পাইকগাছায় আওয়ামীলীগ নেতাদের দখলে দেড়’শ বিঘা সরকারি জমি
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:২৫ পিএম, ১১ জুলাই,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৫:০৮ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
পাইকগাছায় শিবসার পর এবার কপোতাক্ষের চরভরাটি জমি জবর দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সহ এলাকার কতিপয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা কপোতাক্ষ পাড়ের হিতামপুর মৌজার প্রায় দেড়’শ বিঘা সরকারি খাস জমি জবর দখল করে রেখেছে। অনেকেই নতুন ভাবে যুক্ত হচ্ছেন জবর দখল প্রতিযোগিতায়।
জবর দখলকারীদের মধ্যে অনেকেই সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এবং বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও জবর দখল কাজ অব্যাহত রেখেছে এমন অভিযোগ করেছেন খোদ ভূমি অফিসের কর্মকর্তারা।
এদিকে বেদখলকৃত সরকারি সম্পত্তি সরকারের অনুকূলে আনতে সবধরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় উপজেলার গদাইপুর ও রাড়ুলী ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী কপোতাক্ষ নদের পশ্চিম পাশে রাড়ুলীর পারে হিতামপুর মৌজায় প্রায় দেড়’শ বিঘা সরকারি খাস জমি রয়েছে। বোয়ালিয়া ব্রিজ থেকে নতুন আবাসন পর্যন্ত এবং নতুন আবাসনের অপার পাশের এসব সরকারি খাস জমি দীর্ঘদিন ধরে দখলের প্রতিযোগিতা চলছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সমীরণ সাধু সহ কমপক্ষে ২০জন ব্যক্তি এসব সরকারি জায়গা অবৈধভাবে জবর দখল করে রেখেছে। যাদের কারোর কোন বৈধ কাগজপত্র নাই। ফলে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সর্বাত্বক লকডাউন নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন যখন ব্যস্ত সময় পার করছে এর মধ্যে অনেকেই এখানকার সরকারি জমি জবর দখল করছে।
গত কয়েকদিন আগে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সমীরণ সাধু কয়েক একর জায়গা বাঁধ দিয়ে জবর দখল করার কাজ শুরু করলে বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে। পরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে নিষেধ করা হলেও নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বাঁধ দেওয়ার কাজ অব্যাহত রাখলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বেদখলকৃত জমি মেপে লাল পতাকা টানানোর মধ্য দিয়ে জবর দখলকারীদের সতর্ক করে দিয়েছে।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান, কপোতাক্ষ নদের পাড়ে প্রায় দেড়’শ বিঘা মত সরকারি খাস জমি রয়েছে। সমীরণ সাধু সহ অনেকের দখলে রয়েছে এসব সরকারি জমি। সম্প্রতি লকডাউনের মধ্যে সমীরণ সাধু ও তার লোকজন ৯৫১ দাগে চরভরাটি জমি বাঁধ দিয়ে জবর দখল করার চেষ্টা করলে আমি তাদের কাজ বন্ধ করে বিষয়টি আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি। এমনকি সমীরণ সাধুর সাথে সরাসরি দেখা করে বাঁধ দেওয়ার কাজ বন্ধ রাখার কথা বলি। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি তার লোকজন নিয়ে আবারও বাঁধ দেওয়ার কাজ শুরু করলে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ভূমি অফিসের পক্ষ থেকে কার দখলে কতটুকু রয়েছে তা মেপে লাল পতাকা টানানোর মাধ্যমে সীমানা নির্ধারণ করি।
কানুনগো মোজাম্মেল হোসেন জানান, এসিল্যান্ড স্যার আমাকে বলার পর আমি সার্ভেয়ার নিয়ে ওখানকার সমস্ত জমি মেপে লাল পতাকা টানানোর পর বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করি।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা সমীরণ সাধুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে মুঠোফোনে তাকে পাওয়া যায়নি।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শাহরিয়ার হক জানান, ইতোমধ্যে আমরা সমস্ত জমি মেপে লাল পতাকা টানিয়ে দিয়েছি। জবর দখলকারী অনেক লোকের নাম পাওয়া গেছে, তারা আবার অনেকেই বৈধ বলে দাবী করেছে। বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। বর্তমানে একসনা বন্দোবস্ত বন্ধ থাকায় কাউকে হয়তো বন্দোবস্ত দেওয়া সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে সকল জমি উদ্ধার করে সরকারের অনুকূলে আনা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, নদী এবং সরকারি জমি দখলের ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসন জিরোটলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। ইতোমধ্যে অনেক সরকারি জমি ও সরকারি খাল উদ্ধার করা হয়েছে। যেখানেই জবর দখলের খবর পাওয়া যায় সাথে সাথে সেগুলো উদ্ধার সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এমনিভাবে কপোতাক্ষ চরের হিতামপুর মৌজার সরকারি খাস জমি সার্ভেয়ার দিয়ে মেপে লাল পতাকা টানানোর মধ্য দিয়ে সরকারের অনুকূলে নেওয়া হয়েছে। জবর দখলকারী যত শক্তিশালী হোক না কেনো তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানিয়েছেন।