ধুনটে ধর্ষণ মামলায় দু সহযোগী গ্রেফতার ধর্ষক মাসুদ এখনও অধরা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:১১ এএম, ৫ ডিসেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০১:০৬ পিএম, ১৩ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপালনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় দু সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
তবে টানা এক মাস আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনার মামলার প্রধান আসামি মাসুদ রানা (৩৬) ও তার সহযোগী স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হক বাবু (৪৫) এখনও রয়েছে অধরা।
আলোচিত এই ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতারকৃতরা হলো- ধর্ষক মাসুদের আত্মীয় ধুনট উপজেলার গোপালগর ইউনিয়নের দেউড়িয়া গ্রামের মৃত ইব্রাহীম হোসেনের ছেলে আঃ মান্নান (৪০) ও একই গ্রামের রিপন মিয়ার স্ত্রী সাথী খাতুন (৩৬)।
আজ শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) ভোরে ধুনট থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঢাকার হেমায়েতপুর এলাকা থেকে তাদেকে গ্রেফতার করে।
এদিকে ধর্ষণ মামলার আসামিদের সহযোগিতা করার অভিযোগে ও বাদীর সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করার অভিযোগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ধুনট থানার এসআই আহসানুল হককে গত বুধবার (২ ডিসেম্বর) পুলিশ লাইনে ক্লোজ করা হয়েছে।
জানা গেছে, ধুনট উপজেলার দেউড়িয়া গ্রামের মজিবর রহমানের ছেলে মাসুদ রানা (৩৬) একই গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে গোপালনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রীকে গত ১৬ জুলাই রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে সিএনজিযোগে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এরপর ওই মেয়েটিকে এক মাসেরও বেশি সময় একটা ঘরে আটকে রেখে ঘুমের ওষুধ খাওয়াইয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করে মাসুদ রানা। তার একাজে সহযোগিতা করেছেন গোপালনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ফজলুল হক বাবুসহ কয়েক সহযোগী।
এঘটনায় গত ১২ আগস্ট ওই ছাত্রীর মা বাদী হয়ে ধর্ষক মাসুদ রানা ও গোপালনগর ইউপি সদস্য ফজলুল হক বাবুসহ ৭ জনকে আসামি করে ধুনট থানায় মামলা দায়ের করেন।
এদিকে মামলা দায়েরের পর গত ২৪ আগষ্ট ওই স্কুল ছাত্রীকে সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনা এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় ধর্ষক মাসুদ রানা ও তার সহযোগিরা। পরে পুলিশ ওই ছাত্রীকে উদ্ধারের পর ডাক্তারি পরীক্ষায় ধর্ষণের প্রমাণ মেলে।
কিন্তু দীর্ঘদিনেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আহসানুল হক আসামীদের গ্রেফতার না করে উল্টো আসামীদেরকেই সহযোগিতা করেন এবং বাদীকে অকথ্য ভাষায় গালাগালিও করেন।
তবে এঘটনাটি জানাজানি হলে গত বুধবার বগুড়ার পুলিশ সুপারে নিদের্শে ধর্ষণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আহসানুল হক ক্লোজড করে পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে আলোচিত এই ধর্ষণ মামলাটির দায়িত্বভার গ্রহন করেন ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের দুই দিনের মধ্যেই এই মামলার দুই আসামীকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করেন।
তবে এখনও মামলার প্রধান আসামী ধর্ষক মাসুদ রানা ও সহযোগি ইউপি সদস্য ফললুল হক বাবু সহ অন্য আসামীরা পলাতক রয়েছে।
এদিকে ধর্ষক মামলা দায়ের করার পর থেকেই স্থানীয় মাতব্বররা ধর্ষিতার পরিবারকে সমাজচ্যুত করে রেখেছে।
এবিষয়ে ধর্ষিতার মা বলেন, আমার মেয়ে এখনও সুস্থ হয়নি। মানসিক দুচ্চিন্তায় রয়েছে। আমাদের কোন টাকা পয়সা নেই। তাই স্থানীয় মাতব্বররা আমাকে মামলা তুলে নিতে বিভিন্ন হুমকি ধামকি সহ আমাদের পরিবারকে সামাজচ্যুত করে রেখেছে।
এবিষয়ে গোপালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সরকার বলেন, ওই পরিবারকে সমাজচ্যুত করার বিষয়টি জানা নেই। তবে তাদেরকে সমাজচ্যুত করা হয় তাহলে স্থানীয় মাতব্বরদের সঙ্গে বসে সমাধান করে দেওয়া হবে।
এবিষয়ে ধুনট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় এজাহারভুক্ত দুই আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এছাড়া মামলার প্রধান আসামী সহ অন্য আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে ওই সমাজচ্যুত করা কলে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।