না’গঞ্জ জেলা আ’লীগের দু নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কেন্দ্রে চিঠি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৪ এএম, ২১ ডিসেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৮:৫৩ এএম, ১৫ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জ জেলা আ’লীগের দু শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে দলের হাইকমান্ড আ’লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বরাবর চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এর আগে জেলা আ’লীগের অপর আরও ৪ নেতাকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে সতর্ক বার্তাও দেয়া হয়েছে।
আ’লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু ও জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি আরজু রহমান ভূইয়ার বিরুদ্ধে দলের ভিতরে উপদল সৃষ্টির চেষ্টাসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে। যা অতি গুরুতরভাবে নেয়া হচ্ছে বলে জেলার শীর্ষ একাধিক নেতার সূত্রে জানা গেছে। আর এজন্য দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ হবে বলে জানিয়েছেন ওই নেতারা। এদিকে একটি সূত্র মতে, শনিবার আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর আনিসুর রহমান দিপু ও আরজু রহমান ভূইয়ার সাম্প্রতিক বিভিন্ন কর্মকান্ডের ফিরিস্তি কেন্দ্রে জমা দেয়া হয়েছে। চিঠিতে তাদের দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের নানান প্রমাণপত্রও সংযুক্ত করা হয়েছে। ওই চিঠির অনুলিপি একই সাথে পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ডা. দিপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আযম ও দফতর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার কাছেও। অন্যদিকে জেলা আ’লীগ কমিটির অপর ৪ নেতা- সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান, সহ-সভাপতি আধিনাথ বসু, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক মো. ইসহাক ও কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মো. সাদিকুর রহমানকে একই কারণে সতর্ক বার্তা পাঠানো হয়েছে।
কেন্দ্রে পাঠানো পৃথক দুটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যে মুহূর্তে আমরা স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে লড়াই করছি, ঠিক সেই মুহূর্তে দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টি করে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন আনিসুর রহমান দিপু ও আরজু রহমান ভূইয়া। জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপেক্ষা করে আনিসুর রহমান দিপু বেশ কিছু দিন যাবৎ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে জেলা আ’লীগের ব্যানারে আলাদা কর্মসূচি পালন করছেন। গত ৮ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙচুরের প্রতিবাদে আমরা জেলা আ’লীগ প্রতিবাদ মিছিল করি ও স্থানীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করি। ঠিক সেদিনই জেলা আ’লীগের ব্যানারে বিকাল ৪ টায় আনিসুর রহমান দিপুর নেতৃত্বে পৃথক বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবসেও আনিসুর রহমান দিপুর সভাপতিত্বে জেলা আ’লীগের ব্যানারে পৃথক কর্মসূচি পালন করা হয়। একই ভাবে ১৬ ডিসেম্বর জেলা আ’লীগের ব্যানারে আরজু রহমান ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে পৃথক একটি আলোচনা সভাও অনুষ্ঠিত হয়েছে। আর পৃথক ৪টি সতর্ক বার্তায় উল্লেখ করা হয়, নিজ নিজ পদে থেকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করছেন। এই ধরণের গঠনতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ড দলের জন্য ক্ষতিকর। আ’লীগের গঠনতন্ত্রের ৪৭ (ক) ধারায় আপনার বর্তমান কর্মকান্ড গঠনতন্ত্র বিরোধী অপরাধ। স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে যে মুহূর্তে আমরা রাজপথে লড়াই করছি, ঠিক সেই মুহূর্তে দলের মধ্যে উপদল সৃষ্টি করা থেকে বিরত থাকার জন্য আপনাদের সতর্ক করা হলো।
উল্লেখ্য, জেলা আ’লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আ’লীগ স্বাধীনতা বিরোধী দল বলায় তৃণমূলে ক্ষোভ সৃষ্টি হতে থাকে। পরিবেশ শান্ত রাখতে কেন্দ্রীয় নেতাদের পরামর্শে জেলা আ’লীগ ২৩ নভেম্বর দল থেকে অব্যাহতি দেন অভিযুক্ত জাহাঙ্গীর আলমকে। এই ঘটনায় মুখ না খুললেও পরবর্তীতে অভিযুক্ত ওই ৬ নেতাসহ কয়েকজন জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে উপেক্ষা করতে শুরু করেন। তারা জেলা আ’লীগের ব্যানারে বিদ্রোহী গ্রুপ হিসেবে নানা কর্মসূচি পালন করতে থাকে। তাতে, ৭৩ সদস্যের জেলা আওয়ামী লীগের অন্যসব সদস্যরাসহ জেলার উপজেলা-থানা ও বিভিন্ন ইউনিটের নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। তৃণমূলসহ শীর্ষ নেতারা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে দাবি জানাতে থাকেন সংশ্লিষ্টদের। অনেকেই মনে করছেন, এখনই যদি দলে শৃঙ্খলা ফেরানো না যায়, ভবিষতে এর অনেক জের টানতে হবে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগকে।