না’গঞ্জ শহরের জামতলায় আ’লীগের প্রভাবশালীদের নামে হিন্দু সম্পত্তি দখল চেষ্টার অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:৪৫ পিএম, ২০ জুন,রবিবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:৪৪ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
নারায়ণগঞ্জের জামতলায় একটি হিন্দু পরিবারের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি দখল চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে প্রভাবশালী নিট কনসার্নের পরিচালক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর মোল্লার বিরুদ্ধে।
গতকাল শনিবার (১৯ জুন) এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারটি। ফতুল্লা মডেল থানায়ও একই অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
লিখিত অভিযোগে বাদী উত্তম দাস বলেন, গত ১৮ জুন তাদের জমি ভরাট করতে আসে একদল সন্ত্রাসী। ওই সন্ত্রাসীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক তানভীর আহমেদ টিটু (শামীম ওসমান এমপির শ্যালক) ও সাবেক এসপি মরহুম নাসিম ওসমানের ছেলে আজমেরী ওসমানের নির্দেশে জমি ভরাট করতে এসেছেন। ভুক্তভোগী পরিবার তাতে বাধা দিলে তাদের প্রাণনাশেরও হুমকি দেয় সন্ত্রাসী বাহিনী।
ভুক্তভোগী শহরের জামতলা ধোপাপট্টি এলাকার বাসিন্দা উত্তম দাস বলেন, ১৯৬২ সালে তার পিতা মৃত লাল মোহন দাস হিন্দু জমিদারদের কাছ থেকে সাড়ে ২৭ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। ওই জমির সকল কাগজপত্র তাদের কাছে রয়েছে। ১২ শতাংশ জমির উপরে তাদের ঘরবাড়ি ও পারিবারিক মন্দির রয়েছে। বাকি অংশ খালি রয়েছে। প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের পুরো সম্পত্তির মালিক তারা ছয় ভাই। তারাই এই জমির ভোগদখল করছেন। ১৯৬৮ সালে এই জমির ক্রয়সূত্রে মালিক দাবি করে জনৈক জেসমিন চৌধুরী জাল দলিল তৈরি করেন। জাল দলিল তৈরি করে জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে উত্তম দাস ও তার ভাইয়েরা জেসমিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করেন। মামলাটি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলা যুগ্ম জজ ১ম আদালতে চলমান রয়েছে। মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞাও জারি করেছেন আদালত।
উত্তম দাস আরো বলেন, ‘১৯৬৮ সালের ২৮ নভেম্বর আমার পিতা মারা যায়। আর জেসমিন চৌধুরীর জাল দলিলে ২৬ নভেম্বর তারিখে আমার বড় দুই ভাই তার কাছে পুরো সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন বলে উল্লেখ আছে। বাবার মৃত্যুর আগে তার জমি বিক্রি করার কোনো প্রশ্নই আসে না। তাছাড়া ওয়ারিশ সূত্রে পুরো জমির মালিকও তারা হতেন না। কয়েক মাস আগে প্রভাবশালী জাহাঙ্গীর মোল্লা দাবি করেন, জেসমিন চৌধুরী তার কাছে আমাদের জমি বিক্রি করে দিয়েছেন। যেই জমির মালিক জেসমিন চৌধুরী না সেই জমি জাহাঙ্গীর মোল্লার কাছে বিক্রি করার কোনো সুযোগ নেই।’
পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে দেওয়া লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী উত্তম দাস উল্লেখ করেছেন, কয়েকমাস যাবৎ লোকজন দিয়ে তাদের জমি দখলের চেষ্টা করছেন জাহাঙ্গীর মোল্লা। তাদের জমির পার্শ্ববর্তী জমি কিনে সেই জমি ভরাট করছে জাহাঙ্গীর মোল্লা। একই সাথে সীমানা খুটি ভেঙে তাদের জমিও ভরাটের চেষ্টা করছে। গত ৩ জুন বিকেলে জমি ভরাটে বাধা দিতে গেলে ৩০/৩৫টি মোটর সাইকেলযোগে আসা ৭০/৮০ জন অপরিচিত লোক এসে তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাদের মধ্যে আব্দুর রহমান নামে একজন হুমকি দিয়ে বলে, জমি ছেড়ে না দিয়ে বালু ভরাটে বাধা প্রদান করলে ঘর, দোকানপাট, মন্দির, মন্দিরের প্রতিমা ভেঙ্গে মাটিয়ে মিশিয়ে দেওয়া হবে। হুমকিদাতারা বলে, তাদের উপর তানভীর রহমান টিটু, আজমেরী ওসমান ও জাহাঙ্গীর মোল্লার নির্দেশনা রয়েছে।
ভুক্তভোগী উত্তম দাস জানান, ‘আমরা সবাই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। শনিবার (১৯ জুন) রাতে আবারও ভেকু নিয়ে জমি ভরাট করতে আসার কথাছিল। বাধা দিলে আমাদের মেরে ফেলারও হুমকি দেওয়া হয়েছে। থানা ও এসপি অফিসে অভিযোগ জানিয়েছি। তবে কতটুকু সুফল পাবো তা জানি না।’
তিনি বলেন, এর আগে তিনি হিন্দু নেতাদের কাছেও গিয়েছিলেন। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপনকেও জানিয়েছেন। তবে তারা কোনো সমাধান দিতে পারেননি। আদালত ওই জমিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন। আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকায় কেউই সেই জমিতে কোনো ধরনের কাজ করতে পারবেন না। সেখানে বালু ফেলে জমি ভরাট করতেও কেউ পারবে না।
জমি ভরাটের বিষয়টি স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত নিট কনসার্নের মালিক প্রভাবশালী জাহাঙ্গীর মোল্লা জানান, ওইখানের ৮০ শতাংশ জমির মালিক তিনি। জমিগুলো তিনি ভরাট করছেন। একই সাথে পার্শ্ববর্তী বিরোধপূর্ণ জমিও ভরাট করছেন। তিনি বলেন, ‘আমি বালু ফেলে রাখছি। এখনই দখল নিচ্ছি না। মামলা চলছে, মামলা নিষ্পত্তি হোক। আদালত পরে যার পক্ষে রায় দিবেন জমি সে পাবে।’
এই ব্যাপারে ফতুল্লা মডেল থানায়ও একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন উত্তম দাস। অভিযোগটি তদন্ত করছেন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) তরিকুল ইসলাম। যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছিল। অভিযুক্ত একজনকে আটক করা হয়েছে। এই বিষয়ে তদন্ত চলছে।