প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক আর নেই
ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৭:৪৩ পিএম, ১৬ নভেম্বর,মঙ্গলবার,২০২১ | আপডেট: ০২:৫৫ পিএম, ২২ নভেম্বর,শুক্রবার,২০২৪
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
গতকাল সোমবার (১৫ নভেম্বর) রাত নয়টায় রাজশাহী শহরে নিজ বাসভবনে তাঁর মৃত্যু হয়।
হাসান আজিজুল হক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি লেখালেখি করে গেছেন। তিনি একাধারে গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধ লিখেছেন। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। এই কথাসাহিত্যিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
৮২ বছর বয়সী হাসান আজিজুল হক বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। গত ২১ আগস্ট এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) দুই সপ্তাহের বেশি সময় চিকিৎসা নেন তিনি। কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর ৯ সেপ্টেম্বর তাঁকে রাজশাহীতে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
গত ১৬ আগস্ট হাসান আজিজুল হকের ছেলে ইমতিয়াজ হাসানের একটি ফেসবুক পোস্টে তাঁর বাবার অসুস্থতার কথা প্রথম জানা যায়। সে সময় পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছিল, হাসান আজিজুল হক অসুস্থ হয়ে প্রায় এক মাস বাসায় ছিলেন। করোনার কারণে বাসায় রেখেই চলছিল তাঁর চিকিৎসা।
বার্ধক্যজনিত সমস্যা ছাড়াও আগে থেকেই তাঁর হার্টে সমস্যা, ডায়াবেটিস ছিল। তাঁর শরীরে লবণের ঘাটতিও ছিল। করোনার কারণে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শমতো বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল। তিনি একবার পড়ে গিয়ে কোমরে ব্যথা পেয়েছিলেন। তিনি ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলেন। সেই পরিস্থিতিতে তাঁকে ঢাকায় আনা হয়েছিল।
আজ বাদ জোহর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে জানাজা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
হাসান আজিজুল হক ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার যবগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোহাম্মদ দোয়া বখশ্ ও মাতা জোহরা খাতুন। জীবনের অধিকাংশ সময় হাসান আজিজুল হক রাজশাহীতে কাটিয়েছেন।
হাসান আজিজুল হক ১৯৫৪ সালে যবগ্রাম মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ১৯৫৬ সালে খুলনার শহরের অদূরে দৌলতপুরের ব্রজলাল কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। প্রথম যৌবনেই ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। রাজনীতি করার কারণেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছিল তাঁকে। ১৯৫৮ সালে রাজশাহী সরকারি কলেজ থেকে দর্শন-এ সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
পিএইচডি করতে অস্ট্রেলিয়া গিয়েছিলেন হাসান আজিজুল হক। কিন্তু বিদেশের পরিবেশ ভালো না লাগায় ডিগ্রি শেষ না করেই দেশে ফিরে আসেন তিনি।
হাসান আজিজুল হক রাজশাহী কলেজে পড়ার সময় ১৯৬০ সালে সিকান্দার আবু জাফর সম্পাদিত ‘সমকাল’ পত্রিকায় ‘শকুন’ শিরোনামে তাঁর একটি গল্প প্রকাশ হয়। এই গল্পের মাধ্যমেই সাহিত্যিক মহলের নজরে আসেন তিনি।
১৯৭৩ সালে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৪ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে ৩১ বছর অধ্যাপনা করেন। এর পর থেকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে নগরের চৌদ্দপায় আবাসিক এলাকায় বসবাস করতেন।
হাসান আজিজুল হকের প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য’–এর প্রথম গল্প ‘শকুন’। প্রায় অর্ধশতক ধরে হাসান আজিজুল হক লিখেছেন। তাঁর লেখা ছোটগল্প ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’ ব্যাপকভাবে পাঠক সমাদৃত। ‘আগুনপাখি’ নামে হাসান আজিজুল হকের একটি উপন্যাস প্রকাশিত হয় ২০০৬ সালে। উপন্যাসটি প্রথম আলো বর্ষসেরা বইয়ের স্বীকৃতি পায়। এ উপন্যাসের জন্য তিনি ২০০৮ সালে কলকাতা থেকে আনন্দ সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’ ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়।
হাসান আজিজুল হকের লেখা গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘তৃষ্ণা’, ‘উত্তরবসন্তে’, ‘বিমর্ষ রাত্রি, প্রথম প্রহর’, ‘পরবাসী’, ‘আমৃত্যু’, ‘আজীবন’, ‘জীবন ঘষে আগুন’, ‘খাঁচা’, ‘ভূষণের একদিন’, ‘ফেরা’, ‘মন তার শঙ্খিনী’, ‘মাটির তলার মাটি’, ‘শোণিত সেতু’, ‘ঘরগেরস্থি’, ‘সরল হিংসা’, ‘খনন’, ‘সমুখে শান্তির পারাবার’, ‘অচিন পাখি’, ‘মা-মেয়ের সংসার’, ‘বিধবাদের কথা’, ‘সারা দুপুর’ ও ‘কেউ আসেনি’।
সাহিত্যে অবদানের জন্য হাসান আজিজুল হক ১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পান। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করে। ২০১৯ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয়।