ক্লিপটন গ্রুপের ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করতে ছিনতাইয়ের নাটক পিয়নের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:১৯ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৪৭ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
ক্লিপটন গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে পিয়নের চাকরির পাশাপাশি পার্টনারে করতেন গ্লাসের ব্যবসা। সেই ব্যবসায় লোকসানে পড়েন ক্লিপটন গ্রুপের পিয়ন রিপন। তাই রেলওয়ের কর্মচারী বন্ধু সেলিমের সহযোগিতায় ফন্দি আঁটেন নিজ অফিসের টাকা আত্মসাতের। পরিকল্পনানুযায়ী প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘ দিনের বিশ্বস্ততার সুযোগকে কাজে লাগান। অফিসের ১০ লাখ টাকার চেকের টাকা তুলে আত্মসাতের পর গল্প সাজান কাল্পনিক ছিনতাইয়ের। সেই গল্প কোন ছিনতাইকারীর বিরুদ্ধেও নয়; খোদ ডিবি পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশের কাছে এমন ছিনতাইয়ের গল্প বলতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেছেন পুলিশের কাছে। আত্মসাত করা ১০ লাখ টাকাসহ ক্লিপটন গ্রুপের পিয়ন রিপন ও তার বন্ধু রেল কর্মচারী সেলিম দুজনই ধরা পড়েছেন কোতোয়ালি থানা পুলিশের হাতে।
পুলিশ জানায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুর ১টার দিকে ক্লিপটন গ্রুপের হিসাবরক্ষক মো. সাহেদ নগদ ১০ লাখ টাকার চেক দিয়ে তা উত্তোলনের জন্য ব্র্যাক ব্যংকে পাঠান পিয়ন রিপনকে। তবে রিপন চেক নিয়ে ব্যাংকে গেলেও ব্যাংক থেকে বের হয়ে আর অফিসমুখী হননি। এসময় অফিসের জিএম ওয়াহিদ ব্র্যাক ব্যাংকের কাজীর দেউরী শাখায় গিয়ে পিয়ন রিপনকে খোঁজাখুঁজি করেও তার হদিস পাননি। পরে রিপনের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে না পারলে কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া তদন্তকালে জানতে পারেন পিয়ন আব্দুল রহিম ওরফে রিপন ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর আত্মগোপনে চলে যান। একপর্যায়ে রিপন নিজেই তার বাসায় গিয়ে পরিবারের লোকজনের সাথে দেখা করে এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ ও মাথায় আঘাত পাওয়ার অভিনয় করেন। তার এই অবস্থা দেখে পরিবারের লোকজন রিপনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। চমেক হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ভর্তি করাতে বলা হলে রিপনের পরিবারের লোকজন উন্নত চিকিৎসার জন্য ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এসআই ইকবাল সংবাদ পেয়ে ন্যাশনাল হাসপাতালে গিয়ে রিপনের সঙ্গে দেখা করেন। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে জানতে পারেন রিপনের শারীরিক অবস্থা ভালো। পরে হাসপাতাল থেকে তাকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। জিজ্ঞাসাবাদে রিপন জানায়, ১২ সেপ্টেম্বর ১০ লাখ টাকা উত্তোলনের পর তা জমা দিতে তিনি নুপুর মার্কেটস্থ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে যান। নূপুর মার্কেটের সামনে ডিবি পরিচয়ধারী ২ ব্যক্তি তার ওয়ারেন্ট আছে বলে জোরপূর্বক একটি সিএনজিতে তুলে নেয়।
পরবর্তীতে তাকে বিআরটিসি মোড়ে নিয়ে সিএনজির ভেতর তার কাছ থেকে মোবাইল, মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে বলে জানায়। একপর্যায়ে তাকে বায়েজিদ লিংক রোডে নিয়ে গেলে তিনি পানি খেতে চান। পানি খাওয়ার পরে রিপন অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপরের ঘটনা তার মনে নেই। পরের দিন সন্ধ্যা সাতটার দিকে জ্ঞান ফিরলে তিনি নিজেকে অলংকার এলাকার একটি ঝোপঝাড়ের ভিতরে পড়ে থাকতে দেখেন। তখন বুঝতে পারেন তিনি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন। তার কাছ থেকে ব্যাগ ভর্তি ১০ লাখ টাকা, মোবাইল ও মানিব্যাগ ডিবি পরিচয়ধারী ২ জন ব্যক্তি নিয়ে গেছে। পরে ওই এলাকার একজন বৃদ্ধের সহযোগিতায় একটি সিএনজিতে করে বাসায় ফেরেন।
তার দেওয়া এমন তথ্য বিশ্বাস করে ছায়া তদন্ত ও ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা শুরু করে পুলিশ। কিন্তু পিয়ন রিপনের কোনো তথ্য মিল পায়নি। এরপর তাকে আবারো জিজ্ঞাসাবাদ করলে একপর্যায়ে ব্যাংক থেকে তোলা নগদ ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার কথা স্বীকার করে নেয়। পরদিন তাকে আদালতের মাধ্যমে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনি এলাকায় তার বন্ধু মো. সেলিমের যোগসাজশে এ ঘটনা ঘটার কথা জানায়। তার কাছেই আত্মসাৎ করা ১০ লাখ টাকা, মানিব্যাগ ও মোবাইল ভর্তি একটি ব্যাগ রাখে রিপন। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর রেলওয়ে কলোনি থেকে টাকা, মানিব্যাগ ও মোবাইল জব্দের পাশাপাশি সহযোগী সেলিমকেও গ্রেফতার করে পুলিশ।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নেজাম উদ্দিন বলেন, ক্লিপটন গ্রুপের পিয়ন রিপন দীর্ঘদিনের কাজের বিশ্বস্ততার সুযোগকে কাজে লাগাতে এই টাকা আত্মসাতের ঘটনা ঘটিয়েছে। মূলত পিয়নের চাকরির পাশাপাশি রাজীব নামে এক ব্যক্তির সাথে দীর্ঘদিন আগে অংশীদারে গ্লাসের ব্যবসায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই কাল্পনিক ছিনতাইয়ের কাহিনি তৈরি করে।