শায়েস্তাগঞ্জ সুতাং শাহজীবাজার রাস্তার বেহাল দশা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ২ জুন,
বুধবার,২০২১ | আপডেট: ০২:০৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর,রবিবার,২০২৪
শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার অন্যতম সুতাং শাহজী বাজার। এই বাজারটিতে সদর উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী মাধবপুর উপজেলা, চুনারুঘাট উপজেলার অধিকাংশ জনগণ এই বাজারে আসেন তাদের পণ্য নিয়ে। কেউ বিক্রি করতে কেউ বা আসেন ক্রয় করতে। বাজারটিতে সপ্তাহে প্রতি রববার ও বুধবার দুইদিন হাট বসে। বাঁশ বিক্রির জন্য এই বাজারটি হবিগঞ্জ জেলার সর্ববৃহৎ বাজার বলেই বিবেচ্য।
এছাড়াও সুতাং নদীর কূল ঘেঁষে বাজারটি স্থাপিত হওয়ার কারণে নদীপথে সদর উপজেলাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজন এই বাজারে আসেন কেনাবেচার জন্য। বিভিন্ন রকম কেনাবেচার জন্য বিশেষ করে ধান বিক্রির জন্য এই বাজারেই মানুষজন আসেন অথচ এই বাজারের এখন যে বেহাল দশা যেন দেখার কেউ নেই।
বিগত প্রায় দুই বছর আগে বাজার দখলমুক্ত করতে সরকারি উদ্যোগে অনেকগুলো দোকানঘর ভাঙচুর করা হয়। উচ্ছেদের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও ভাংচুরের জিনিসগুলো রাখার কারণে, ক্রেতা সাধারণ তাদের পণ্য ক্রয় এবং বিক্রিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। প্রশাসন থেকে বা স্থানীয় ভাবে কেউ ভাঙচুর করা জিনিসগুলো সরিয়ে ফেলা বা নির্দিষ্ট স্থানে রাখার জন্য কেউ নেই বলেই মনে হচ্ছে।
এদিকে সুতাং বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে সুতাং বাজারের শত বছর পুরনো বটবৃক্ষ টি ভেঙে পড়লে বিগত চার পাঁচ বছর ধরে সেই গাছটি এখনো বাজারের উপর হেলেই আছে। এতে করে যেমন ব্যবসায়ীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তেমনি মসজিদে আসা মুসল্লীদের ও আসা যাওয়া করতে সমস্যা হয়।
অন্যদিকে, অল্প বৃষ্টিতেই সুতাং বাজারের রাস্তা ঘাট কর্দমাক্ত হয়ে যায়, ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই, নেই চলার মতো কোনো পরিবেশ। এই বাজারে সুতাং নদী ঘেঁষে মাঠে প্রতি ঈদুল আযহাতে বসে কোরবানির গরু ছাগলের হাট। বাজারের ইজারা বেশি থাকার কারণে বিগত কয়েকবছর যাবত ব্যবসায়ীরা ক্ষতি দিয়েই যাচ্ছেন। অন্যদিকে যারা গরু কেনার জন্য আসেন অতিরিক্ত চার্জের কারণে তারা এ বাজারে গরু কিনতে বিমুখী হয়ে পড়েন।
সুতাং বাজারের পাশেই কামার এবং কুমারের একটি এলাকা আছে, যেখানে তারা তাদের জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। স্থানীয় তহসিল তাদের খাস জায়গায় বাউন্ডারি নির্মাণ করে অফিস নির্মাণ করার ফলে এখানে আর কামার কুমাররা বসতে পারেন না। স্থানীয় তহসিলের নতুন ভবনের কাজ শেষ হলে ও নানা টালবাহানায় এখন পর্যন্ত উদ্বোধন করা হয়নি।
কামার-কুমার বাজারের পাশেই তহসিল অফিস নির্মাণ করা হলে ও এখনো বাজারের ওমেন্স কর্নারকেই অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে এখনো ব্যবহার করা হচ্ছে। তহসিল অফিসের নির্মাণাধীন ভবনের চারপাশে বাউন্ডারি হওয়ার কারণে এই বাজারটির রাস্তাটি অনেকাংশেই সংকোচিত করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সম্প্রতি সুতাং ব্রিজটি নতুন করে নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বাইপাস রাস্তা নির্মাণে এমন নাজুক পরিস্থিতি কোনরকম যন্ত্রচালিত অথবা ইঞ্জিন চালিত যান চলাচল করতে পারছে না, নিয়মিত বৃষ্টি হলে সুতাং নদী অল্প দিনেই পানিতে ভরে যাবে এবং সেই পানির গতিবেগের কারণে এই বাইপাস বাঁধ থাকবেনা। তখন দুর্ভোগ আরও বেড়ে যাবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা জানলে হয়তো বা বিষয়টি সহজ হবে সাধারণ মানুষজনের জন্য।
সুতাং বাজার ব্যবসায়ী সমিতির আহ্বায়ক মো. নাছির উল্লাহর জানান, আমরা আমাদের মতো করে চেষ্টা করছি কিন্তু এর রাজস্ব এত বেশি নির্ধারণ করা হয় সরকার কর্তৃক, যে কারণে ক্রমাগতভাবে ক্রেতাশূণ্য হচ্ছে এবং অনেক মানুষই বাজারে আসতে চাচ্ছেনা। রাজস্ব টি আরও কমালে হয়তোবা মানুষজন বা পাইকারগণ দূর থেকে এসে মালামাল ক্রয় করতে আগ্রহ প্রকাশ করবেন।
এক্ষেত্রে সরকার এই বাজারের উপরে নির্ধারিত কর বা রাজস্ব কমানোর জন্য অনেকেরই দাবি এর সাথে আমাদেরও দাবি। এছাড়া ইজারাদার বেশি মূল্যে বাজার ডাক আনার কারণে, ক্রেতা বিক্রেতাদের উপরে চাপ পড়ে। পাশাপাশি বাজার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার জন্য যারা কাজ করে, তাদেরকে বাজারে পণ্য বিক্রয়ের জন্য যারা আসেন তাদের উপর থেকে তারা মালামাল গ্রহণ করেন। যেটি নিয়মবহির্ভূত।
এছাড়াও বাজারে পানি নিষ্কাশনের কোন ব্যবস্থা নাই বললেই চলে। অল্প বৃষ্টি হলেই বাজারটি পানিতে তলিয়ে যায়। এবং ভাঙাচোরা টিনশেড গুলো সরকারকর্তৃক যদি সুনির্দিষ্ট ভাবে ঠিক করে দেয়া হয় বাজার ব্যবস্থাপনা যদি আর একটু উন্নতি করা হয় তাহলে এই বাজারটি তার আগের জায়গায় ফিরে যাবে সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে বলে মত স্থানীয় সচেতন মহলের।
এ বিষয়ে নুরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মুখলিছ মিয়া জানান, সম্প্রতি জেলা প্রশাসক সুতাং বাজার পরিদর্শন করেছেন। তিনি এসে সরকারী জমি উচ্ছেদের স্থান থেকে অতি দ্রুত আবর্জনা সরানোর নির্দেশ দিয়েছেন এবং মসজিদের পাশে কাঁচামালের শেডের উপর গাছ সরানোর জন্য আমি বললে জেলা প্রশাসক এই বিষয়ে ও যথাযথ ব্যবস্থা নিবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।