বজ্রপাতে হতাহত এড়াতে পদক্ষেপ নিতে সরকারকে আইনি নোটিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০২ এএম, ২৮ জুলাই,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:১০ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর,শনিবার,২০২৪
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বজ্রপাতে হতাহতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। প্রতি বছর শত শত মানুষ ও গবাদি পশু মারা যাচ্ছে বজ্রপাতে। হতাহতের এই সংখ্যা প্রতি বছরই বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে হতাহত এড়াতে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে সরকারকে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিমকোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাউছার ।
আজ মঙ্গলবার মানবাধিকার সংগঠন ‘ল অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন’-এর পক্ষে বজ্রপাতের কারণ ও হতাহত এড়ানোর বিভিন্ন উপায় উল্লেখ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক বরাবর ইমেইলে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে। বজ্রপাতে হতাহত এড়াতে পদক্ষেপের জন্য নোটিশ গ্রহীতাদের আগামী ১৫ দিনের সময় দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে।
নোটিশে বলা হয়, বজ্রপাতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী বিশেষত কৃষক ও জেলে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে বজ্রপাতে মৃত ১৭৭ জনের মধ্যে ১২২ জনই কৃষক। সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ ও গাইবান্ধা দেশের সবচেয়ে বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা। বজ্রপাতে নিহতের সংখ্যা এখন অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন সাইক্লোন, বন্যা, ভূমিধসে নিহত সংখ্যার চেয়ে বেশি। গ্রামীণ এলাকার বিস্তৃত জমি, খোলা মাঠ ও খেলার মাঠ এখন বজ্রপাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সরকার যদিও বজ্রপাতকে ২০১৬ সাল থেকে একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে ঘোষণা করেছে তথাপি বজ্রপাতের ফলে হতাহতের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে এখন পর্যন্ত গৃহীত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে না। নোটিশে আরও বলা হয়, বজ্রপাতে হতাহত এড়াতে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল ইতিমধ্যে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশেও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করলে বজ্রপাতের ফলে হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। পদক্ষেপগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল : প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও সচেতনতা তৈরি, আগাম সতর্কতামূলক টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি, হাওর-বাঁওড় এলাকায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক বজ্রপাত আশ্রয় কেন্দ্র স্থাপন, পাম গাছ রোপণ, মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা প্রেরণ, বজ্রপাত নিরোধক যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং এবং বজ্রপাত থেকে বাঁচার বিভিন্ন কৌশল লিফলেট আকারে বজ্রপাত প্রবণ এলাকায় বিতরণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও বজ্রপাত ও প্রতিরোধ সংক্রান্ত যেসব যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হবে সেইসব সরঞ্জামাদি সহজলভ্য করার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতেও সরকারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
নোটিশ প্রদানকারীরা বলেন, জীবনধারণের অধিকার প্রত্যেকটি নাগরিকের সংবিধান স্বীকৃত একটি মৌলিক অধিকার। বজ্রপাত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে নাগরিকদের রক্ষা করার সাংবিধানিক এবং আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ এবং বজ্রপাতে হতাহতের সংখা কমাতে আনুষঙ্গিক পদক্ষেপ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে নোটিশ গ্রহীতাগণ চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে এবং অবহেলার পরিচয় দিয়েছে; যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বজ্রপাতে যেহেতু কৃষক-শ্রমিক জেলেরা আক্রান্ত হয় এবং মৃত্যুবরণ করে সেহেতু বিষয়টি সরকারের বিভিন্ন দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের নিকক তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না।