আইনজীবী সমিতির জমির লিজ বাতিল হলে আইনি পদক্ষেপ : আইনজীবী সমিতি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৪৫ পিএম, ২১ সেপ্টেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ১১:১১ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
পরীর পাহাড়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতিকে দেয়া ১৩ শতক জমির লিজ বাতিল হতে পারে। ১৯৭৭ সালে সম্পাদিত লিজ দলিলের শর্ত লংঘনের অভিযোগে দলিলটি বাতিল করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। জেলা আইনজীবী সমিতির সাথে সম্পাদিত লিজ দলিলের শর্তগুলো নিয়ে শুরু করা হয়েছে অনুসন্ধান। গত ৪৪ বছর ধরে লিজ দলিলের শর্তগুলো একের পর এক লংঘিত হওয়ায় দলিল বাতিলের সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও সূত্র জানিয়েছে। অপরদিকে লিজ মূলে নেয়া ভূমির চেয়ে বাড়তি কোন ভূমি আইনজীবী সমিতি দখলে নিয়েছে কিনা, লিজ নেয়া এবং বাড়তি দখলে রাখা ভূমিতে ভবন নির্মাণে জেলা প্রশাসনের অনুমোদন নেয়া হয়েছে কিনা এসব বিষয় নিয়েও শুরু হয়েছে বিশ্লেষণ। গতকাল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাংবাদিক সম্মেলনের পরই জেলা প্রশাসন লিজ দলিলের খুঁটিনাটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। অবশ্য চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতি বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে দাবি করেছে, লিজ দলিলের শর্তসমূহ যথাযথভাবে পালন করা হয়েছে এবং আইনজীবী সমিতি কোন ধরনের অনিয়ম করেনি।
সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামের পরীর পাহাড়ে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত ১১.৭২ একর জায়গা রয়েছে। চট্টগ্রাম আদালত ভবনসহ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু অফিস রয়েছে পরীর পাহাড়ে। আদালতের অপরিহার্য অংশ হিসেবে আইনজীবীদের চেম্বার ভবন নির্মাণের জন্য উক্ত ১১.৭২ একর ভূমি থেকে ১৯৭৭ সালে ১২.৯০ শতক ভূমি লিজ দেয়া হয়। জেলা আইনজীবী সমিতি ১৪৮৮৮ নং দলিল মুলে এই ভূমি লিজ নেয়। ১২.৯০ শতক ভূমি লিজ দেয়ার সময়ও বেশ কিছু শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। এসব শর্তের(৭নং শর্ত) মধ্যে অন্যতম ছিল লিজ গ্রহিতা ওই ভূমিতে কোন গর্ত বা অবকাঠামো নির্মাণকালে জেলা প্রশাসকের অনুমতি নিতে হবে। ২ নম্বর শর্তে বলা রয়েছে, বছরে ২ টি কিস্তির মাধ্যমে কালেক্টর তথা জেলা প্রশাসককে ভাড়া পরিশোধ করতে হবে। শুধু তাই নয় লিজ দলিলটির ৩ নং শর্তে উল্লেখ রয়েছে যে, লিজ গ্রহিতা তথা আইনজীবী সমিতি যদি সেই ১২.৯০ শতক জমির রেন্টের কোন কিস্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে বকেয়া ভাড়ার উপর ৬.২৫ শতাংশ হারে সুদসহ বকেয়া টাকা পরিশোধ করতে হবে। আইনজীবী সমিতি সেই লিজ দলিলটির ২ নং শর্ত গত ৪৪ বছর ধরে লংঘন করেছে। এক টাকার ভাড়াও পরিশোধ করেনি বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। দলিলটির ১১ নং শর্ত অনুযায়ী জেলা প্রশাসকের অনুমোদিত কোন প্ল্যান ছাড়া লিজ নেয়া জমিতে কোন ধরণের ভবন/ শৌচাগার/টয়লেট নির্মাণ কিংবা কোন সংযোজন বা পরিবর্তন করা যাবে না। কিন্তু আইনজীবী সমিতি একে একে পাঁচটি বহুতল ভবন নির্মাণ করলেও জেলা প্রশাসকের কোন অনুমতি নেয়নি। লিজ দলিলের কোন শর্ত লংঘন ঘটলে লিজ গ্রহিতাকে ১১ নং শর্ত অনুযায়ী উৎখাত করা যাবে মর্মেও দলিলটিতে উল্লেখ রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানিয়েছে যে, গত ৪৪ বছরে জেলা আইনজীবী সমিতি লিজ দলিলটির শর্তগুলো একের পর এক লংঘন করেছে। শুধু লংঘনই নয়, পরীর পাহাড় অবৈধভাবে দখলে নিয়ে আইনজীবী সমিতি নিজেদের মতো করে একের পর এক ভবন নির্মাণ করেছে বলেও অভিযোগ করা হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতি মাত্র ১২.