১২ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিপৎসীমার ওপরে ৮ নদীর পানি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৫৪ এএম, ২৯ আগস্ট,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৩:০২ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলের ১২ জেলার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে। গতকাল শনিবার সকালে দেশের আটটি নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
আজ শনিবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর অবস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাসে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি বাড়ছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অন্যদিকে পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মার পানি আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাড়তে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অপার মেঘনা অববাহিকার কুশিয়ারা ছাড়া প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে। পানি কমার এ ধারা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা; উত্তর-মধ্যাঞ্চলের জামালপুর, বগুড়া, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা; মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
এতে আরও বলা হয়, আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পুরাবাড়ি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। আটটি নদীর পানি ১২টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, পদ্মা নদীর পানি সুরেশ্বর ও গোয়ালন্দ পয়েন্টে, মেঘনা নদীর পানি চাঁদপুরে বিপৎসীমার উপর দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। যমুনা নদীর পানি ছয়টি পয়েন্টে বিপৎসীমা পার হয়েছে- আরিচা, মথুরা, সিরাজগঞ্জ, কাজীপুর, সারিয়াকান্দি, বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে। এছাড়া ব্রহ্মপুত্রের পানি চিতলমারী, ধরলার পানি কুড়িগ্রাম ও দুধকুমার নদীর পানি পাটেশ্বরী স্টেশনে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
কয়েক দিনের টানা ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যা এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ১১ সেন্টিমিটার। এদিকে এটা অব্যাহত থাকায় অভ্যন্তরীণ নদ-নদী ও চলনবিলের পানিও বাড়ছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন নি¤œাঞ্চলের মানুষ। আজ সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেছেন সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন।
পাউবোর শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টের পানি পরিমাপক (গেজ মিটার) আবদুল লতিফ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি শহর রক্ষা বাঁধ পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ১৪ আগস্ট থেকে শুরু করে শনিবার (২৮ আগস্ট) পর্যন্ত যমুনা নদীর পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় জেলার নদীতীরবর্তী আরও কিছু নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গতরা। বন্যাকবলিত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলি জমি তলিয়ে যাওয়ায় নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন ক্ষেত, বীজতলা, আখ, পাট, তিল ও সবজিবাগানসহ বিভিন্ন ফসল। সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম জানান, ৫টি উপজেলায় ১০০ মেট্রিক টন চাল ও ১ লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তারা সেটা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিতরণ করবেন। এ ছাড়া জেলায় ৭৬ মেট্রিক টন চাল ও আড়াই লাখ টাকা মজুত রাখা হয়েছে। কোনো এলাকায় ত্রাণের প্রয়োজন আছে কি না, তা নিয়মিত খোঁজ নেয়া হচ্ছে।
সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, যমুনায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় ১১ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বন্যা পূর্ভাবাস সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে যমুনা নদীর পানি আরও বাড়তে পারে। তবে পানি বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত বন্যার তেমন কোনো খারাপ পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও জানান এই কর্মকর্তা।