বেগম খালেদা জিয়ার এডভান্স ট্রিটমেন্ট দরকার - মির্জা ফখরুল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:০৮ এএম, ১৪ জুন,সোমবার,২০২১ | আপডেট: ০৮:০৩ পিএম, ২৪ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এডভান্স ট্রিটমেন্ট দরকার বলে জানিয়েছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। শনিবার এক টুইট বার্তায় তিনি এ মন্তব্য করেন। টুইটে মির্জা ফখরুল লেখেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার এডভান্স ট্রিটমেন্ট দরকার, তার অসুখগুলো নিয়ে এডভান্স সেন্টারে যাওয়া জরুরি। তাঁর হার্টের প্রবলেম এবং কিডনির সমস্যা আছে। ফান্ডামেন্টাল কিছু সমস্যা রয়েছে, যে সমস্যাগুলো উদ্বেগজনক’।
এর আগে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থার কারণে তাঁর বিশেষায়িত চিকিৎসা দরকার। ম্যাডামের মতো জটিল রোগীদের উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা বিদেশেই রয়েছে। ফলে তাঁকে বিদেশে নেয়াই যুক্তিযুক্ত।
গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর মতে, সরকার যথেষ্ট করেছে। এনাফ ইজ এনাফ। এবার জামিন দিয়ে তাঁকে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেয়া উচিত।
তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মতো একজন ভিভিআইপি রোগীর পরীক্ষা বা অপারেশনের প্রয়োজন হলে ডাক্তাররা সহজে ঝুঁকি নিতে চাইবেন না, এটিই স্বাভাবিক। ফলে বিদেশে চিকিৎসা তাঁর নিজের এমনকি সরকারের জন্যও সুবিধাজনক। কারণ এখানে তাঁর কিছু হয়ে গেলে সরকার দায় এড়াতে পারবে না।
করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর ২৮ এপ্রিল থেকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বেগম খালেদা জিয়া। শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়ায় ৩ মে থেকে ৪ জুন পর্যন্ত সিসিইউয়ে (ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট) থাকার পর এখন তাঁকে কেবিনে দেয়া হয়েছে। এখনো তিনি করোনা-পরবর্তী জটিলতায় ভুগছেন। বস্তুত কারাগারে এবং করোনায় বাসায় আটকে থাকার কারণে গত চার বছরে নিয়মিত চেকআপ না হওয়ার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার লিভার ও কিডনি আগে থেকেই দুর্বল অবস্থায় ছিল, যা করোনা-পরবর্তী জটিলতায় প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে চিকিৎসকরা মনে করেন। মেডিকেল বোর্ড তাদের পর্যালোচনায় জানায়, করোনা-পরবর্তী জটিলতার উপসর্গ হিসেবে তাঁর খাদ্যনালির বিভিন্ন জায়গায় মাইক্রোহেমারিজ (ওবিটি) হয়েছে। এ জন্য স্টুলের সঙ্গে রক্ত গেলেও সেটি দেখা যায় না। ফলে তাঁর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। চিকিৎসকরা বলেছেন, বেগম খালেদা জিয়ার শরীর হিমোগ্লোবিন ও আয়রন তৈরি করতে পারছে না। তাঁর অদৃশ্য রক্তক্ষরণ (ডিআই ব্লিডিং) হচ্ছে। এখন এটির কারণ বা উৎস খুঁজে পেতে হলে তাঁর এন্ডোসকপি করতে হবে। আর এন্ডোসকপি করতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে অজ্ঞান করতে হবে। কিন্তু এটি সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মতো একজন রোগীকে বাংলাদেশের একজন চিকিৎসকের পক্ষে করা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের মতে, ৭৫ বছরের সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর এ ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো বেশ কঠিন। তাছাড়া চিকিৎসকরা বলছেন, এ ধরনের পরীক্ষার জন্য অনেক সময় অন দ্য স্পট সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এ জন্য অত্যাধুনিক ও উন্নত কোনো কেন্দ্র নেই। ডা. এফ এম সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক সমস্যা চিহ্নিত করে ৫ দফা পরামর্শ বা সুপারিশ করেছে।
পাঁচ দফা সুপারিশে যা বলা হয়েছে :
১. ক্রনিক লিভার ডিজিজ (লিভার সিরোসিস) কোন পর্যায়ে রয়েছে তা পরীক্ষা করে খাদ্যনালির কোন জায়গা থেকে (ডিআই ব্লিডিং) হচ্ছে, সেটি বের করতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশনও লাগতে পারে।
২. কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে বেগম খালেদা জিয়ার শরীর প্রোটিন ধরে রাখতে পারছে না। প্রস্রাবের সঙ্গে অনেক প্রোটিন বের হয়ে যায়। এ জন্য তাঁর আধুনিক বা উচ্চতর চিকিৎসার প্রয়োজন রয়েছে। কারণ ক্রনিক লিভার ডিজিজ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে।
৩. হৃদরোগের জটিলতার কারণে যেকোনো সময় তাঁর হৃদরোগের বেদনায় বিশেষ একটি চেম্বার বা অংশে মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। তাঁর হার্টের স্পন্দন মাঝেমধ্যেই অনিয়মিত (ইরেগুলার হার্টবিট) হয়ে পড়ে এবং এটি যেকোনো সময় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে। চিকিৎসকদলের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, হার্টের জটিলতার সূত্র ধরে বেগম খালেদা জিয়ার এনজিওগ্রাম করা, এমনকি তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে রিং পরানোর প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশের চিকিৎসকদের অনেকেই সাবেক একজন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি নিতে চাইবেন না।
৪. রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিসের কারণে বেগম খালেদা জিয়ার বিভিন্ন জয়েন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার কারণে অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারেন না। এটা ক্রনিক লিভার ডিজিজ ও ক্রনিক কিডনি ডিজিজের কারণে। এই রোগের চিকিৎসা একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে চিকিৎসকরা বলেছেন, এটির চিকিৎসা বিশ্বের অত্যন্ত উন্নত ও আধুনিকতম হাসপাতালেই সম্ভব।