা ঘেরাও করে ব্যপক ভাঙচুর করেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ, রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল ছোড়ে। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ থানায় নিয়ে আসে। এই সংঘর্ষে ৫ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় ২০ জন আহত হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মাদকসেবন ও অসুস্থ থাকায় অভিযান চালানোর সময় লোকটি মারা গেছে। এ ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল সোমবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় হারাগাছ মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি দল পৌরসভার দরদী স্কুলের পাশে বিশেষ মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। এ সময় সেখানে মারা যান পাশের পাইকার পাড়া এলাকার ৫২ বছর বয়সী তাজুল ইসলাম।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, পুলিশের আভিযানিক দল তাজুল ইসলামকে আটকের পর তাকে হ্যান্ডক্যাফ লাগায়। পরে তার মাথায় কনুই দিয়ে আঘাত করলে তিনি পাশের দেয়ালে ছিটকে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। এই ঘটনার পরপরই উত্তেজিত হয়ে উঠে জনতা। তারা মিছিল নিয়ে হারাগাছ থানা ঘেরাও করে। বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল ছোড়া হয় থানায়। ভাঙচুর করা হয় পৌরসভার সামনে রাখা পুলিশের পিকআপ ভ্যানসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রংপুর থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ নিয়ে যাওয়া হয় ঘটনাস্থলে। নিয়ে যাওয়া হয় সাঁজোয়া যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশও বিপুলসংখ্যক রাবার বুলেট টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। করে লাঠিচার্জ। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে পৌর এলাকাজুড়ে। পুলিশ দোকানপাটসহ সব কিছুই বন্ধ করে দেয়।
উত্তেজিত লোকজনকে থামাতে পৌর মেয়র এরশাদুল হকও নামেন রাস্তায়। ৫ ঘণ্টা পর রাত ১২টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ ঘটনাস্থল থেকে থানায় আনে। পরে সেখানে পৌর মেয়র, স্বজনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেন। বৈঠকের পর থানায় লাশের সুরুত হাল রিপোর্ট তৈরির পর রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।
এদিকে স্বজনদের অভিযোগ, লাশ নিয়ে যাওয়ার জন্য পুলিশ সেখানে নির্বিচারে লাঠিচার্জ এবং রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এতে বহু মানুষ আহত হয়েছেন।
তবে প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনদের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ। রাত ১টায় রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান চলার সময় পুলিশের তালিকাভুক্ত ও একাধিক মাদক মামলার আসামি তাজুল ইসলামকে (৫২) আটক করা হয়। তিনি নিয়মিত হেরোইন সেবন করতেন। এ কারণে অসুস্থ ছিলেন। পুলিশ তাকে আটক করা মাত্রই তিনি পায়খানা-প্রস্রাব করে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তখন পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।
এই ঘটনাকে পুঁজি করে একটি স্বার্থান্বেষী মহল লোকজনেক উসকানি দিয়ে থানায় ভাংচুর চালায়। ইটপাটেকল নিক্ষেপ করে। এতে থানা এবং যানবাহনসহ অনেক ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এছাড়াও তাজুল নিহতের ঘটনায় একটি অপমৃত্যু এবং থানায় হামলা ভাংচুর ও সরকারি কাজে বাধা দেয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। তবে কতজন গ্রেফতার করা হয়েছে তা তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি জানিয়ে হারাগাছ পৌরসভার মেয়র এরশাদুল হক এরশাদ বলেছেন, ঘটনাটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। কী ঘটনা হয়েছে লাশের ময়নাতদন্ত ছাড়া সেটি বোঝা যাবে না। তবে প্রশাসন আমাদের আশ্বস্ত করেছে যা ঘটুক না কেন তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি হারাগাছ পৌরবাসিকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়াও তিনি বলেন, ঘটনার পর মানুষ আবেগপ্রবণ হয়ে থানায় হামলা করেছে। তিনি প্রশাসনের কাছে এজন্য পৌরবাসীর পক্ষ থেকে ক্ষমা চেয়ে তারা যেন হয়রানির মুখে না পড়েন সেই আহবানও জানিয়েছেন।