মন্থর গতিতে চলছে ডিএনডি প্রজেক্ট : চরম ভোগান্তিতে ২২ লক্ষাধিক মানুষ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০৯ পিএম, ৯ জুন,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০৪:০৮ এএম, ১৯ সেপ্টেম্বর,বৃহস্পতিবার,২০২৪
বর্ষা মৌসুম ঘনিয়ে আসার আগেই জলাবদ্ধতার আতঙ্কে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) প্রকল্পের ডিএনডির ২২ লক্ষাধিক মানুষ। স্থায়ীভাবে ডিএনডির জলাবদ্ধতা নিরসন ও পানি নিষ্কাশনে প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও মন্থর গতিতে চলছে ডিএনডি প্রজেক্টের কার্যক্রম।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৫ ডিসেম্বর এ প্রকল্পের কাজ শুরু করে সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্রিগেডের অধীনস্থ ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং কন্সট্রাকশন ব্যাটালিয়ন। এর আগে, প্রথম ধাপে ২০১৬ সালে একনেকের সভায় ডিএনডি প্রকল্পের জন্য ৫৫৮ কোটি টাকার এই মেগা প্রকল্প পাস হয়। পরবর্তীতে ডিএনডি এলাকায় নিষ্কাশন ব্যবস্থার উন্নয়ন (দ্বিতীয় পর্যায়) (প্রথম সংশোধনী)’তে বরাদ্দ বাড়িয়ে প্রায় ১৩০০ কোটি টাকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
সূত্র মতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৩৫০ কোটি ৬১ লক্ষ টাকা ব্যয়ের কার্যক্রম পরিকল্পনা করা হলেও ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রকল্পের কর্মপরিকল্পনা থাকলেও অর্থ সংকটে অধিকাংশ চলমান কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কার্যক্রম চলাকালীন প্রায় সারে ৩ বছরে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি ৫০.৬৫ শতাংশ। কিন্তু আর্থিক অগ্রগতি মাত্র ৪১.৫৫ শতাংশ।
প্রকল্পে সম্পাদিত ১০ শতাংশ কাজের বিল যার অর্থমূল্য ১১৮কোটি ২৯ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। প্রকল্পের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদারগণ বিল না পেয়ে তাদের কার্যক্রম স্থগিত করে রেখেছে।
এছাড়াও প্রকল্পের অর্থ বরাদ্ধ না পাওয়ায় প্রকল্পের বিদ্যমান উপযোগসমূহ স্থানান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। এর ধারাবাহিকতায় প্রকল্পের খাল পুনঃখননসহ আরসিসি ব্রীজ, কালভার্ট ও ক্রস ড্রেন এর নির্মাণ কাজ ব্যহত হচ্ছে। এদিকে এ প্রকল্পের আওতাধীন এলাকায় অবৈধভাবে গড়ে উঠা ৩৮ টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি।
একের পর এক বর্ষা মৌসুম আসে যায় প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হলেও ডিএনডিবাসীর জলাবদ্ধতার দুর্ভোগের সুরাহা হয়নি। প্রকল্পের কার্যক্রম প্রক্রিয়া ধীর হওয়ায় প্রকল্পের নির্দিষ্ট মেয়াদে এই প্রকল্পের কার্যক্রম সম্পন্ন নিয়ে সংশয়ে ডিএনডিবাসী।
বর্ষা শুরুর আগেই গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে ডিএনডির অভ্যন্তরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
সরেজমিনে দেখা যায়, ডিএনডি প্রকল্পের আওতাধীন অধিকাংশ খালের বেশির ভাগ অংশই দখল ও ভরাট হয়ে আছে। বিশেষ করে শিবু মার্কেট এলাকায় বাজারের পয়ঃনিস্কাশন বর্জ্য ও পলিথিন ফেলে পুরো খালটি ঢেকে ফেলা হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, সময়মতো খালের ময়লা-আর্বজনা পরিষ্কার না করায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে রাস্তাঘাট, বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যায়। বছরের পর বছর এমন অবস্থা চললেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ কার্যক্রম না থাকায় ডিএনডিবাসীর দূর্ভোগের সুরাহা নেই ।
তবে ভোগান্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন ও জলাবদ্ধতা দূর্ভোগ লাঘবে আশার আলো দেখিয়েছেন ডিএনডি প্রকল্প বাস্তবায়নে কর্মরত সেনা কর্মকর্তারা।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, অর্থ সংকট থাকলেও জনদূর্ভোগ লাঘবে নিরলস কাজ চলছে। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য প্রস্তত রয়েছে ২৯ টি সেচ পাস্প। প্রস্তত রয়েছে পাম্প হাউজ। প্রয়োজনে তা চালানো হবে।
চলমান প্রকল্পে যে দূর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে তা সাময়িক। বিগত বছরের চেয়ে এবার জলাবদ্ধতার পরিমাণ কম। আর এ সময়ে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও তার স্থায়ীত্ব খুবই কম সময়ের জন্য।
এ অবস্থায় প্রকল্প বাস্তবায়নের বৃহত্তর স্বার্থে সকলকে ধৈর্য ধরতে হবে। জনসচেতন হতে হবে। যেখানে সেখানে বর্জ্য, পলিথিন ফেলা যাবেনা, পানি নিষ্কাশন খালে প্রতিবন্ধকতা তৈরী করা যাবেনা।