চিকিৎসক সংকটসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:৫২ পিএম, ৯ আগস্ট,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৯:৩৬ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স। যেখানে দৈনিক আউটডোর-ইনডোর মিলিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসে ৫ শতাধিক রোগী। শত শত রোগীর চাপ নিয়ে চলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটির আরেকটি বড় চাপ হলো জনবল সংকট। ৩১ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে অধিকাংশ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক নিয়োগ দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্র জানায়, হাসপাতালটিতে ৮-১০ জন চিকিৎসকের প্রয়োজন থাকলেও তা নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুল কাদের ছাড়া ইউনিয়ন সাব-সেন্টার সহ মোট মেডিকেল অফিসার থাকার কথা ৮ জন, সেখানে আছে মাত্র ৪ জন। অন্যদিকে, ৪ জন কনসাল্টেন্ট থাকার কথা থাকলেও সেখানে আছে শুধু ১ জন গাইনি কনসাল্টেন্ট।
জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে ৪৫০-৫০০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসেন, এর মধ্যে ভর্তি হন ২০-২৫ জন। চিকিৎসক সংকটের কারণে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় বর্তমানে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকদের। ভুক্তভোগীরা জানান, হাসপাতালটির কলেবর বৃদ্ধি পেলেও সে মোতাবেক চিকিৎসকের জোগান নেই।
তাছাড়াও, হাসপাতালটিতে ট্রমা সেন্টার এর ভবন নির্মান করা হলেও নেই চিকিৎসক। এছাড়া ইসিজি মেশিন থাকলেও নেই টেকনিশিয়ান। এক্সরে মেশিনটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল। এখনও কেনা হয়নি আল্ট্রাসনোগ্রাম মেশিন। হাসপাতালটিতে নার্স ২০ জন থাকলেও ল্যাব-টেকনিশিয়ানের পদও শূন্য দীর্ঘদিন।
গত ৫ আগস্ট (বৃহস্পতিবার) সকাল ১১ টায় সরেজমিনে দেখা যায়, অবকাঠামোগত উন্নয়ন হওয়া হাসপাতালটিতে প্রচুর রোগীর চাপ। দেখা গেছে, করোনা টেস্ট এবং টিকা নিতে আসা মানুষেরা লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষার জন্য নমুন নেওয়া ছাড়াও এখানে করা হচ্ছে অ্যান্টিজেন টেস্ট। একই সময়ে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা গেছে রোগী ও স্বজনদের উপচে পড়া ভিড়। শুধু করোনা রোগীই নয়, সড়ক দুর্ঘটনা, হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোকসহ জটিল সমস্যা নিয়ে যে কেউ হাসপাতালে এলে চিকিৎসকের অভাবে তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হচ্ছে। এতে অনেক রোগী চিকিৎসা সেবা না পেয়ে পথের মধ্যে মারা যাচ্ছে।
হাসপাতালে কথা হয় রোগীর ২ স্বজন অবনী রায় ও রফিকুল ইসলাম নামের ২জনের সাথে। তারা বলেন, আমরা রোগী নিয়ে দু'দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। হাসপাতালে ডাক্তার আসে অনেক দেরিতে। ডাক্তার-নার্সদের আন্তরিকতা থাকলেও ডাক্তার সংখ্যা এখানে এতটাই কম যে আমরা জরুরী সেবাটুকুও সেভাবে পাচ্ছিনা। এত বড় হাসপাতাল, অথচ চিকিৎসকের অভাব এটা বাহির থেকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই।
শেরপুর উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামে আমাদের বসবাস আমাদের চোখে এটি অনেক বড় হাসপাতাল এখানে নতুন বিল্ডিংও হয়েছে। আমরা প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে এখানেই চিকিৎসা সেবা নিতে আসি। কিন্তু, এখানে প্রয়োজনমত ডাক্তার নিয়োগ না দেওয়ায় আমাদেরকে বগুড়ামুখী হতে হয়। এতে যেমন আমাদের অর্থের খরচ বেশী হয় তেমনি ঝক্কি-ঝামেলাও বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন করোনা রোগীর স্বজন আক্ষেপ করে বলেন, সরকার এতবড় একটা হাসপাতাল করে রেখেও বিশ্বব্যাপী চলা বড় হুমকী করোনা রোগের সেবার ব্যবস্থা এই হাসপাতালে করেনি এটা ভাবতেও কষ্ট হচ্ছে। টাকা পয়সার অভাব থাকলেও এখন আমার রোগীকে নিয়ে বগুড়ায় যেতে হবে। অতি দ্রুত এই হাসপাতালটিতে করোনা রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থার দাবী করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স এর আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোকছেদা খাতুন বলেন, স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সটিতে প্রতিনিয়ত রোগীর চাপ বাড়ছে। হাসপাতালটি ৩১ সজ্জাবিশিষ্ট হলেও সার্ভিস দিতে হয় ৫০ সজ্জাবিশিষ্ট হাসপাতালের মত। দীর্ঘদিন ধরে চলা চিকিৎসক সংকটের মাঝেই এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল সাজর্ন ডা. আবু হাসান ও ডা. বিপ্লব কুমার প্রামাণিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর ফলে রোগী সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বর্তমানে কর্মরতদের উপর বেশী চাপ পড়ছে।
দেখা গেছে, প্রতিমাসে ১৫ হাজারের অধিক রোগী এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। এ উপজেলার সাধারণ মানুষের চাহিদা ও প্রয়োজনের কথা বিবেচনা করে অতি দ্রুত হাসপাতালটিকে ৫০ সজ্জায় উন্নীত করে উক্ত কাঠামো অনুযায়ী চিকিৎসক নিয়োগ দিলে এ উপজেলার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত হবে। ইতিমধ্যে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবগত করেছি।