সোনার খাচায় বন্ধী যখন স্বাধীনতা
প্রকাশ: ০৫:৪৪ এএম, ৯ নভেম্বর,সোমবার,২০২০ | আপডেট: ০৭:০৭ এএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
“হক কথা” সমাজ থেকে উঠে গেছে, এখন মানুষ আর “হক কথা” অর্থাৎ ন্যায্য কথা বা দোষীকে দোষী এবং নির্দোষকে নির্দোষ বলার মানসিকতা হারিয়ে ফেলেছে। ফলে “সত্য” সমাজ থেকে “বিদায়” হওয়ার পর প্রভাবশালীদের দ্বারা ভিকটিম হচ্ছে সমাজের নিরীহ, নিপীড়িত মানুষগুলি এবং প্রভাবশালীদের ভয়ে ভিকটিমদের পক্ষে সাধারণ মানুষ এখন আর কথা বলে না। ঘটনায় প্রতক্ষ্য স্বাক্ষী থাকলেও, স্বাক্ষীরা স্বাক্ষ্য দিতে আসে না, কারণ রাষ্ট্র তাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ। এর পিছনের কারণ আরো জঘন্য। কারণ টোকাইদের প্রভাবশালী করার সূযোগ করে দিচ্ছে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় সন্ত্রাসীদের নিরাপত্তার বিধান করছে। রাষ্ট্র আইন সরকারী দালালদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে না, আইন প্রয়োগ হয় শুধু বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। রাষ্ট্রীয় বাহিনী কাউকে কখন ধরে নিয়ে যায় তা কেহ বলতে পারে না। হত্যা করে বলবে যে, ক্রস ফায়ারে মৃত্যুবরণ করেছে। মিডিয়া প্রকাশ করলে দেশবাসী রাষ্ট্র কর্তৃক সংগঠিত অপরাধগুলি জনাতে পারে, নতুবা নয়।
দেশের স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রধানরা যখন জনস্বার্থ বিরোধী কথা বলেন তখন তাদের প্রতি জনগণের করুনা করা ছাড়া শ্রদ্ধাবোধ জাগে না। কারণ তাদের (সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান) অপকর্ম ডাকা দেয়ার জন্য মিথ্যার আশ্রয় গ্রহণ করে বিধায় জনগণের শ্রদ্ধাবোধ উঠে গেছে। জনগণকে ভোট কেন্দ্রে নিতে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন ব্যর্থ হচ্ছে, তারপরও গালভরা মিথ্যা বুলির ঝুলি বন্ধ হচ্ছে না।
যখন দেশ ও জাতির ভাগ্য চাটুকার বেষ্টিত প্রভাবশালীদের হাতে বন্ধী তখন প্রাকৃতিক নিয়মে “হক কথা” বলার জন্য কাউকে না কাউকে দাড়াতে হয়। স্বাধীনতার পর দেশে যখন গণতন্ত্র হরন হয়েছে তখন মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ ভাষানী “হক কথা” নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে ছিলেন। মাওলানা ভাসানীর “হক কথা” প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে ১৯২০ খিষ্টাব্দের জুনের দিকে বিট্রিশ বিরোধী বিপ্লবী দল “অনুশীলন সমিতির” প্রভাবশালী নেতা পূলিন বিহারী দাসের প্রতিষ্ঠিত “ভারত সেবক সংঘ” এর মূখপাত্র হিসেবে “হক কথা” নামে একটা স্বল্পকালস্থায়ী পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছিল, যার সম্পাদক ছিলেন নালিনী কিশোর গুহ। গান্ধীজী এবং তার অনুসারীদের প্রতি রিরূপ না হয়েও অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কার্যকারিতা এবং ভুলক্রটি তুলে ধরে “হক কথায়” বিভিন্ন সমালোচনামূলক নিবন্ধে প্রকাশিত হয়েছিল। পত্রিকাটিতে দেশাত্ববোধের ভিত্তিতে হিন্দু-মুসলমান মিলনের আহবান জানানো হয়ে ছিল বটে, কিন্তু উচ্চ বর্ণে হিন্দুদের সাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে বাস্তবায়িত হয় নাই।
হকের পথ অর্থাৎ সত্যের পথে মানুষকে আসতে হবে, নতুবা দূর্দশা থেকে সাধারণ মানুষের মুক্তি পাওয়ার সম্ভবনা নাই। সরকারী প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিনা ঘুষে কোন সেবা পাওয়া যায় না। সরকারী কর্মকর্তা সরকার দলীয় পছন্দের লোকদের অপকর্মের বিরুদ্ধে কোন প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। ফলে অনাচার, অবিচার, খুন, ধর্ষণ, গণধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না। এর মূল কারণ সমাজ থেকে “হক কথা” উঠে গেছে।
পবিত্র কোরআন শরীফে আল্লাহপাক বলেছেন যে, “মানুষ অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ, কিন্তু উহারা নয়, যাহারা ঈমান আনে ও হক পথে থাকে এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় ও ধৈর্য্যাের উপদেশ দেয়।” হক পথে থাকা এবং পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয়া সৃষ্টিকর্তার একটি নির্দেশ। তিনি বলেছেন যে, হক পথে যারা থাকবে না, সৎকর্মের পরামর্শ দিবে না তারাই ক্ষতিগ্রস্থ। পৃথিবী বা সমাজের অধিকাংশ মানুষই হক-পথে না থাকার জন্য সমাজে আজ এতো বির্পজয়।
মানুষ তাদের ভোটাধিকার হারিয়েছে, হারিয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকার, হারিয়েছে সাংবিধানিক অধিকার, বঞ্চিত হচ্ছে মৌলিক অধিকার থেকে, বঞ্চিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় সেবা থেকে। কোথাও কোথাও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সন্ত্রাসীদের দোসর হিসাবে কাজ করছে। সামজের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা যদি সরকারী দলের হয় তবে তাদের দ্বারা সংগঠিত যে কোন অপরাধ আইন আমলে আসে না (মিডিয়াতে প্রকাশিত কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, মূখ রক্ষার জন্য সরকার যা করে থাকে)। সরকারী সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক বিরোধী দলের প্রতি আক্রমন হলে পুলিশ বলে যে, জানি না, শুনি নাই। অথচ পুলিশকে ম্যানেজ করেই সরকারী দলভুক্ত সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। পত্রিকান্তরে ধর্ষণ বা গণধর্ষণের যত ঘটনা ঘটছে তা ঘটছে সরকারী দলের লোকজন দ্বারা এবং সেটি সংগঠিত হচ্ছে রাষ্ট্রীয় আশ্রয় প্রশয়ে। কারণ রাষ্ট্র যন্ত্র যখন হক পথে থাকে না, হক কথা তাদের মূখ দিয়ে প্রকাশ হয় না, বরং প্রকাশ পায় শুধু চামচামি ও তোষামোদী।
পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম সূরার পথম লাইনে বলা হয়েছে যে, “সমস্ত প্রশংসার মালিক আল্লাহ (সৃষ্টি কর্তা)।” অথচ যার কর্ম যতই খারাপ ও নিন্দনীয় হউক না কেন, যদি তার শক্তি থাকে তবে আমাদের সমাজ সে খারাপ বা নিন্দনীয় কাজের সমালোচনা না করে প্রশংসায় পঞ্চমূখ হয়ে যায়, ফলে খারাপ লোকটি আরো নিন্দনীয় কাজের দিকে আরো অধিকতর অগ্রসর হতে থাকে। এ ভাবেই নিন্দনীয় লোকেরা সামাজে প্রভাব প্র??