ছাত্রলীগ-যুবলীগের প্রতিহতের ঘোষণা ব্যর্থ হাটহাজারীতে মামুনুল হক
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:১২ এএম, ২৮ নভেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০৩:১০ পিএম, ২০ নভেম্বর,
বুধবার,২০২৪
হেফাজত নেতা মামুনুলকে প্রতিহত করতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের অবস্থান সব কিছু ব্যর্থ হয়ে গেল। তিনি আসলেন জয় করলেন ইসলামকে। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন নিয়ে ইসলামী দলগুলোর বিরোধিতার মধ্যেই হাটহাজারী তফসির মাহফিলে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। তার হাটহাজারী আগমনকে প্রতিরোধের ঘোষণায় কদিন ধরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে পুরো চট্টগ্রামজুড়েই। তবে শেষ পর্যন্ত ঘোষণা দিয়ে প্রতিরোধ হুঙ্কার ব্যর্থ হয়ে ঘরে ঢুকে যেতে বাধ্য হয়েছে চট্টগ্রামের ছাত্রলীগের নেতারা।
আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে আলোচনা-উত্তেজনা শেষ করে মামুনুল হক সড়কপথে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় এসে পৌঁছেছেন। মূলত কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতেই সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার পরামর্শে হেফাজত নেতারা মামুনুল হককে সড়কপথে সকাল সকাল হাটহাজারী নিয়ে আসা হয় বলে জানা গেছে।
এ দিকে বৃহস্পতিবারও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সমাবেশের পাশাপাশি ফেসবুকজুড়ে ব্যাপক প্রতিরোধের ঘোষণা এসেছিল ছাত্রলীগ নেতাদের কাছ থেকে। সম্প্রতি ভাস্কর্য নিয়ে মাওলানা মামুনুল হকের একটি বক্তব্যকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন। হাটহাজারী পার্বতী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আল আমিন সংস্থার তিনদিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যার পর মাহফিলে বক্তব্য রাখেন তিনি।
মামুনুল হক হাটহাজারীতে মাহফিলে আসার খবরে সড়ক অবরোধ করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। গতকাল শুক্রবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে চবি এক নম্বর গেইটে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে তারা। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, বিতর্কিত বক্তা মামুনুল হকের হাটহাজারীতে আগমন রুখতে সড়কে অবস্থান নিয়েছি। কোনোভাবেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তিকারীকে ছাড় দেওয়া হবে না। এসময় দেড় ঘন্টা হাটহাজারী, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু ছেলে সড়ক অবরোধ করেছিল। তাদেরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। মামুনুল হকের আগমনকে ঘিরে চট্টগ্রামে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে এ নিয়ে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। মাহফিলে মামুনুল হক সরকারবিরোধী যেন কোনো বক্তব্য না দেন সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাহফিল পরিচালনা কমিটির সাথে যোগাযোগ করে বলে দেওয়া হয়।
এদিকে ভাস্কর্য নিয়ে মামুনুল হক বক্তব্য দেওয়ার পর কঠোর সমালোচনা করছেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। বৃহস্পতিবার দুপুরের পর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন নগর ছাত্রলীগের নেতারা। সমাবেশ থেকে মামুনুল হককে প্রতিহত করার ঘোষণা দেয়া হয়। পাশাপাশি হাটহাজারীতে উপজেলা যুবলীগ-ছাত্রলীগ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করবেন বলে ইতিমধ্যে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা মনি ঘোষণা দিয়েছেন।
এদিকে মাহফিলকে কেন্দ্র করে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে হাটহাজারী পৌরসভা ও এর আশপাশের এলাকায় পুলিশের ২৫টি টিমসহ বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। চট্টগ্রাম বিমান বন্দরসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে সতর্ক অবস্থানে ছিল সিএমপির পুলিশও। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে অবস্থার নিয়ে ছিল পতেঙ্গা থানার ওসি জোবায়ের সৈয়দ। তিনি বলেন, মামুনুল হক বিমানবন্দর দিয়ে আসবেন কিনা আমরা জানি না। এরপরও যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আমরা এয়ারপোর্টে সতর্ক অবস্থানে আছি।
এ বিষয়ে হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, হাটহাজারীতে অনুষ্ঠিত মাহফিলে হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক আগমনের বিষয়টা তাদের বিষয়। তবে মাওলানা মামুনুল হকের বিষয়ে আমরা মাহফিল কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠক করেছি। হাটহাজারী মডেল থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, মাহফিলকে কেন্দ্র করে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অতিরিক্ত পুলিশসহ বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিল।
হাটহাজারী পৌরসভা সদরের পার্বতী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গত ২৫ নভেম্বর থেকে তিন দিনব্যাপী ‘তাফসীরুল কুরআন মাহফিল-২০২০’ আয়োজন করেছে ‘আল আমিন সংস্থা’। প্রতি বছর শীতে সংস্থাটি এই মাহফিলের আয়োজন করে। সংস্থার ব্যানারে হলেও আয়োজকরা হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মী ও স্থানীয় আলেমরা এই সংগঠনে রয়েছে।