দুঃশাসন ও দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশ অচল-সেলিমা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৪:৫৩ এএম, ২৮ নভেম্বর,শনিবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:১৯ পিএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
সরকারের চরম ব্যর্থতায় দুঃশাসন ও দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশ অচল হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সেলিমা রহমান।
আজ শুক্রবার (২৭ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে আবদুস সালাম হলে নব্বইয়ের ডাকসু ও সর্বদলীয় ছাত্রঐক্যের উদ্যোগে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বিএমএ’র তৎকালীন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. শামসুল হক খান মিলনের ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
সেলিমা রহমান বলেন, যখনই আওয়ামী লীগ আসে তখনই আসে দুঃশাসন এবং দুর্ভিক্ষ। আজকে আপনারা যখন দেখতে পান, দুঃশাসন ও দুর্ভিক্ষে বাংলাদেশ আজ অচল হয়ে গেছে। দুর্ভিক্ষ আমাদের দরজায় কড়া নাড়ছে। দ্রব্যমূল্য আজকে আকাশছোঁয়া, সাধারণ মানুষ আজকে খেতে পারছে না, হাজার হাজার যুবক আজকে বেকার। তারপরও তারা (সরকার) নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘নো টেস্ট নো করোনা’- এই বলে বাংলাদেশের মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে। মানুষ অসহায়ের মতো ঘুরে বেড়িয়েছে, হাসপাতালে কোনো চিকিৎসা নেই, হাসপাতালে কোনো বেড নেই, মানুষের দাফনের কোনো ব্যবস্থা নেই। মানুষ অসহায়ের মতো রাস্তায় মরে পড়েছে। করোনাকে তারা (সরকার) দুর্নীতির বাণিজ্য হিসেবে নিয়েছিল। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে শেষ করে দিয়ে আজকে বাংলাদেশের মানুষকে অসহায় করে দিয়েছে। তাই আজকে সময় এসেছে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
সভাপতির বক্তব্য বিএনপি চেয়াপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান বলেন, আমরা বলতে চাই, যে সরকার, হাসিনার সরকার, আওয়ামী লীগ সরকার, ভোট ডাকাতির সরকার, অবৈধ সরকার, মিডনাইটের সরকার। তাদের কোনো বৈধতা নেই। তাদের হটিয়ে জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এই অবৈধ সরকারকে হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে মিলনের কবরে ফুল দেন ডাকসু’র সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানসহ নেতৃবৃন্দ।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এবং কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘স্বৈরতন্ত্রের সঙ্গে গণতন্ত্র কখনও একসঙ্গে যায় না। আপনি হয় গণতন্ত্রী হবেন, না হয় স্বৈরতান্ত্রিক হবেন। বিএনপি গণতন্ত্র মানে আর আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকলে গণতন্ত্রের কথা বলে ক্ষমতায় গেলে সব সময় স্বৈরতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করে। এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির পার্থক্য। শেখ হাসিনার সঙ্গে বেগম জিয়ার পার্থক্য। বাংলাদেশে শহীদ জিয়া এবং তাঁর পরিবার গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীক আর স্বৈরতন্ত্রের প্রতীক হচ্ছে আর একটি পরিবার। সব সময় তারা স্বৈরতন্ত্রের পক্ষে ভূমিকা পালন করে। তিনি বলেন, যদি বেগম খালেদা জিয়ার কারাগারে মৃত্যু হয় ইতিহাসের এতবড় জঘন্য অপরাধ বাংলাদেশের কেউ কখনও মেনে নেবে না। আমরা এটা চোখে দেখতে পারি না, এটা ভেবে আমরা বসে থাকতে পারি না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার অর্থই হল গণতন্ত্রকে মুক্ত করা, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার অর্থই হলো একাত্তরের শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার অর্থ হলো নিজেদের সম্মানিত করা। ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সংগঠনটির সাবেক এই সভাপতি বলেন, কাজ একটাই, খুব সংক্ষেপ কাজ। ইতিহাসে বর্তমান ছাত্র নেতৃবৃন্দ তাদের নাম লেখাবে কিনা, এটা তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা যারা ছাত্রনেতা ছিলাম আমরা তখন স্বপ্ন দেখতাম পূর্বে যারা ছাত্রনেতা ছিলেন তাদের মতো করে আমরা ভূমিকা পালন করব কিনা, রাস্তায় নামবো কিনা এসব নিয়ে। পূবসূরিরা বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, বাষট্টির শিক্ষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে যে ভূমিকা পালন করেছে আমরা তেমন ভূমিকা পালন করব কিনা? দুদু বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজন্ম আপসহীন নেত্রী। তিনি যতদিন থাকবেন ইতিহাসে আপসহীন হয়ে বেঁচে থাকবেন, এই ব্যাপারে কোনো দ্বিমত কারোর মধ্যে থাকা উচিত না। তিনি আপস করে বাসায় গিয়েছেন এটা ভাবার কোনো কারণ নাই, বাসাটাও কারাগার। এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে আমরা বদলি হই না- এটাও সে রকমই। বেগম জিয়াও এক কারাগার থেকে আরেক কারাগারে রয়েছেন।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, আমরা সব সময় বলি, আন্দোলন-সংগ্রাম বৃথা যায় না। কিন্তু আমরা কি দেখতে পেলাম, মুক্তিযুদ্ধের সময় অসংখ্য মানুষ জীবন দিলেন, তাতে আমরা কী পেয়েছি? আমরা কি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ পেয়েছি? আমরা জীবন দেই ত্যাগ স্বীকার করি হামলা-মামলার শিকার হই। আমাদের জীবনটাই একেবারে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। কিন্তু মুষ্টিমেয় কিছু লোক যারা গণতন্ত্র হত্যা করে তারা দুর্বৃত্ত। রাষ্ট্রীয় সম্পদ যারা লুন্ঠন করে, তারা বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে কবরস্থ করেছে। দেশটিকে খেয়ে ফেলেছে। এদের বিতারিত করতে হবে।
ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক ছাত্রনেতা