নালিতাবাড়ীতে ঘরবাড়ীর মালামাল লুট হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:২৫ পিএম, ২৬ সেপ্টেম্বর,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:২৩ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর,সোমবার,২০২৪
শেরপুরের নালিতাবাড়ীতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের সংঘর্ষে ১ জন নিহত হওয়ায় আসামী গ্রেফতারের পর বাদী পক্ষের লোকজন আসামীদের বসত বাড়ীতে হামলা চালিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দক্ষিণ বনকুড়া গ্রামে। এতে তিনটি পরিবার খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।
আজ রবিবার সরেজমিনে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও এলাকাবাসী সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার নন্নী ইউনিয়নের দক্ষিণ বনকুড়া গ্রামে গত ২৪ আগষ্ট সাহেব আলী (৪০) ও শাহ আলীর (৪০) পরিবারের মাঝে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষেই বেশ কয়েকজন আহত হয়। পরদিন ২৫ আগষ্ট ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আহত সাহেব আলী মারা যান। এ ঘটনায় শাহ আলীকে প্রধান আসামী করে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা হলে পুলিশ ৪ জনকে গ্রেফতার করে। বাকি আসামীরা গ্রেফতারের ভয়ে বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে থাকার সুযোগে বহিরাগত ও বাদী পক্ষের বনকুড়া গ্রামের সুমন মিয়া, স্বপন মিয়া, রহিম উদ্দিন, সুজন মিয়া, সাইফুল ইসলাম বাচ্চু, আহসান আলী ও নিশ্চিতপুর গ্রামের রাসেল মিয়া, সোহাগ মিয়া, জালাল উদ্দিন এবং আব্দুল গফুর মিলে আসামীদের ৩টি পরিবারের ৮টি বসতঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করে। এসময় তাদের বাড়ীতে থাকা ১৭টি গরু, ৫টি ছাগল, ৩০০ মন ধান, ১টি ল্যাপটব, ২টি ফ্রিজ, ৩টি খাট, নগদ ১ লাখ টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণের গহনা, হাঁস-মুরগী ও পুকুরের মাছসহ প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল লুটতরাজ করে নিয়ে যায়।
আসামী পক্ষের শাহ আলী, আসমত আরা, মর্জিনা বেগম, রহিতন নেছা বলেন, আমরা গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামিনে ছাড়া পেয়ে বাড়ীতে এসে দেখি প্রতিপক্ষরা ভাংচুর ও লুটপাট করে ঘরের আসবাবপত্রসহ সকল মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বর্তমানে শিশুসহ ৩টি পরিবারের ২০ জন সদস্য অনাহারে-অর্ধাহারে, ধারদেনা ও অন্যের বাড়ীতে চেয়ে চিন্তে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছি। এমনকি ভিক্ষা করেও পেটের ক্ষুধা নিবারন করছি। নিহতের ঘটনায় আইন ও বিচারে যা হবে তা আমরা মেনে নেব। কিন্তু আমাদের অর্থ সম্পদ লুটপাটের বিষয়টি মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর সুষ্ঠু বিচার চাই।
শাহ আলীর কন্যা প্রত্যক্ষদর্শী সাবিনা ইয়াসমীন (১৯) বলেন, আমার চোঁখের সামনে তারা আমাদের ঘরের জিনিসপত্র, গরু-ছাগল ও পুকুরের মাছ ধরে নিয়ে গেছে আমি জানের ভয়ে কিছু বলতে পারি নাই।
ওই এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম, সিরাজুল ইসলাম, প্রতিবেশী মেহের আলী, মোতাহার আলী, রমিছা বেগম, খাদিজা বেগম জানান, লুটপাটের ঘটনাটি সত্য। নিহতের ঘটনায় পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর বাকীরা বাড়ী ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ায় বাদী পক্ষের লোকজন ও বহিরাগতরা তাদের মালামাল লুটতরাজ করেছে। তারা জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ীতে এসে কিছুই পায়নি। বর্তমানে আসামীরা খাদ্য সংকটসহ মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। আমরা প্রতিবেশীরা সাধ্য মতো চাল-ডাল দিয়ে সহযোগীতা করছি।
এদিকে, লুটপাটের সাথে জড়িত থাকার ঘটনা অস্বীকার করে সাইফুল ইসলাম বাচ্চু ও আহসান আলী বলেন, আসামীরা পুর্ব শত্রুতার জেরে ও মামলা থেকে বাঁচতে আমাদের নামে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
এ ব্যাপারে নন্নী ইউপি চেয়ারম্যান একেএম মাহবুবুর রহমান রিটন বলেন, সাহেব আলী নিহত হওয়ার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আইন অনুযায়ী বিচার হবে। তবে আসামী শাহ আলীদের ঘর বাড়ীতে হামলা চালিয়ে লুটপাট করার ঘটনাটি ন্যাক্কারজনক ও অমানবিক। আমাদের সকলের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত।