মনোহরগঞ্জে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, পরিবারের দাবি হত্যা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১২ আগস্ট,বৃহস্পতিবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:৫৩ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
মনোহরগঞ্জে মারিয়া আক্তার (২১) নামে এক গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ।
নিহত গৃহবধূর বাবা-মায়ের দাবি, তার মেয়েকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় নিহত গৃহবধূর বাবা লাকসাম বেতিহাটি গ্রামের মোর্শেদ আলম বাদী হয়ে মনোহরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। নিহত ওই গৃহবধূ উপজেলার ঝলম (দক্ষিণ) ইউনিয়নের বচইড় গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে আমান উল্লাহর স্ত্রী।
নিহতের স্বামীর বাড়ির সদস্যদের দাবি, মঙ্গলবার দুপুরে ওই গৃহবধূর সঙ্গে স্বামী, শাশুড়ি এবং ননদ এবং দেবরের পারিবারিক বিষয় নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ হয়। ওই ঝগড়া-বিবাদের জের ধরে ওই গৃহবধূ বিষপান করে। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মনোহরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক তার উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরে তারা কুমিল্লায় এবং অবশেষে ঢাকায় নেওয়া হলে সেখানে ওই গৃহবধূ মারা যান।
এদিকে নিহত গৃহবধূর বাবার বাড়ীর আত্বীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৯ অক্টোবর কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার গোবিন্দপুর ইউনিয়নের বেতিহাটি গ্রামের মোর্শেদ আলমের একমাত্র মেয়ে মারিয়া আক্তারের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী মনোহরগঞ্জ উপজেলার ঝলম (দক্ষিণ) ইউনিয়নের বচইড় গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে আমান উল্লাহর বিয়ে হয়।
বিয়ের পর থেকে স্বামী ও শ্বশুর-শাশুড়ি দেবর-ননদসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন প্রায় সময় মারিয়ার পরিবারের কাছে বিভিন্ন আসবাবপত্র এবং ব্যবসার জন্য দুই লাখ টাকা দাবি করে আসছে। ওই গৃহবধূর পরিবার এসব দাবি পূরণ করতে অস্বীকৃতি জানালে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নানা অজুহাতে গৃহবধূকে শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম নির্যাতন করত। মঙ্গলবার ওই নির্যাতনের বলি হয়েছে গৃহবধূ মারিয়া।
নিহত মারিয়ার মা ফাহিমা আক্তার বলেন, ঘটনার রাতে সাড়ে ৮টার দিকে মারিয়ার স্বামী আমান উল্লাহ জানায়, মারিয়া খুব অসুস্থ; কী যেন খেয়েছে। সম্ভবত বিষ। আমি তাকে কুমিল্লায় একটি হাসপাতালে এনেছি। এর কিছুক্ষণ পর আমি মারিয়ার অবস্থা জানতে চাইলে সে (স্বামী) জানায় তাকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি। একপর্যায়ে রাত পৌনে ২টার দিকে জানতে পারি আমার মেয়ে মারা গেছে। নিহত মারিয়ার এক বছরের একটি পুত্রসন্তান রয়েছে।
তিনি আরও জানান, তার মেয়ের ওপর নির্যাতনের কারণে এলাকার গণ্যমান্য বক্তিদের মধ্যস্থতার একাধিক সালিশ-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার আমার মেয়েকে তার স্বামী আমান উল্লাহ আমাদের বাড়ি থেকে তার বাড়ি (বচইড়) নিয়ে যায়। সেখানে নেওয়ার পর থেকেই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায়।
নিহত মারিয়ার বাবা-মায়ের দাবি, তাদের মেয়েকে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
এ ব্যাপারে মনোহরগঞ্জ থানার ওসি মো. মাহবুবুল কবির বলেন, নিহত ওই গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।