নীলফামারীতে কৃষি জমিতে পানি, বন্দীদশা থেকে মুক্তি চান ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:৪৯ পিএম, ২৪ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০১:৩৭ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
নীলফামারীতে পানিবন্দী কৃষিজমির ফসল রক্ষার দাবী দুই উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের। এ দুই উপজেলার বুড়িতিস্তা বাঁধ এলাকার রাম ভাঙ্গা, কুটির ডাঙ্গা, সরদার হাট, পচার হাট, শালহাটি, চিড়াভিজা গোলনা, খারিজা গোলনা গ্রামের কৃষক কৃষাণী সহ এলাকাবাসীর দাবী কৃষি জমি পানি বন্দীদশা থেকে মুক্তি এবং ঘরবাড়ি, গবাদি পশু ও ফসল রক্ষায় কালিগঞ্জ বুড়ি তিস্তা ব্যারেজের গেট খুলে দিয়ে জলামগ্নতা হতে রক্ষার দাবী জানিয়ে নীলফামারী জেলা প্রশাসক বরাবরে গেল মাসের ১৭ তারিখে স্বারকলিপি দিয়েছিল ওই এলাকার কৃষকেরা। তাতে কোনও সুরাহা না পেয়ে গত রোববার (২২আগস্ট) জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবরে গণস্বাক্ষরিত একটি অঙ্গিকার পত্র দিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
অঙ্গিকার পত্রে বলা হয়েছে বুড়িতিস্তা ব্যারেজের সেচ প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষে চলতি বর্ষা মৌসুমে হাজারো পানিবন্দী পরিবার ও আমন রোপিত কৃষি জমিগুলো জলামগ্নতা হতে উদ্ধারের জন্য অতি শীঘ্রই ব্যারেজের ১৪টি গেট উত্তোলন করে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে পরিবার গুলোর জীবন ও ফসল রক্ষার দাবি জানানো হয়।
অঙ্গিকার পত্রে আরও জানানো হয়, অতিতের খরশ্রোতা নদীটি ভরাট হয়ে সমতল ভুমিতে পরিনত হয়েছে এবং ব্যারেজের সামনে রিজার্ভার টি অতান্ত ছোট হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে গেট বন্ধ রাখলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অধিগ্রহণ বহির্ভূত বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে থাকে। উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূরীকরণ সহ দেশকে খাদ্য স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে কৃষি বান্ধব সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতি আস্থা রেখে বুড়িতিস্তা সেচ প্রকল্পের সুফলভোগ ও কার্যকরী করার লক্ষে এ অঞ্চলের কৃষকেরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছেন বলে তারা অঙ্গিকার পত্রে স্বাক্ষর করেন।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, তৎকালিন পাকিস্তান সরকারের আমলে খাদ্য চাহিদা পূরনের নিশ্চয়তায় বাঁধ ও সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৫৭, ৫৮, ৬৬ সালে জমি অধিগ্রহণ করা হয়। জমিতে সেচ ব্যবস্থা চালু করার জন্য ১৯৬০ সালে প্রকল্পটি গ্রহন করা হয়েছিল। ১৯৬২- ৬৩ সালে মোট ১২১৭ একর জমি অধিগ্রহন করে ১৪ টি জল কপাটসহ একটি ব্যারেজ, বাঁধ ও ক্যানেল নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এ বিষয়ে নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, হাই কোর্টের রায়ের কারণে ২০১০ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেচ প্রকল্পটি বন্ধ ছিল, তা আবার পুর্ণজীবিত করা হচ্ছে। আজ যারা জমি জলাবদ্ধতার দাবি করছেন, তাদের কোন সম্পত্তি নেই। এটা পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধিগ্রহনকৃত সম্পত্তি। সেখানে ৪ শত থেকে ৫ শত একর জমিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সেচ প্রকল্পটি চালু থাকলে মেইন ক্যানেল হয়ে BC-1, BC- 2, BC 3 মাধ্যমে সেকেন্ডারী ক্যানেল দিয়ে প্রথমে ৪ হাজার ও পরে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে কৃষকেরা সেচ নিতে পারবে এবং ইতোমধ্যে সেচ প্রকল্পে কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে জলঢাকা উপজেলার গোলনা ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল আলম কবির বলেন, দীর্ঘকাল যাবত পানি নদীর উৎসস্থল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদীর দুই ধারের উচু জমিগুলো থেকে পলিযুক্ত মাটি সরে এসে নদীটি ভরাট হয়ে সমতল ভুমিতে পরিনত হয়ে যায়। উপরন্ত ব্যারেজের সামনে রিজার্ভারটি অত্যান্ত ছোট আকারে নির্মিত হওয়ায় সেচের প্রয়োজনুযায়ী পানি সরবরাহ সম্ভবপর হয় না। এটিই হলো বাস্তবতা। সেচ ব্যাবস্থা সচল হউক, শুষ্ক মৌসুমে কৃষকরা সহজে পানি পাবে, এটি আমার কাম্য। তবে, সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত জমির বাহিরে যাতে প্লাবিত না হয়। এটাই আমার চাওয়া।
নীলফামারী- ৩ আসনের সংসদ সদস্য মেজর (অবঃ) রানা মোহাম্মদ সোহেল বলেন, এ বিষয়টি আমি ডিসি এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করেছি। পরিকল্পনাটা আজকের নয়, এটি বহু বছর আগের। পর্যাপ্ত যাচাই-বাচাই ও সার্ভে করে পরিকল্পনা করা হয়। সেকারণে এ পরিকল্পনার উপর আমি মন্তব্য বা প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইনা। পরিকল্পনাকে কার্যকরণ করার ক্ষেত্রে যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের স্বার্থরক্ষা করার জন্য এটি আপাতত বিবেচ্য বিষয়। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যদি গড়মিল হয়, যাদের জন্য এই পরিকল্পনা, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।