আড়াইহাজারে পুলিশের সাথে সংঘর্ষ আ’লীগের ৩৩ কর্মীসহ অজ্ঞাত ৫শ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:৪৩ এএম, ৮ ডিসেম্বর,মঙ্গলবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:১৯ এএম, ৭ নভেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ উচ্ছেদ অভিযানে প্রথমে আ’লীগ কর্মীদের হামলা ও পরে এলাবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয় আ’লীগের ৩৩ জন কর্মীসহ অজ্ঞাত ৫শ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
আজ সোমবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সোনারগাঁও জোনাল বিপনন অফিসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মিজবাহ-উর-রহমান বাদী হয়ে থানায় এ মামলা দায়ের করেন।
এতে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ্য ও অজ্ঞাত আরো ৫শ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় ঘটনাস্থল থেকে আটক ১০ জনের মধ্যে ৯ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আরেকজন পরীক্ষার্থী হওয়ায় পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। মামলায় যে ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা সবাই আ’লীগ ও স্থানীয় এমপি বাবুর কর্মী। তারা এমপির প্রভাব খাটিয়ে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে গ্রামের বাড়াবাড়ি অবৈধ গ্যাস সংযোগ দিতো বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, মামলায় আসামিরা হলোÑ উপজেলার ঝাউগড়া এলাকার জয়নালের ছেলে কিরন (২৭), জলিলের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৪৩), ছামাদের ছেলে শহীদ (৪০), বাউয়া ডাক্তারের ছেলে আলাউদ্দিন (৪০), নুর ইসলামের ছেলে মামুন (৩৫), ইদ্রিস আলীর ছেলে শাহজাহান (৩৫), আব্দুল হাইয়ের ছেলে শহীদ (৪০) জয়নালের ছেলে মানিক (৩২) ও মাছুম (২৬), আব্দুল মান্নানের ছেলে মাসুদ (৩০), এনামুল (২৬) ও এমদাদুল (২৩), অজ্ঞাত পিতা জুয়েল (৩৩), অহিদ মেম্বারের ছেলে শিবলু (৩৪), মৃত আদম আলীর ছেলে আরমান (৪২), আবুল হাসেমের ছেলে জাকির (৪৮), হারুন রশিদের ছেলে দাউদ (৪২), অজ্ঞাত পিতা আলমগীর (৩৩), ছলিম উদ্দিনের ছেলে নজরুল ইসলাম (৪০), আয়নাল হকের ছেলে আল আমিন (৪২), মৃত ছামাদের ছেলে অহিদ (৪৫), জলিলের ছেলে হেলু মিয়া (৩০), মিলেনের স্ত্রী পাপিয়া (২৫), মৃত জংশেদ আলীর ছেলে সাইফুল ইসলাম (৪৮), মৃত জাবেদ আলীর ছেলে শহিদুল্লাহ (৫২), সোবহানের ছেলে নজরুল ইসলাম (১৯), সাইফুল ইসলামের ছেলে ফাহিম ইসলাম আকাশ (১৮), আফজাল হোসেনের ছেলে মাহফুজ (১৮), আব্দুর রহমানের ছেলে ইকবাল হোসেন (৩০), মৃত আউলাদ হোসেনের ছেলে সাইফুল মোল্লা (৩০), শাহজাহানের ছেলে আরিফ (১৯), মৃত আবু তালেবের ছেলে মো. সাকিব (২২), মো. ফারুকের ছেলে মো. জাকারিয়া (১৮)। এর মধ্যে রবিবার সংঘর্ষের দিন বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে আটক সাইফুল ইসলাম (৪৮), শহিদুল্লাহ (৫২), নজরুল ইসলাম (১৯), ফাহিম ইসলাম আকাশ (১৮), ইকবাল হোসেন (৩০), সাইফুল মোল্লা (৩০), আরিফ (১৯), মো. সাকিব (২২), মো. জাকারিয়া (১৮) আদালতে পাঠানো হয়েছে। আর পরিক্ষার্থী হওয়ায় মাহফুজকে (১৮) পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
আড়াইহাজার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শওকত হোসেন বলেন, অবৈধ গ্যাস সংযোগ দেয়া, সরকারি কাজে বাধা, হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে তিতাস কর্মকর্তা মিজবাহ-উর-রহমান বাদী হয়ে ৩৩জনের নাম উল্লেখ ও ৫০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় রোববার বিকেলে ঘটনাস্থল থেকে আটক ১০জনের মধ্যে ৯জনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আরেকজন পরীক্ষার্থী হওয়ায় পরিবারের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে। পলাতক অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
মামলায় তিতাস কর্মকর্তা মিজবাহ উর রহমান উল্লেখ জানান, কিরন, হেলাল উদ্দিন, শহীদ, আলাউদ্দিন, মামুন, শাহজাহান, শহীদ, মানিক, মাছুম, মাসুদ, এনামুল, এমদাদুল, জুয়েল, শিবলু, আরমান, জাকির, দাউদ, আলমগীর, নজরুল ইসলাম, আল আমিন, অহিদ, হেলু মিয়া, পাপিয়া সহ আরো কয়েকজন অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন আসামি পরস্পর যোগসাজসে ঘটনাস্থলে অবৈধ গ্যাস লাইন সংযোগ দেয়।
প্রসঙ্গ রবিবার দুপুরে উপজেলার ঝউগড়া উত্তরপাড়া এলাকায় তিতাস গ্যাসের অবৈধ সংযোগ উচ্ছেদে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার উজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে তিতাস কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ অভিযান শুরু করে। অভিযানের এক ঘণ্টার পর অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী আ’লীগের কর্মীরা উচ্ছেদকারীদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। পুলিশের ৮ সদস্য আহত হয়। এছাড়াও সরকারি গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। এতে আ’লীগের কর্মী ও এলাকাবাসীর সাথে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ১৩ রাউন্ড টিয়ার শেল, ৭৬ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১৬ রাউন্ড শটগানের (সীসা কার্তুজ) ফাঁকাগুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে তিতাসের কর্মকর্তা ও পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়। এসময় হামলাকারী ১০জনকে আটক করে পুলিশ। আর আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। আহত পুলিশ কনস্টেবলরা হলেন, আলোক, জাকির, আল মামুন, রানা, সাগর, এরশাদ, লিটন, আব্দুল জলিল।