করোনা উপসর্গে মৃত্যু হওয়ায় কবর জিয়ারতে বাধা, আহত ১০
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০৩ এএম, ৬ আগস্ট,শুক্রবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৩৯ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
সিলেটের ওসমানীনগরে করোনা উপসর্গে মৃত স্বজনের কবর জিয়ারত করতে যাওয়ায় বাধার মুখে পরেন স্বজনরা। এমনকি করা হয় হামলা। এতে মহিলাসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৩ জনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা বালাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় ওসমানীনগর থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। পুলিশ অভিযান চালিয়ে এজাহার ভুক্ত আসামি মাসুক মিয়াকে গ্রেফতার করেছে।
অভিযোগ থেকে জানা যায়, উপজেলার উসমানপুর ইউনিয়নের পড়িয়ারখাই গ্রামের রায়না মিয়া গংদের সঙ্গে একই এলাকার আব্দুল আহাদ ও আবু তাহের গংদের স্থানীয় বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মনোমালিন্য চলে আসছে। রায়না মিয়ার অসুস্থ মা তুলাউন নেছার লান্স ইনফেকশন হয়। গত ২৯ জুলাই কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান করা হয় এবং ওইদিন রাত ১১টার দিকে তিনি মারা যান। পরদিন ৩০ জুলাই সকালে পড়িয়ারখাই বায়তুল নাজাত দক্ষিণ জামে মসজিদের পাশে পারিবারিক কবরস্থানে তুলাউন নেছার দাফন সম্পন্ন হয়। ওই দিন রাতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হলে কবরের মাটি সরে যায়। তুলাউন নেছার স্বজনরা কবর মেরামত করতে গেলে আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে অভিযুক্তরা বাধা দেয়। রাতে আব্দুল মালেকের নেতৃত্বে আব্দুল আহাদের বাড়িতে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে রায়না মিয়ার বাড়ির লোকজনকে দাওয়াত করা হয়নি। পৃথক বাড়িতে বসবাসকারী রায়না মিয়ার চাচা আনছার মিয়া গোষ্ঠীর লোকদের পক্ষে উক্ত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উক্ত বৈঠকে রায়না মিয়ার বাড়ি ১৪ দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়। আনছার মিয়াকে উক্ত লকডাউনের বিষয়ে রায়না মিয়া গংদের অবহিত করার দায়িত্ব দেয়া হয়। পাশাপাশি লকডাউন অমান্য করলে অবস্থা খুবই বেগতিক হবে বলে সতর্ক করা হয়।
আরও জানা যায়, গত ২রা আগস্ট বিকালে রায়না মিয়া ও তার ভাই তুলাউন নেছার কবর জিয়ারত করতে গেলে অসামীরা বাধা দেয়। এরপর থেকে রায়না মিয়ার কেউ বাড়ি হতে বের হলে বা কেউ বাড়িতে এলে বড় ধরণের ঘটনা ঘটবে বলেও সতর্ক করা হয়। গত ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে রায়না মিয়ার ছেলে ইকবাল হোসেন (মামলার বাদী) নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় পৌঁছা মাত্র তার গতিরোধ করে হামলা চালানো হয়। এতে ইকবাল হোসেন মারাত্মক আহত হন। তার চিৎকারে বাড়ি থেকে হীরা মিয়া, সুরমান আলী, রায়না মিয়া, হেলাল মিয়া এগিয়ে এলে তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়। মামলা অভিযুক্তরা দেশী অস্ত্র নিয়ে রায়না মিয়া গংদের ওপর আক্রমণ করে। হট্টগোলে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন এগিয়ে এসে আহতদের উদ্ধার করে বালাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ ঘটনায় আহতরা হচ্ছেন মামলার বাদী ইকবাল আহমদ (১৯), সুরমান আলী (৩০), হীরা মিয়া (৫৪), রায়না মিয়া (৫৬), হেলাল মিয়া (৩৫)। এদের মধ্যে সুরমান আলী ও হীরা মিয়াকে মারাত্মক আহত অবস্থায় সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
এদিকে, সবাই যখন আহতদের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত এই সুযোগে আসামিরা আনছার মিয়ার পড়িয়ারখাই বায়তুল নাজাত দক্ষিণ জামে মসজিদের মালিকানাধীন ভাড়া দোকানের সার্টার ভাঙ্গতে শুরু করে। খবর পেয়ে আনছার মিয়া বাড়ি থেকে দৌড়ে দোকানে গেলে আসামিরা তার ওপর আক্রমণ শুরু করে। এ সময় বাড়ির মাহিলারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দোকান না ভাঙ্গতে অনুরোধ করলে আসামিরা ২য় দফা আক্রমণ চালায়। তাদের আক্রমণে আহতরা হচ্ছেন- আনছার মিয়া (৫৫), দয়ারুন বেগম (৬০), সাকেরা খাতুন (৪৫), নাজমা বেগম (৪০), জেসমিন বেগম (৪৫)। তাদের মধ্যে আনছার মিয়া সিলেটের এমএজি ওসমানী হাসপাতালে ও বাকিরা বালাগঞ্জ উপজেলা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বণিক বলেন, এ ব্যাপারে থানায় মামলা হয়েছে। মাসুক মিয়া নামের এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামীিদের গ্রেফতার করতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।