‘আমাদের তো আর বাঁচার মত কিছু রইল না’
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:৩৮ পিএম, ২৪ জুলাই,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০২ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
স্বামীই ছিল আমাদের সব। আমাদের তো আর বাঁচার মত কিছু রইল না। আমি এখন মেয়ে আর শাশুড়িকে নিয়ে কী করব? তাদের কী খাওয়াব?। এভাবেই আহাজারি করছিলেন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত শেখ আব্দুল হাইয়ের স্ত্রী নার্গিস বেগম।
গতকাল শুক্রবার সকালে বাগেরহাটের ফকিরহাটে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছয়জনের মধ্যে আব্দুল হাইও ছিলেন। মা, মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে আব্দুল হাইয়ের সংসার। দিনমজুরের কাজ করে উপার্জিত অর্থেই পরিবারসহ জীবিকা নির্বাহ করতেন তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হওয়ায় বিধি-নিষেধের মধ্যেও ভোরে কাজের উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন তিনি। কিন্তু ফিরেছেন লাশ হয়ে। এর আগে শুক্রবার সকালে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে পিকআপের ধাক্কায় ইজিবাইকের ছয় যাত্রী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। উপজেলার বৈলতলী প্রাইমারি স্কুল এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন রামপাল উপজেলার চাকশ্রী বাজার এলাকার আব্দুল হাই (৫৫)। ফকিরহাট উপজেলার নলদা মৌভোগ এলাকার উৎপল রাহা (৪২) ও একই এলাকার নয়ন দত্ত (২২)।
বিকেলে নিহতদের মধ্যে কয়েকজনের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, একদিকে স্বজন হারানোর বেদনা অপরদিকে ভবিষ্যতের শঙ্কা। সব মিলিয়ে এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি পরিবারগুলো। প্রিয়জনকে হারিয়ে আহাজারি করছেন পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় আবু তালেব বলেন, পরিবারটি নিতান্তই গরিব। আব্দুল হাই দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। একটি ছেলে ছিল। সেও অনেক দিন আগে মারা যায়। বাড়িতে উপার্জনক্ষম কেউ নেই। তিনজন নারী এক প্রকার নিঃস্ব হয়ে গেল বলা যায়। এই অবস্থায় সরকার ও সমাজের বিত্তবানদের অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।
অন্যদিকে একই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ফকিরহাটের নলদা মৌভোগ ইউনিয়নের নয়ন দত্ত ও উৎপল রাহা। নিহতদের স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠেছে ফকিরহাটের নলদা মৌভোগ এলাকা। নিহত নয়ন দত্তের ভাই বাসুদেব দত্ত বলেন, আমার ভাইয়ের ওপরেই নির্ভর করে আমাদের সংসার চলত। পাঁচ বছর আগে বাবা মারা যাওয়ার পরে সব কিছু নয়নই সামলাত। এ ঘটনায় আমরা তো পথে বসে গেলাম। মায়ের এখনো হুঁশ ফেরেনি। এমনিই মা অসুস্থ। কী হয় ভগবান জানেন।
নিহত উৎপল রাহার স্ত্রী জানান, পান বিক্রির স্বল্প আয়েই কোনো রকম দিন চলত আমাদের। আমার ছোট ছোট দুইটা ছেলে-মেয়ে। মেয়ের বয়স তিন আর ছেলের এক বয়স এক বছর। ওরা তো বুঝতেছে না কী হারাল। আমি এখন কীভাবে বাঁচবো বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা শেখ এসকেন্দার বলেন, পান বিক্রির ওপরেই আমাদের এলাকার অনেক মানুষ নির্ভরশীল। নিহত নয়ন ও উৎপলও এই পান ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিল। সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ায় ওদের পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেল।
নলদা মৌভোগ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান মুক্তি বলেন, নিহত ৬ জনের দুজনই এই এলাকার। পান বিক্রির আয়েই পরিবার দুটি চলত। উপার্জনক্ষম প্রধান দুজনকে হারিয়ে তাদের আয়-উপার্জনের পথ বন্ধ হয়ে গেল।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা বেগম বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা দুর্ঘটনায় নিহত তিনজন ফকিরহাটের বলে নিশ্চিত হয়েছি। আমি সবার বাড়ি পরিদর্শন করেছি। প্রতি পরিবারকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী সোমবার (২৬ জুলাই) ২০ হাজার টাকা করে প্রদান করা হবে। ভবিষ্যতেও যে কোনো প্রয়োজনে নিয়মের মধ্যে থেকে পরিবারগুলোকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।