বরিশালে প্রশাসন-আ'লীগ সমঝোতা, ইউএনও-ওসির বদলি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৩৬ পিএম, ২৪ আগস্ট,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০৭:৫৪ পিএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বরিশালে প্রশাসন ও সিটি মেয়রের বিরোধ অবসান হলেও স্টেশন ছাড়তে হচ্ছে সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং সদর থানার ওসিকে। ইউএনও মুনিবুর রহমানকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এবং ওসি নুরুল ইসলামকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার (২৩ আগস্ট) তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
সংঘর্ষের বিষয়টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। গতকাল ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনাসভায় তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি করেন, তাদের সঙ্গে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে, তা হতেই পারে। এটা নতুন কিছু নয়, এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা।
এদিকে, রবিবার রাতে অনুষ্ঠিত সমঝোতা বৈঠকটি ফলপ্রসূ হওয়ার মধ্য দিয়ে বরিশাল সদর উপজেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনে চলমান থমথমে অবস্থার অবসান হয়েছে। ফলে চারদিন শেষে বরিশালে স্বস্তি ফিরেছে। গতকাল সকালেই কাজে যোগ দেন নগর ভবনের সব শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ২৪টি করোনা টিকা কেন্দ্রে উপস্থিত হন করপোরেশনের সব স্বেচ্ছাসেবক এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
ইউএনও মুনিবুর রহমান বলেন, এখনো রিলিজ পাইনি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পেলেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগ দেব। আর ওসি বলেন, এখনো লিখিত আদেশ পাইনি। তবে চলতি সপ্তাহেই সিলেটে যোগদান করবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের বাস ভবনে অনুষ্ঠিত সমঝোতা বৈঠকে অংশ নেওয়া দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, ইউএনওর বাসায় হামলার ঘটনায় মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে বরিশাল কোতয়ালী থানায় করা দুটি মামলা এবং ইউএনও ও ওসির বিরুদ্ধে আদালতে দাখিল করা দুটি আবেদনের নিষ্পত্তি তদন্তের মাধ্যমে শেষ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে। পুলিশের তদন্তকারীরা ওই মামলাগুলো তদন্তের পর ফাইনাল রিপোর্ট দেবেন। এর মাধ্যমে মামলাগুলো নিষ্পত্তি হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বরিশালে প্রশাসন, পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের মেয়রের মধ্যকার বৈরিতার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘটনার একটি সম্মানজনক সমাধান করতে দিকনির্দেশনা দেন প্রশাসন এবং ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতৃস্থানীয়দের। এই সমঝোতায় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ।
তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর চাওয়া ছিল প্রশাসন, পুলিশ ও মেয়রপক্ষের যেন সম্মানহানি না ঘটে। যে যে অবস্থানে আছে সে অবস্থানে থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করবে। যেন একপক্ষ আরেকপক্ষের কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। সে অনুযায়ীই গত রবিবার রাতের বৈঠকে আন্তরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক সমাধান করা হয়েছে।
জানা গেছে, বরিশাল কোতয়ালী থানার ওসি নুরুল ইসলামকে গত ১৮ আগস্ট দুপুরে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স থেকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়। তবে বিষয়টি গোপন রাখা হয়। কর্তৃপক্ষ তাকে অবমুক্ত না করায় তিনি এতদিন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গতকাল তাকে বদলি করা স্থানে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, ইউএনও মুনিবুর রহমানকে ঘটনার এক সপ্তাহ আগে ১০ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বদলি করা হয়। কিন্তু তাকেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবমুক্ত না করায় দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। গতকাল তাকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে যোগদানের মৌখিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
জানা গেছে, মুনিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ছিলেন। বরিশাল সদরের আগে তিনি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ইউএনও ছিলেন। বিসিএস ৩১ ব্যাচের এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সেখানে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে মুনিবুর রহমান বলেন, গত বছরের ৭ এপ্রিল পিআইও তপন কুমার বোস আমার স্বাক্ষর জাল করে এক কোটি ১২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। বিষয়টি ধরা পড়ায় তাকে বরখাস্ত করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এদিকে বরিশালের ওই ঘটনায় প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। জানা গেছে, অ্যাসোসিয়েশনের সব নেতা বিবৃতির বিষয়ে জানতেন না। সংগঠনটির সভাপতি সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার, যিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব) জাহিদ ফারুক শামীম। তিনি বরিশাল সদর আসনের এমপি। গত ১৮ আগস্ট রাতে তার ছবি সম্বলিত ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করেই হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে মেয়রের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব রয়েছে। নিজ মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর পক্ষ নিয়ে অতিউৎসাহী হয়ে সচিব এমন বিতর্কিত বিবৃতি দিয়েছেন বলে অনেকের মন্তব্য।
উভয়পক্ষের সমঝোতার বিষয়টি ইতিবাচক আখ্যা দিয়ে আগামীতে এ ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে সবাইকে সতর্কতার সঙ্গে দেশসেবায় নিয়োজিত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বরিশালের বিশিষ্টজনেরা। আর সাধারণ নগরবাসীর দাবি- জনগণকে হয়রানির মতো কর্মসূচি ত্যাগ করতে হবে।