বোদার সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে ত্রিমুখী দুর্নীতি, প্রধান শিক্ষক উধাও
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৩২ পিএম, ১৯ জুন,শনিবার,২০২১ | আপডেট: ০৬:৫১ এএম, ২৩ নভেম্বর,শনিবার,২০২৪
পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিস্তর দুর্নীতির অভিযোগ উঠায় এলাকা থেকে উধাও হয়েছে ওই শিক্ষক। এবিষয়ে বোদা থানায় জিডি করেছেন বিদ্যালয় কতৃপক্ষ। প্রধান শিক্ষক সায়েদ মঞ্জুরুল হাসান সুজা সাঁকোয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান সায়েদ জাহাঙ্গীর হাসান সবুজের ছোট ভাই হওয়া কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই কতৃপক্ষ।
প্রধান শিক্ষক সায়েদ মঞ্জুরুল হাসান সুজা এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পুরনের টাকা, সাংস্কৃতিক শিক্ষকদের সম্মানি, বিদ্যালয়ের জমি বরাদ্দের টাকা আত্মসাত করেছেন। ফলে ক্ষোভে ফুসসে এলাকাবাসী।
জানা গেছে, গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ফরম পূরণের অর্থ প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা) রবিউল ইসলাম প্রধান এবং সহকারী শিক্ষক (তথ্য ও বিজ্ঞান) আশরাফুল আলম (পুতুল) উত্তোলন করেন। উত্তোলনের তিন লক্ষ বাহান্ন হাজার আশি টাকা তারা প্রধান শিক্ষকের নিকট জমা দেন। পরবর্তীতে সহকারী প্রধান শিক্ষক জানতে পারেন ফরম পূরণের অর্থ দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ড বরাবর জমা হয় নাই। সহঃ প্রধান শিক্ষক বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে প্রধান শিক্ষক কে খুজে পায়নি। এ ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে, কর্তৃপক্ষের পরামর্শে গত ১৭ মে সহঃ প্রধান শিক্ষক আশরাফুল ইসলাম বোদা থানায় সাধারণ ডায়রী করেন। বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান ইতিপুর্বেও প্রধান শিক্ষক এভাবে ফরম পুরনের টাকা আত্নসাত করে পালিয়ে যায়, পরে সকল শিক্ষক নিজেদের টাকা দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের ফরম পুরনের ব্যবস্থা করেন। প্রধান শিক্ষক প্রভাবশালী হওয়ায় বরাবরেই থাকে আইনের উর্ধ্বে। এবারেও সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ফরম পুরনের টাকা আত্নসাতের বিষয়টি বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে আসলে, তিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কে তদন্তের নির্দেশনা দিলে, তিনি তদন্ত করে শুধু এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পুরনের টাকা আত্নসাতের বিষয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দেন।
আরও জানা যায় ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আত্নসাৎ করেছে সাংস্কৃতি চর্চা কার্যক্রমের শিক্ষকদের ৬ মাসের সম্মানী। এ ব্যপারে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক ও জেলা শিল্পকলা একাডেমির সভাপতি বরাবর অভিযোগ করেছেন আব্দুল মান্নান সরকার ও অরুন কুমার বর্মন নামের দুজন সঙ্গীত শিক্ষক।
স্থানীয়দের অভিযোগ সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে অনিয়ম দুর্নীতির শিকড় অনেক গভীরে, অনেকেই বলছেন বিদ্যালয়ের জমি বিক্রি বা ৯৯ বছরের বন্দোবস্ত দিয়ে প্রায় কোটি টাকা আত্নসাত করেছেন ওই প্রধান শিক্ষক। জমি বন্দোবস্তের এক পর্যায়ে খেলার মাঠ পর্যন্ত বিক্রি করা শুরু করেছে প্রধান শিক্ষক। এলাকায় তিনি ক্যাসিনো সম্রাট নামেই বেশী পরিচিত। সাকোয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও ইউনিয়ন যুবলীগের আহবায়ক মাহমুদুল হাসান বিদ্যালয় গেটের পাশে বিদ্যালয়ের জমি দখল করে তৈরি করেছে মার্কেট, খেলার মাঠ দখল করে করেছে গুদাম ঘর, তার বাড়ির পাশে বিদ্যালয়ের জমি দখল করে দিয়েছে তাঁর কাটা বেড়া।
এবিষয়ে মাহমুদুল হাসান বলেন, আমি বিদ্যালয়ের জমিতে মার্কেট করেছি এটা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কমিটি বুঝবে।
আরও খবর ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী নিয়োগ দেওয়ার কথা বলে ১৭ জনের নিকট থেকে কোটি টাকা ও একাধিক বিএসসি শিক্ষক কে ভুয়া নিয়োগ কমিটি দেখিয়ে নিয়োগ দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
সাকোয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একাধিক অভিযোগের বিষয়ে বোদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবুল হোসেন জানান, তদন্তে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পুরনের টাকা আত্নসাদের প্রমাণ পেয়েছি, প্রতিবেদন ও দিয়েছি, এখন বিদ্যালয়ের জমি ও ভুয়া নিয়োগের বিষয়ে তদন্ত হচ্ছে, প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র যাচাই বাছাই করে প্রতিবেদন দিব।
বোদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোলেমান আলী জানান, তদন্ত প্রতিবেদন পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।