উলিপুরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষেও নির্মাণ হয়নি গৃহহীনদের ঘর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:২১ পিএম, ১০ সেপ্টেম্বর,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৪৩ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
কুড়িগ্রামের উলিপুরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নির্মাণ হয়নি গৃহহীনদের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর। ঘর নিমার্ণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে ইউপি চেয়ারম্যানদের বারবার তাগিদ দিলেও কোন কাজ হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৭২টি গৃহহীন পরিবারের জন্য দুর্যোগ সহনীয় ঘর নিমার্ণে বরাদ্দ ধরা হয় ২ কোটি ১৫ লাখ ৮৯ হাজার ৯'শ ২০ টাকা। একটি রান্না ঘর ও একটি বাথরুমসহ ২কক্ষ বিশিষ্ট প্রতিটি সেমি পাকা টিনসেড ঘরের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৯ হাজার ৮’শ ৬০ টাকা।
এরমধ্যে উপজেলার থেতরাই ইউনিয়নে ৪টি, দলদলিয়ায় ৬টি, দুগার্পুরে ৭টি, পান্ডুলে ৮টি, বুড়াবুড়িতে ৩টি, ধরণীবাড়ীতে ১০টি, ধামশ্রেনীতে ৪টি, গুনাইগাছে ৬টি, বজরায় ৫টি, হাতিয়ায় ৮টি, তবকপুরে ৭টি, বেগমগঞ্জে ২টি ও সাহেবের আলগায় ২টি ঘর। ইতোমধ্যে চলতি বছরের ২৭ জুলাই বরাদ্দের ২ কোটি ৯০হাজার ৬’শ ২০ টাক চেকের মাধ্যমে উত্তোলনকরা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও বুড়াবুড়িতে ৩টি, তবকপুরে ৭টি ঘরের কাজ এখনও শেষ হয়নি।
কাজ শেষ না করে টাকা উত্তোলন বিষয়টি জানাজানি হলে সুবিধাভোগিদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, তবকপুর ইউনিয়নের কাজ শুরু হলেও তা এখন পর্যন্ত শেষ হয়নি। সুবিধাভোগিদের নানান অজুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে রেখেছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর যেসব ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, সেগুলো নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে গরীর ও অস্বচ্ছল পরিবারকে বাদ দিয়ে তবকপুর ইউপি সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের চাকরিজীবি পুত্র মোশারফ হোসেন (ক্রমিক নং-৬৮) বরাদ্দ পেয়েছেন একটি ঘর।
বামনাছড়া বালাপাড়া এলাকার তবকপুর ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র মোশারফ হোসেনের নিকট তার নামে বরাদ্দকৃত নির্মিত ঘর সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, আমি এসব কিছু জানি না আব্বা এগুলো কিসের ঘর তৈরি করছেন ওনি জানেন। এছাড়া তার স্ত্রী বলেন, মেম্বার ওই বাসায় ওইখানে গিয়ে ওনার নিকট শোনেন।
উমানন্দ কারীপাড়া গ্রামের মহছিনা বেগম জানান, দুই বছর আগে কাজ শুরু করলেও এখনো মাটি থেকে ৪থেকে ৫ ফুট ইটের গাঁথুনি হয়েছে।পঙ্গু স্বামী, সন্তান নিয়ে বর্ষা ও শীতে অতি কষ্টে রান্না ঘরে দিনাতিপাত করছি। রাজমিস্ত্রি তাকে বলেছেন চেয়ারম্যান অসুবিধায় রয়েছেন বলে বাকি কাজ করার জন্য কাঠ ও বাঁশ লাগবে ভাউচার দেয় সেই মোতাবেক কষ্ট করে না খেয়ে-পড়ে প্রায় ৩ হাজার টাকার কাঠ ও বাঁশ ক্রয় করলেও কোন কাজ শুরু করেনি ওই মিস্ত্রিরা। যার ফলে ক্রয়কৃত কাঠ ও বাঁশ রোদ-বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।
তবকপুর সরদারপাড়া গ্রামের রেজিয়া বেওয়া বলেন, প্রায় ২ বছর আগে চেয়ারম্যানের লোকজন কিছু ইট এনে পিড়ালী (ভিত্তিপ্রস্তর) করে দিয়ে গেছে আর কোন খোঁজ নেই। বার বার তাদের কাছে গিয়েও কাজ হয়নি। এই বর্ষা ও শীতে ছাওয়াপোওয়া নিয়ে কি যে কষ্টে আছি। আরও কতদিন এভাবে কষ্ট করে থাকতে হবে কে জানে। একই কথা জানালেন উপজেলার সাদুল্যার ছোরোতন, বামনাছড়ার রাহেনা বেগম, ফকির মোহাম্মদের কল্পনা বেগম, আম্বিয়া বেগম সহ বেশ কয়েকজন।
এদিকে বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের সাতভিটা গ্রামের মজিবর আলীর স্ত্রী জাহেরা বেগম বলেন, ২ বছর আগে ইটের গাঁথুনী দিয়ে কাজ বন্ধ করে রাখছে। চেয়ারম্যানের কাছে ধড়না দিয়েও কাজ হচ্ছে না। ভাঙা ঘর-বাড়িতে খুব কষ্ট আছি। এই ঘর যে কবে হবে আল্লাহ জানে।
তবকপুর ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ হোসেন মুকুলের সাথে মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন মিস্ত্রির সাথে কথা হয়েছে আগামীকাল দু’টি ঘরের কাজ শুরু করবো এবং বাকি গুলো পর্যায়ক্রমে করা হবে।
প্রকল্পের সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সিরাজুদৌল্লা বলেন, অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যানদের লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এরপরও তারা কাজ শেষ করতে পারেননি।
এ বিষয়ে অব্যয়িত অর্থ ফেরত চেয়ে সার্টিফিকেট আদালতে পিডিআর এ্যক্ট এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। জেলা ত্রাণ ও পুনবার্সন কর্মকর্তা মো. আব্দুল হাই সরকার বলেন, আমার জানা মতে এরকম কোন ঘর নেই। ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে মর্মে একটি চিঠিও পেয়েছি।