করোনায় হোটেলে না থেকেও চিকিৎসকদের বিল ৫৭৬০০ টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৭ এএম, ২৭ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২০ | আপডেট: ০৯:২২ পিএম, ১৮ নভেম্বর,সোমবার,২০২৪
করোনার সময়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মচারীরা হোটেলে না থেকেও ভুয়া বিল ভাউচার দেখিয়ে ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা এবং হোটেলে খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ স্বাস্থ্য বিভাগে হইচই পড়ে গেছে। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন (লুবনা) এ টাকা তুলে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়। এভাবে করোনা প্রণোদনার ৩ লাখ টাকা হরিলুট হয়েছে। তবে ডা. শামীমা শিরিন এ তথ্য অস্বীকার করে বলেছেন, তিনি সঠিকভাবেই প্রণোদনার অর্থ ব্যয় করেছেন।
জানা গেছে, গত ৫ জুলাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, গত ৬ জুন থেকে ছয় চিকিৎসক, ছয় নার্স ও অন্যান্য ১২ স্টাফ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের রহমানিয়া আবাসিক হোটেলে থাকা বাবদ ৫৭ হাজার ৬০০ এবং খাওয়া বাবদ ৯৬ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া গত ১ এপ্রিল থেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৬৬ হাজার টাকা খরচের কথা বলা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কালীগঞ্জ রহমানিয়া হোটেলের বোর্ডার রেজিস্ট্রার খাতায় ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ২ জন, মে মাসে ১ জন, জুন মাসে ১৫ জন, জুলাই মাসে ১৪ জন, আগস্ট মাসে ২৯ জন অবস্থান করেছেন। কিন্তু এ সময়ে থাকা বোর্ডার রেজিস্ট্রারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনো চিকিৎসক, নার্স ও কোনো কর্মচারীর নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়া রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না।
কালীগঞ্জ রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার জসিম উদ্দিন বলেন, করোনার মধ্যে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনো চিকিৎসক, নার্স থাকেননি। রেজিস্ট্রার খাতায় যাদের নাম আছে, তারাই ছিলেন। এর বাইরে কেউ ছিলেন না। রহমানিয়া হোটেলে রান্না বা খাবার বিক্রি করা হয় না।
কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক মাঝহারুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই তিনি কোভিড ১৯-এ দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কখনও হোটেলে থাকেননি। এখনও পর্যন্ত সরকারের কোনো প্রণোদনা তিনি পাননি। তিনি কোভিড ১৯-এ দায়িত্ব পালনের সময় হাসপাতালের ডরমিটরিতে ছিলেন।
আরেক চিকিৎসক আর্জুবান নেছা বলেন, তিনিও কোভিড ১৯-এ স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত। বিভিন্ন সময়ে তিনি হোটেলে থেকেছেন। কিন্তু তারিখ বা কোনো মাসে থেকেছেন, সেটি তিনি জানাতে পারেননি এবং তিনি এখনও কোনো প্রণোদনার টাকা পাননি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোভিড ১৯-এ নিয়োজিত হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, নমুনা সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব কাজ তাদের সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সরকার প্রদত্ত কোনো প্রণোদনা তারা পাননি।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শামীমা শিরিন বলেন, হোটেলে থাকা নিয়ে রহমানিয়া হোটেলের ম্যানেজার উনি কেন এমন বলেছেন আমি জানি না।
তিনি দাবি করেন, ডাক্তাররা রোস্টার ডিউটি করেছে। ওই সময় তারা হোটেলটিতে ছিলেন। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম জানান, বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শুনলাম। এমন অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।