৯০ শতক জমি লিজ নিলেও ১০ গুণেরও বেশি জমি দখল করে রেখেছে বলে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বর্তমানে আইনজীবী সমিতি সর্বমোট ১ একর ৩৭ শতক জায়গার উপর ৫ টি ভবন নির্মাণ করেছে। লিজ দলিলটির তফশিলে ৫ টি আর এস দাগ যথাক্রমে আর এস দাগ নং- ২৩৫৫, ২৩৫৬ , ২৩৫৭ , ২৩৫৯ , ২৩৬০ আন্দরে ১২.৯০ শতক জমি উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সেই দলিলে আর এস ২৩৪৫ নং দাগ নেই। অথচ আইনজীবী সমিতির ‘শাপলা’ নামের ভবনটি সম্পূর্ণরূপে লিজভুক্ত তফশিলের বাইরে সরকারের ১ নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গাতে নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, লিজের ১২.৯০ শতক জমি বাদ দিলেও ১ একর ২৪ শতক জমি আইনজীবী সমিতি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে ।
তাছাড়া ১২.৯০ শতক জমির উপর আইনজীবী সমিতির মালিকানা থাকলেও সেই ১৯৭৭ সালে লিজ প্রাপ্তির পর থেকে গত ৪৪ বছর ধরে তাদের নামে কোনো রেকর্ড বা খতিয়ান তৈরি করা হয়নি। দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে কখনো ভূমি উন্নয়ন করও (খাজনা) প্রদান করেনি। আইনজীবী সমিতি নিজেদের ১২.৯০ শতক জমির মালিকানা ফিঙড করতে চায় না বিধায় কোন খতিয়ান করেনি বলেও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে।
অপরদিকে ১ম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের অপর মামলা নং- ৩৮/৯৭ এ দোতরফা সূত্রে জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে আইনজীবী সমিতির পক্ষে ডিক্রি দেয়া হয় বলে উল্লেখ করা হয়। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, ওই মোকদ্দমাটিতে ১-৩ নং বিবাদীর বিরুদ্ধে দোতরফা সূত্রে ও অন্যান্য বিবাদীর বিরুদ্ধে একতরফা সূত্রে বিনা খরচায় ডিক্রি দেয়া হয়। উক্ত মামলা মূলে ১৯৭৭ সনের ১৪৮৮৮ নং লিজ দলিলে উল্লেখিত ৫ টি আর,এস দাগের ১২.৯০ শতক জমির উপর জেলা আইনজীবী সমিতির স্বত্ব নিশ্চিত হয়। ওই দলিল নিয়ে জেলা প্রশাসনেরও কোন আপত্তি নেই। জেলা প্রশাসনের আপত্তি লিজের বাইরে দখল করা ১ একর ২৪ শতক জায়গা এবং লিজ দলিলের শর্ত।
আর এই অবস্থায় জেলা প্রশাসন লিজ দলিলটি বাতিলের চিন্তাভাবনা করছে বলেও সূত্র জানায়। লিজ দলিল বাতিল হলে পরীর পাহাড়ে জেলা আইনজীবী সমিতির আর কোন স্বত্ব থাকবে না বলেও জেলা প্রশাসনের পদস্থ ওই কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আর আমাদের হাতে নেই। সরকারি সম্পত্তির বিষয়টি আমরা সরকারকে জানিয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ থেকে পরিবেশ মন্ত্রনালয়ের সমন্বয়ে আইন মন্ত্রনালয়কে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। আইন মন্ত্রনালয় কাজ করছে। এখন সরকারই সরকারি সম্পত্তি রক্ষার বিষয়টি দেখছে’।
বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এএইচএম জিয়াউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পরীর পাহাড়ে আমাদের স্বস্ত কতটুকু আছে তা আদালত থেকে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। আমাদের পক্ষে আদালত ডিক্রি দিয়েছিল। আদালতের দেয়া চৌহদ্দির ভিতরেই আমরা রয়েছি। আমরা কোন অনিয়ম করিনি। আমাদের লিজ বাতিল কিংবা আমাদের বিরুদ্ধে অন্য যে কোন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা আইনের আশ্রয় নেবো। আইনের মাধ্যমে মোকাবেলা করবো। আইনজীবী সমিতির পাঁচটি ভবনই অনুমোদিত বলে এএইচএম জিয়াউদ্দিন উল্লেখ করেন।